ভিভের আবিষ্কার
১৯৭৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটিতে আলাদা করে মনে রাখার মতো উল্লেখযোগ্য কিছু হয়তো ছিল না। ইংল্যান্ডকে ৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েই বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৬০ ওভারে ২৮৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই ইংলিশ ওপেনার মাইক ব্রিয়ারলি ও জিওফ বয়কটের নির্লিপ্ত ব্যাটিংয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের শেষ সম্ভাবনাটুকুও কার্যত উবে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরও লর্ডসের ওই ম্যাচ সমসাময়িক ক্রিকেটপ্রেমীদের তাড়িত করে শেষ বলের রোমাঞ্চে।
৯২ রানে মীমাংসা হওয়া ম্যাচে ‘শেষ বলের রোমাঞ্চ’ থাকে কি করে? এই শেষ বল গোটা ম্যাচের শেষ নয়, ক্যারিবিয় ইনিংসের শেষ। মাইক হেন্ডরিককে স্কয়ার লেগ দিয়ে ফ্লিক করে ছয় মেরে মাঠ ছেড়েছিলেন স্যার ভিভ রিচার্ডস! এক বাক্যের সাদামাটা বর্ণনায় একে ‘সাধারণ’ কিছু মনে হয়ে থাকলে জেনে রাখুন, ১৩৮ রানের সময়োপযোগী ইনিংসের ‘মধুরেন সম্পায়েৎ’ মারটিকে স্বয়ং ভিভ স্মরণ করেন তাঁর ‘আবিষ্কার’ হিসেবে।
সে ম্যাচে টস জিতে প্রথমে প্রতিপক্ষকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক মাইক ব্রিয়ারলি। দলপতির সিদ্ধান্তের প্রতি সুবিচার করে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট ফেলছিলেন অল্ড-হেন্ডরিকরা। ওপেনার গর্ডন গ্রিনিজ অবশ্য ফিরে গিয়েছিলেন রান আউট হয়ে। ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপাকেই পরে যায় ক্লাইভ লয়েডের দল।
কিন্তু এরপরই কলিস কিংকে নিয়ে প্রতিরোধ শুরু করেন ভিভ রিচার্ডস। পঞ্চম উইকেটে ভিভ-কিংয়ের ১৩৯ রানের জুটি ক্যারিবিয়দের পৌঁছে দেয় ২৩৮ রানের নিরাপদ উচ্চতায়। ব্যক্তিগত ৮৬ রান নিয়ে কিং এডমন্ডের বলে রান্দালের তালুবন্দী হন। অতঃপর আবারও ক্যারিবিয়ানদের আসা-যাওয়ার মিছিল। মুরে পাঁচ রানে আউট হওয়ার পর তিন তিনজন ব্যাটসম্যান ফেরেন রানের খাতা না খুলেই। কিন্তু তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের চাকা শ্লথ হয়ে গিয়েছিল ভাবছেন? মোটেও না! উইকেটের এক প্রান্ত আগলে থেকে ভিভ রান তুলে যাচ্ছিলেন নিরবিচ্ছিন্ন গতিতেই।
ইনিংসের শেষ ওভার যখন শুরু হচ্ছে তখন দশম উইকেট জুটিতে ভিভের সঙ্গী কলিন ক্রফট। বল করবেন পেসার মাইক হেন্ডরিক। ভিভের ব্যক্তিগত সংগ্রহ তখন ১২৪, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৭২। তাঁকে এক-দুই রানে প্রলুব্ধ করতে প্রায় সব ফিল্ডারকে সীমানা দড়ির উপর নিয়ে যান ইংলিশ ক্যাপ্টেন। বলে রাখা ভালো, তখনও ক্রিকেটে ফিল্ডিং পজিশনের ধরাবাঁধা নিয়মকানুন চালু হয় নি।