• বিপিএল ২০১৯
  • " />

     

    ভারেও কাটতে পারছেন না গেইল-পোলার্ড

    ভারেও কাটতে পারছেন না গেইল-পোলার্ড    

    ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নিজের দলে কাকে রাখতে চান? কোনো দলের মালিককে যদি নামের তালিকা করতে বলা হতো, একটা সময় প্রথম তিনজনের মাঝেই হয়ত আসতো তাঁর নাম। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে একটা সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। তাকে দলে ভেড়াতে দলগুলোও খরচ করতে রাজি ছিল কোটি কোটি টাকা। কিন্তু গেইলের সেই 'সুদিন' আর নেই। আইপিএলে আলো ছড়ালেও গত কয়েকটি টি-টোয়েন্টি লিগে গেইল ছিলেন ‘ফ্লপ’। নিজের নামের পাশে সুবিচার করতে পারেননি গতকাল শেষ হওয়ার বিপিএলের ষষ্ঠ আসরেও। গতবার যেখানে ফাইনালেই করেছিলেন ১৪৬ রান, এবার পুরো টুর্নামেন্ট মিলিয়ে রংপুর রাইডার্সের হয়ে গেইল করেছেন মাত্র ২০৩ রান! গেইলের মতো পরিণতি তাঁর স্বদেশী কাইরন পোলার্ডেরও, ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে পোলার্ডের রান ২২২, উইকেটে পেয়েছেন মাত্র একটি।

    একটা সময় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার জন্য জাতীয় দল থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন গেইল, পোলার্ড। এতে অবশ্য তাদের লাভই হয়েছিল। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অনায়াসেই অংশ নিয়েছেন সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। তাদের দলে ভেড়ানোর জন্য বড় অংকের টাকা দিতেও কার্পণ্য করেনি দলগুলো। সেই দামের ‘মূল্য’ রেখে দারুণ পারফর্ম করছিলেন দুজনই।

    গেইলের ফর্মে ভাটা পড়তে শুরু করে বছর দুয়েক আগে। পিএসএলের প্রথম আসরে তাকে ২ লাখ ডলারে কেনে লাহোর কালান্দারস। পাঁচ ম্যাচে গেইল করেন মাত্র ১০৩ রান, এর মাঝে দুই ম্যাচে গোল্ডেন ডাকও মেরেছেন। ২০১৭ সালের আইপিএলেও গেইলের ব্যাট হাসেনি, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে ৯ ম্যাচে করেন মাত্র ২০০ রান। গত বছর তাকে ছেড়ে দেয় বেঙ্গালুরু। যে গেইলকে কেনার জন্য আগে কাড়াকাড়ি পড়ে যেত, অবিশ্বাস্যভাবে সেই গেইলকেই সেবারের নিলামে কেনেনি কেউই! এরপর টুর্নামেন্ট শুরুর কিছুদিন আগে বেস প্রাইস ২ কোটি রুপিতে তাকে দলে নেয় কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। সেবার ভালো দাম না পেলেও হেসেছিল গেইলের ব্যাট, ১১ ম্যাচে ৩৬৮ রান করেছিলেন গেইল। অন্যদিকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে পোলার্ডের ফর্মেও পড়েছে ভাটা। ২০১৭ সালে ১৭ ম্যাচে ৩৮৫ রান করলেও উইকেটশূন্য ছিলেন। গতবার ৯ ম্যাচে করেছেন মাত্র ১৩৩ রান, সেবারও কোনো উইকেট পাননি তিনি।

    ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের এবারের মৌসুমে রান আসেনি গেইলের ব্যাটে। সেন্ট কিটসের হয়ে খেলেছেন ১১ ম্যাচ, রান ২৮৩, ফিফটি ছিল একটি। পোলার্ড অবশ্য গেইলের তুলনায় ভালো করেছেন, ৯ ম্যাচে করেছেন ৩৩০ রান, উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৪টি।

    আফগান প্রিমিয়ার লিগের প্রথম আসরে বালখ লিজেন্ডসের আইকন হিসেবে দলে ছিলেন গেইল। সিপিএলে ব্যাট না হাসলেও এখানে কিছুটা ফর্মে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন তিনি। সাত ম্যাচ খেলে করেছেন ৩১৫ রান, স্ট্রাইক রেট ছিল ১৭২।

    বিপিএল এলে বরাবরই জ্বলে ওঠেন গেইল-পোলার্ড। তবে গতবার ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই ফ্লপ ছিলেন পোলার্ড। ১২ ম্যাচে করেছিলেন ২৩৮ রান, উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র একটি। অন্যদিকে গত মৌসুমে রংপুরের শিরোপা জয়ে অন্যতম মূল ভূমিকা ছিল গেইলেরই। বিশেষ করে ফাইনালে ঢাকার বিপক্ষে তাঁর অপরাজিত ১৪৬ রানেই শিরোপা নিশ্চিত করে রংপুর। সব মিলিয়ে গতবার ১১ ম্যাচে গেইল করেছিলেন ৪৮৫ রান।

    গতবারের হতাশা ভুলে নিজের চিরচেনা ফর্মে ফিরবেন পোলার্ড ও আগেরবারের ফর্ম ধরে রাখবেন গেইল, ঢাকা ও রংপুরের সমর্থকদের আশা ছিল এমনটাই। তবে দুজনেই এই প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ। ব্যাট হাতে ১২ ম্যাচে পোলার্ডের রান ২২২, উইকেট নিয়েছেন একটি। ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে দল যখন বিপদে, ‘নায়ক’ হওয়ার সুযোগ এসেছিল পোলার্ডের সামনে। কিন্তু মাত্র ১৩ রান করেই আউট হয়েছে তিনি।

    গেইলকে নিয়ে বরাবরের মতো প্রত্যাশার পারদ ছিল তুঙ্গে। তবে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই গেইল নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। রাইলি রুশো-এবি ডি ভিলিয়ার্সদের ব্যাটিংয়ে তাঁর অভাবটা অবশ্য বোঝা যাচ্ছিল না। অনেকে ভেবেছিলেন, গ্রুপ পর্বে না হোক, কোয়ালিফায়ারে অন্তত জ্বলে উঠবেন গেইল। কুমিল্লার বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারে কিছুটা আভাস দিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত ৪৬ রানে থামেন গেইল। এলিমিনেটরে দলের বাঁচা মরার লড়াইয়ে গেইল করেছেন মাত্র ১৫ রান, রংপুরও উঠতে পারেনি ফাইনালে।

    একটা সময় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের যে মালিকরা গেইল, পোলার্ডকে দলে নেওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তেন, তাঁরাই হয়ত এখন নিজেদের দলে দুই ক্যারিবিয়ান টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্টকে নিতে দ্বিতীয়বার ভাববেন!