চ্যাম্পিয়ন রংপুরকে বিদায় করে ফাইনালে ঢাকা
রংপুর ১৯.৪ ওভারে ১৪২ (বোপারা ৪৯, মিঠুন ৩৮, নাদিফ ২৭; রুবেল ৪/২৩, অনীক ২/২১, রাসেল ২/৩১)
ঢাকা ডায়নামাইটস ১৬.৪ ওভারে ১৪৭/৫ (রাসেল ৪০*, রনি ৩৫; মাশরাফি ২/৩২)
ফলঃ ঢাকা ৫ উইকেটে জয়ী
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনোমতে উঠেছিল শেষ চারে। এলিমিনেটরে চিটাগং ভাইকিংসকে হারিয়ে পেল আরেকটি সুযোগ। সেই জয়টাই যেন জাগিয়ে তুলল ঢাকা ডায়নামাইটসকে, ৪ উইকেটে রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে উঠে গেল ফাইনালে। আর গত বারের চ্যাম্পিয়ন রংপুর বিদায় নিল পর পর দুই ম্যাচ হেরে।
অ্যালেক্স হেলস ও এবি ডি ভিলিয়ার্স চলে যাওয়ার পরেই খর্বশক্তির হয়ে পড়েছিল রংপুর। ক্রিস গেইল পুরো টুর্নামেন্টেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজলেন, রাইলি রুশোও আর পারলেন না। রংপুর তাই ১৪২ রানের বেশি করতে পারল না। সেই রান তাড়া করে রনি তালুকদার- সুনীল নারাইনরা এমনই শুরু এনে দিলেন, নিয়মিত উইকেট হারানোর পরেও ঢাকার রান টপকে যেতে কষ্ট হলো না। শেষে আন্দ্রে রাসেল ঝড়ে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যটা হয়ে গেল মামুলি।
১৪২ রান তাড়া করে প্রথম ওভারেই অবশ্য উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ঢাকা, মাশরাফির প্রথম ওভারেই ডিপ মিড-উইকেটে ক্যাচ তুলে দিলেন থারাঙ্গা। তবে দ্বিতীয় ওভারেই ফরহাদ রেজাকে পর পর তিনটি চার মেরে ‘মোমেন্টাম’ নিয়ে নিলেন নারাইন। পরের ওভারে মাশরাফিকে দুইটি চার মারলেন রনি। নারাইন অবশ্য এর পরের ওভারে অপুর বলে ১৪ রান করে আউট, তবে ঢাকা ৪ ওভারে তুলে ফেলেছ ৪১ রান।
সেই রানে খুব একটা ভাটা পড়তে দিলেন না সাকিব ও রনি। এর মধ্যে একটা দারুণ সুযোগ পেয়েছিল রংপুর, তবে নাহিদুলের বলে ২৬ রানে রনির ক্যাচ ফেলে দেন নাদিফ। পরের ওভারে সাকিব হাওয়েলের বলে মারলেন চার-ছয়, কিন্তু এর পরেই বাজে একটা শটে সাকিব বোল্ড হয়ে গেলেন ২৩ রানে। পোলার্ড অপুর বলে চার-ছয় মারলেন, তবে মাশরাফির বলে খোঁচা দিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে। ওই ওভারেই সোহানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রনি আউট ৩৭ রানে। ৯৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলল ঢাকা। ২ রানে জীবন পেলেন নুরুল হাসান, অপুর বলে মিড উইকেটে তাঁর ক্যাচ ছেড়ে দিলেন মাশরাফি।
তবে রাসেল ঠিক করলেন, পালটা আক্রমণই করবেন। মাশরাফি ও শফিউলের বলে দুই ছয়ে ম্যাচ নিয়ে যে একটু অনিশ্চয়তা ছিল, শেষ করে দিয়েছেন তাও। অপুকে পর পর তিন ছয়ে ঢাকাকে জিতিয়ে দিলেন ২০ বল বাকি থাকতেই। ১৯ বলে ৪০ রানে অপরাজিত থেকেই শেষ করলেন রাসেল।
নাদিফ চৌধুরীকে শুরুতে নামানোর ফাটকা কাজে লেগে গেল দারুণভাবে। চতুর্থ ওভারে নাদিফ পর পর তিন বলে মারলেন তিন ছয়, দুইটি আবার ডাউন দ্য উইকেটে। এক সময় যে অপার সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন, প্রতিটা শটেই তা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কেন পূরণ করতে পারেননি, সেটাও বুঝিয়ে দিলেন শেষ বলে ছয় মারতে গিয়ে। এবার পোলার্ডের বলে ক্যাচ দিলেন ডিপ মিড উইকেটে।
তার আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে নাদিফকে গেইলের সঙ্গে নামিয়ে দিয়েছিল রংপুর। ১২ বলে ২৭ রান করে তাঁর কাজটা অবশ্য করে গিয়েছিলেন নাদিফ। এরপর ক্রিস গেইলেরই সেই ব্যাটনটা নেওয়ার কথা। মাত্রই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন গেইল, এক ওভারে পর পর দুই ছয়ে ঘুম ভাঙার আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই ঘুম আর ভাঙল না, রুবেলের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে। ১৩ বলে ১৫ রানের ইনিংসে শেষ হলো গেইলের ভুলে যাওয়ার টুর্নামেন্ট। তবে রংপুরকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা এর পরেই দিলেন রুবেল, পুল করতে গিয়ে প্রথম বলেই ক্যাচ দিলেন টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি রান করা রাইলি রুশো। তিন ৪২ রানে শুন্য উইকেট থেকে দেখতে দেখতে তিন বলে তিন উইকেট নেই রংপুরের।
রবি বোপারা আর মোহাম্মদ মিঠুন মিলে এরপর হাল ধরলেন। মিঠুন শুরুতে সতর্ক হলেও অনীকের বলে চার মেরে ভাঙলেন খোলস। এরপর সাকিবের বলে পর পর দুই ছয়ে ২৪ বলেই পৌঁছে গেলেন ৩৫ রানে। ওদিকে বোপারার সঙ্গে জুটিও হয়ে গেছে ৬৪ রানের। কিন্তু অনীকের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে মিঠুন ২৭ বলে ৩৭ রানে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে, আবার পথ হারাল রংপুর।
সাকিবের বলে ৩ রানে এলবিডব্লু বেনি হাওয়েল, মাশরাফির ওপরে উঠে আসাটাও কাজে লাগল না। আউট হয়ে গেলেন কোনো রান না করেই। নাহিদুল ৪ রান করে রুবেলের বলে আউট, শফিউলও ফিরলেন শুন্য রানে। শেষ ওভারে এসে বোপারা একটু চড়া হলেন। রুবেলের প্রথম বলে ছয়ের পর দুই বলে মারলেন দুই চার। কিন্তু চতুর্থ বলটা ছয় মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিলেন পোলার্ডকে। দুই বল বাকি থাকতে ১৪২ রানে অলআউট হয়ে গেল রংপুর।