শেওয়াগের খোলা চিঠি
খেলোয়াড়ি জীবনে আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন নানা কারণে। যুগকালের ক্যারিয়ারে ওঠা অগুনিত প্রশ্নের জবাব মাঠের খেলাতেই দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সাবেক ভারতীয় ওপেনারের কাছে আগ্রাসনই ছিল ব্যাটিংয়ের শেষ কথা। আজ যখন বয়সের অংক সাইত্রিশ পেরলো, ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার ঘোষণাটা আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়েই ফেললেন বীরেন্দর শেওয়াগ। টুইটারে ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে প্রকাশিত সে ঘোষণাপত্রের সংক্ষেপিত বঙ্গানুবাদ প্যাভিলিয়নের পাঠকদের জন্য।
মার্ক টোয়েনের ভাষাতেই বলি, গতকাল আমার অবসরের খবরটা অতিরঞ্জিত করা হয়েছে! যাই হোক কে কি ভাবলো তাতে আমার কোনদিনই কিছু এসে যায় নি, আমি সবসময় নিজের কাছে যা ভালো মনে হয়েছে তাই করেছি। ইশ্বরের কৃপায় যখন যেটা চেয়েছি করতে পেরেছি, সেটা খেলার মাঠেই হোক আর ব্যক্তিগত জীবনেই হোক। সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম যে আমি আমার ৩৭তম জন্মদিনে অবসর নেব। সে মোতাবেক আজকে -যে দিনটা পরিবারের সাথেই কাটাই- আমি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগসহ সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিচ্ছি।
ক্রিকেটই আমার জীবন ছিল এবং এখনও তাই আছে। ভারতের হয়ে খেলতে পারাটা আমার জন্যে একটা স্মরণীয় অভিজ্ঞতা এবং আমি সবসময় আমার সতীর্থ ও ভারতীয় সমর্থকদের জন্যও সেটা আরও বেশী স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছি। আমার বিশ্বাস সে কাজে যথেষ্ট সফলতা আমি দাবী করতে পারি। এজন্য আমি লম্বা ক্যারিয়ারজুড়ে যারা আমার সতীর্থ ছিলেন -যাদের মধ্যে অনেকেই বরেণ্য ক্রিকেটার- সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি কৃতজ্ঞ আমার অধিনায়কদের কাছে যারা আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন, আমাকে সাহস যুগিয়েছিলেন। ধন্যবাদ আমাদের সবচেয়ে বড় অংশীদার, ভারতীয় সমর্থকেরকে- তাঁদের তরফে পাওয়া সমস্ত ভালোবাসা, সমর্থন ও স্মৃতির জন্য।
ক্যারিয়ারজুড়ে অনেক নামীদামী ক্রিকেটারের বিপক্ষে খেলেছি যেটা একইসাথে আনন্দদায়ক ও সম্মানজনক ছিল। নিজের সেরাটুকু উজার করে খেলতে ওটা অনেক বেশী প্রেরণা যুগিয়েছে। সময়গুলো যেন স্বপ্নের মতো কেটেছে। দুনিয়াজুড়ে সেরা সব ময়দানে খেলার সুযোগ পেয়েছি। ওসব মাঠে আমাদের সাবলীল খেলা নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করা সাধারণ কর্মচারী থেকে শুরু করে কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি রইলো আমার কৃতজ্ঞতা।
বাবাকে আজ খুব মনে পড়ছে। যেখান থেকে ক্রিকেটার হিসেবে আমার পথচলা শুরু সেখানে তিনি ছিলেন, আজ যেখানে শেষ করছি সেখানেও তাঁকে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি জানি তাঁকে আমি গর্বিত করতে পেরেছি এবং এই মুহূর্তে তিনি যেখানেই থেকে থাকুন না কেন গর্বভরেই আমাকে দেখছেন। আমি আমার শ্রদ্ধেয় কোচ এ.এন. শর্মার কাছে কৃতজ্ঞ, এই মানুষটা ছাড়া অন্য কেউ সম্ভবত আমাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে আসতে পারতো না। অন্য যে কোন কোচের অধীনে বোধকরি আমার পক্ষে স্কুলের হয়ে খেলাটা কঠিন হয়ে যেত। আমার মা, স্ত্রী আর দুই সন্তান আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা যাদের জন্য আমি সাহসের সাথে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে পেরেছি।
আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে। বছরের পর বছর ধরে তাঁরা যেভাবে সাহায্য করে গেছে তা এক কথায় অসাধারণ। আমি কৃতজ্ঞ দিল্লী ও জেলা ক্রিকেট সমিতির কাছে। যখন যেটা চেয়েছি তাঁদের কাছে পেয়েছি। বিশেষ করে অরুণ জেটলির কথা বলতেই হয় যার প্রতি সবসময়ই আমার অন্যরকম একটা নির্ভরতা ছিল। হরিয়ানা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কাছেও আলাদাভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যে স্নেহ-ভালোবাসায় তাঁরা আমাকে বরণ করে নিয়েছিল সেটার কোন তুলনা হয় না। ওখানে দারুণ প্রতিভাবান কিছু তরুণের সাথে কাজ করতে পেরেছি। চৌধুরী রণবীর সিংকে ধন্যবাদ দুঃসময়ে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া অমূল্য প্রেরণাসমূহের জন্য।
আমি কৃতজ্ঞ দিল্লী ডেয়ারডেভিল ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের কাছে, যাদের হয়ে আমি আইপিএলে প্রতিনিধিত্ব করেছি। ধন্যবাদ তাঁদেরকে আমার প্রতি আস্থা রেখে তাঁদের একজন করে নেবার জন্য। আমার দলের জন্য আমি সবসময় নিজের সেরাটুকুই দেবার চেষ্টা করেছি। ওসব দলে অসাধারণ সব ক্রিকেটারদের সাথে খেলতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারজুড়ে প্রতিটা সংবাদ সম্মেলন ও প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মীর সাথে হওয়া আলাপচারিতা আমি উপভোগ করেছি। বিদেশের মাটিতে ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গ মনে রাখার মতো বহু স্মৃতির জন্ম দিয়েছে যেসব আমি কোনদিন ভুলবো না।
সময়ে সময়ে যারা নানারকম ক্রিকেটীয় পরামর্শ দেয়া সাহায্য করতে চেয়েছেন, তাঁদের সবাইকেও ধন্যবাদ। একইসাথে ক্ষমাপ্রার্থী ওসবের বেশীরভাগই না মানার জন্য!এর পিছনে আমার নিজস্ব যুক্তিও আছে, আমি সবকিছু নিজের মতো করেই করতে চেয়েছি!
বীরেন্দর শেওয়াগ