কিক অফের আগে: অকুতোভয় আয়াক্সকেই ভয় রিয়ালের
অকুতোভয় আয়াক্সকেই ভয় রিয়ালের
আয়াক্স বনাম রিয়াল মাদ্রিদ; ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনা; ১৪ ফেব্রুয়ারি, রাত ২টা
মৌসুমের শুরুটা একেবারেই বিপরীতমুখি হয়েছিল তাদের। নতুন 'সোনালী প্রজন্ম'-এর কল্যাণে ডাচ লিগে একের পর এক জয়ে শীর্ষস্থান সুসংহত করছিল আয়াক্স আমস্টারডাম, অন্যদিকে একের পর এক হারে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল আগামী মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলাই। কিন্তু ২০১৯-এ এসে যেন রীতিমত পালটে গেল পাশার দান। চ্যাম্পিয়নস লিগ নকআউট পর্বের ঠিক আগে স্বরূপে ফিরেছে রিয়াল। সান্তিয়াগো সোলারির অধীনে মৌসুমে নিজেদের সেরা ফর্মে আছে রিয়াল, উঠে এসেছে লা লিগার দুই নম্বরে। আর আয়াক্স যেন হারিয়ে খুঁজছে নিজেদের। লিগে শেষ ৩ ম্যাচে ২ হারে শীর্ষস্থানটাও হারিয়েছে তারা। ডিসেম্বরে ড্রয়ের পর রিয়ালের বিদায়ের পক্ষে বাজি ধরা লোকের সংখ্যার অভাব ছিল না। ২০১৯-এর মাস দেড়েক বদলে দিয়েছে সব, ফেভারিটের তকমাটা হয়ত জুটবে রিয়ালের কপালেই।
'হারানোর কিছুই নেই আমাদের'
২০০৫-০৬ মৌসুমে শেষবার চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলতে খেলেছিল । দীর্ঘ ১৩ বছর পর গ্রুপপর্বের গেরো কাটাতে পেরেছে আয়াক্স। প্রতিপক্ষ গত তিনবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল। ঠিক সময়েই জ্বলে উঠেছে সোলারির দল। আয়াক্স কোচ এরিক তেন হাগের বিশ্বাস, চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে হারানোর কিছুই নেই তার দলের, 'রিয়াল ইউরোপের সেরা দল আমার কাছে। প্রত্যেক দলই মৌসুমের একটা সময় কিছুটা ফর্মহীনতায় ভোগে, অস্বাভাবিক কিছু নয় এটা। কিন্তু তারা (রিয়াল) যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা আসলেই প্রশংসনীয়। কিন্তু রিয়াল কী করবে, সেটা নিয়ে ভাবলে আমার নামার আগেই হেরে যাব; অন্তত মানসিকভাবে। প্রতিপক্ষ নয়, বরং নিজেদের কোন কোন জায়গায় উন্নতি করা যায়, সেটা নিয়েই ভাবছি আমরা। সেরা খেলাটা দিতে পারলে আমরা যে কাউকেই টক্কর দিতে পারি, গ্রুপপর্বেই প্রমাণ করেছি আমরা (বায়ার্নের বিপক্ষে দুই ড্র)। হারানোর কিছুই নেই আমাদের। ফলাফল নয়, খেলাটা উপভোগ করতেই নামছি আমরা। আমার মতে উপভোগ করে খেললেই নিজেদের সেরাটা দিতে পারব আমরা।'
'তারুণ্য আয়াক্সের মূল শক্তি'
ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, মাথিয়াস ডি লিট, ভ্যান ডি বিক। ২০১৮-১৯ মৌসুমে আয়াক্সের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পেছনে তারুণ্যের অবদানটা প্রশংসনীয়। সাথে আছে দালি ব্লিন্দ, ক্লাস ইয়ান হান্টেলারের অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে আয়াক্সকে সমীহই করছেন রিয়াল কোচ সোলারি, 'নিজেদের প্রমাণ করেই শেষ ষোলতে এসেছে তারা (আয়াক্স)। দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক তারা। তরুণদের ভয়ডরহীন ফুটবলে প্রতিপক্ষকে রীতিমত নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে তারা। ফর্মের বিচারে কে কেমন, এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগাটা বোকামি। প্রতিপক্ষের প্রতি যথাযথ সম্মান আছে আমাদের। এই স্টেডিয়ামে সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ কিছু জয় পেয়েছি আমরা। আশা করি আগামীকালও সেই ধারাই অব্যাহত থাকবে।'
দলের খবর
হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ায় রিয়ালের বিপক্ষে খেলা নিয়ে সংশয় আছে আয়াক্সের আর্জেন্টাইন লেফটব্যাক নিকোলাস টালিয়াফিকোর। গত সপ্তাহে গোড়ালির ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়লেও আগামীকাল খেলছেন আগামী গ্রীষ্মে বার্সায় যোগ দিতে যাওয়া ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, জানিয়েছেন এরিক। আয়াক্সের মতই ইনজুরি নিয়ে খুব একটা ভাবতে হচ্ছে না রিয়াল কোচ সোলারিকে। ইনজুরির কারণে হেসুস ভায়েহো, ইস্কো এবং মার্কোস ইয়োরেন্তেকে ছাড়া পূর্ণশক্তির দলই পাচ্ছেন তিনি। তবে আমস্টারডামের উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার আগে অসুস্থতার কারণে শেষ অনুশীলন সেশনে ছিলেন না রিয়াল ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারান। আজ হয়ত না-ও দেখা যেতে পারে তাকে।
সম্ভাব্য মূল একাদশ
আয়াক্স (৪-৩-৩): ওনানা; মাজরাওই, ব্লিন্দ, ডি লিট, টালিয়াফিকো; শোন, ডি ইয়ং, ডি বিক; নেরেস, তাদিচ, জিয়েচ
রিয়াল মাদ্রিদ (৪-৩-৩): কর্তোয়া; কারভাহাল, নাচো, রামোস, রেগুইলন; ক্রুস, মদ্রিচ, কাসেমিরো; ভাজকেজ, বেনজেমা, ভিনিসিয়াস
সংখ্যায় সংখ্যায়:
- রিয়ালের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ৬ ম্যাচই হেরেছে আয়াক্স
- নিজেদের মাঠে শেষ ২১ ইউরোপিয়ান ম্যাচে মাত্র ১বার হেরেছে আয়াক্স
- টানা ২২ মৌসুম চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে উঠেছে রিয়াল
লড়াই যখন সমানে সমান
টটেনহাম হটস্পার বনাম বরুশিয়া ডর্টমুন্ড; ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম; ১৪ ফেব্রুয়ারি, রাত ২টা
ইন্টার মিলানের মত দলকে টপকে শেষ ষোলতে এসেছে তারা। কিন্তু ইনজুরির কারণে দলের মূল ভরসা হ্যারি কেইনকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে বেশ ভাটাই পড়েছে টটেনহাম হটস্পারের। প্রতিপক্ষ বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবং এএস মোনাকো নিয়ে গড়া গ্রুপ থেকে যারা পরের রাউন্ডে এসেছে চ্যাম্পিয়ন হয়েই। ওয়েম্বলিতে আজ প্রথম লেগে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। এশিয়া কাপ থেকে হিউঙ-মিন সন ফিরে দলের হাল ধরলেও কেইনকে ছাড়া কিছুটা বিবর্ণই মনে হচ্ছে স্পার্সকে।
'কেইনের না থাকাটা অজুহাত হতে পারে না'
গত তিন মৌসুম ধরে স্পার্সের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। গত মাসে পায়ের ইনজুরিতে পড়ে মাস দুয়েকের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন কেইন। কেইনকে ছাড়া এফএ কাপ থেকেও ছিটকে গেছে স্পার্স। কিন্তু সনে সওয়ার হয়ে লিগে নিজেদের ফর্মটা ঠিকই ধরে রেখেছে তারা। কিন্তু ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে কেইনকে ছাড়া হয়ত বেশ বেগই পেতে হতে পারে স্পার্সকে। কিন্তু ক্লাব অধিনায়কের না থাকাটাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে নারাজ কোচ মরিসিও পচেত্তিনো, 'অবশ্যই হ্যারিকে আমরা মিস করব। নি:সন্দেহে বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারদের মধ্যে একজন সে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে এসে দলে কে আছে আর কে নেই- এসব ভেবে প্রস্তুতি নেওয়াটা আমার দর্শনের মধ্যে পড়ে না। দলে হিউঙ (সন), ক্রিশ্চিয়ান (এরিকসেন), ফার্নান্দোরা (ইয়োরেন্তে) আছে। ডর্টমুন্ড দুর্দান্ত দল। বিশেষ করে তাদের আক্রমণ ত্রয়ী অসাধারণ। আমাদের রক্ষণভাগকে পুরোটা ম্যাচই সতর্ক থাকতে হবে। সামান্যতম ভুলকেও তারা গোলে পরিণত করতে পারে। হ্যারি না থাকলেও হাল ছাড়ছি না আমরা।'
'নকআউট পর্বে কেতাবী পরিসংখ্যান অর্থহীন'
২০১৮-১৯ বুন্দেসলিগা টেবিলের শীর্ষে আছে তারা। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের গ্রুপ থেকেও চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউটে এসেছে ডর্টমুন্ড। কিন্তু পুরো মৌসুমের ভাগ্যের অনেকটা যখন ১৮০ মিনিটের ওপর নির্ভরশীল, তখন আসলে এসব কেতাবী পরিসংখ্যান ফিরে দেখার কোনও মানেই হয় না- মানেন ডর্টমুন্ড কোভ লুচিয়ান ফাভ্রে, 'কে কয় ম্যাচ জিতল, কত গোল দিল- এসব পরিসংখ্যান শুনতেই ভাল লাগে। চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বের আগে এসব নিয়ে কথা বলাটা আমার কাছে অনর্থক মনে হয়। পরিসংখ্যান দেখলে আমরা তাদের (স্পার্সের) চেয়ে এগিয়ে আছি। কিন্তু তারা আগামী ১৮০ মিনিটে ভাল খেললে পরের রাউন্ডে চলে যেতে পারে। কেইন না থাকলেও মরিসিও-র স্পার্স দারুণ খেলছে। ইনজুরির সমস্যা আছে আমাদেরও। তবে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না আমরা। ওয়েম্বলিতে আজ আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। স্পার্স সুযোগ পেলেই আমাদের ভোগাবে।'
দলের খবর
স্পার্সের হয়ে ইনজুরির কারণে থাকছেন না হ্যারি কেইন, বেন ডেভিস এবং ড্যালে আলি। সংশয় আছে লেফটব্যাক ড্যানি রোজের খেলা নিয়েও। তবে ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন এরিক ডায়ার এবং এরিক লামেলা। প্রতিপক্ষের মতই ইনজুরি ভাগ্যটা একেবারেই সুপ্রসন্ন নয় ডর্টমুন্ডের। আক্রমণভাগের অন্যতম মূল দুই কান্ডারি মার্কো রয়েস এবং পাকো আলকাসেরকে পাচ্ছেন না ফাভ্রে।
সম্ভাব্য মূল একাদশ
স্পার্স (৪-৩-৩): লরিস; অল্ডারওয়েরেল্ড, সানচেজ, ভার্টনহেন, ট্রিপিয়ের; ডায়ার, উইঙ্কস, সন; এরিকসেন, ইয়োরেন্তে, মউরা
ডর্টমুন্ড (৪-২-৩-১): বুর্কি; পিজচেক, দিয়ালো, হাকিমি, ওয়াইগেল; উইটসেল, দাহুদ; সানচো, ফিলিপে, গুরেরো; গোটজে
সংখ্যায় সংখ্যায়
- চ্যাম্পিয়নস লিগে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ২ ম্যাচই জিতেছে স্পার্স
- স্পার্সের বিপক্ষে খেলা ৪ ম্যাক্সের প্রতিটিতেই গোল করেছে ডর্টমুন্ড
- এবারই প্রথম টানা দুই মৌসুম চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে খেলছে স্পার্স