• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    কিমপেম্বে-এমবাপ্পেতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে হাসল পিএসজি

    কিমপেম্বে-এমবাপ্পেতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে হাসল পিএসজি    

    ওল্ড ট্রাফোর্ডে একটা বিশ্বাস ধীরে ধীরেই দৃঢ় হচ্ছিল। প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের সাম্প্রতিক ফর্ম আর ইনজুরি সমস্যা, সঙ্গে নিজেদের ফর্মে ফেরা- স্বপ্ন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড দেখতেই পারত। সম্ভবত একটা রিয়েলিটি চেক হয়ে গেল ইউনাইটেডের। ইউনাইটেডকে উড়িয়ে দিয়ে পিএসজি সেই বিশ্বাসে দিল বড় আঘাত। নেইমার-কাভানিদের আর দরকার হয়নি, এই দুইজনের অনুপস্থিতিতে এমবাপ্পে সঙ্গী করেছেন অ্যানহেল ডি মারিয়াকে। সাবেক ইউনাইটেড খেলোয়াড় ওল্ড ট্রাফোর্ডে হয়েছেন খলনায়ক। ম্যানচেস্টারে নামার পর থেকেই দুয়ো শুনছিলেন, শেষ হাসিটা অবশ্য তিনিই হেসেছেন। পিএসজির জয়ের রুপকার তিনিই। গোল করেননি, তবে করিয়েছেন দুইটিই। হুট করে কঠিন বনে যাওয়া  চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলর প্রথম লেগের ম্যাচটি পিএসজি জিতেছে সহজ বানিয়ে, ২-০ গোলে।

    ইউনাইটেড ম্যানেজার ওলে গানার সোলশায়ার পেয়েছেন প্রথম হারের স্বাদ। পল পগবা শেষদিকে লাল কার্ড দেখায় ইউনাইটেড ম্যাচ শেষ করেছে ১০ জনের দল নিয়ে। দুই অ্যাওয়ে গোল হজম করে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার রাস্তাটা তাই ঝাপসা হয়ে গেল প্রায় পুরোটাই। আর নতুন বিশ্বাস জন্ম নিল প্যারিসে।
    চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির উন্নতির গ্রাফটা উর্ধ্বমুখী ছিল। ম্যানেজার টমাস টুখলের লক্ষ্য আরও স্পষ্ট হয়েছে এই ম্যাচে। নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে, দলকে এক সুতোয় গাঁথার কাজটা ভালোভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

    ওল্ড ট্রাফোর্ডে টুখলের দলকে অবশ্য প্রথমার্ধে আটকেই রেখেছিল ইউনাইটেড। পিএসজির হয়ে  প্রথম গোলের সম্ভবনাটা জাগিয়েছিলেন সাবেক ইউনাইটেড খেলোয়াড় অ্যানহেল ডি মারিয়া। ডিবক্সের বাইরে থেকে বাম পায়ের শটে ৬ মিনিটে চমকেই দিয়েছিলেন ইউনাইটেডের রক্ষণকে। অবশ্য এরপর ইউনাইটেডও পিএসজির টেম্পোর সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছিল সময়ের সাথেই। ১৫ মিনিটে পল পগবার ক্ষীপ্র গতি আরেকটু হলেই গোল পাইয়ে দিতে পারত, জিয়ানলুইজি বুফন বিপদ বাড়তে দেননি। দুই মিনিট পর অ্যাশলি ইয়াংয়ের ভালো একটা ক্রসও ইউনাইটেডের বিফলে যায় থিয়াগো সিলভার কারণে। ম্যাচে ইউনাইটেডের বলার মতো আক্রমণ এর বাইরে এসেছে খুব কমই।

    কিলিয়ান এমবাপ্পের ওপর ছিল গুরু দায়িত্ব। প্রথম ২৫ মিনিটে এমবাপ্পেকে দেখাই গেল না তেমন। এরপর আলোর ঝলকানির মতো ফিরলেন, ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড়ে গিয়ে ঢুকলেন, কিন্তু সুবিধা করতে পারলেন না। কিন্তু তাতে আত্মবিশ্বাসটা বাড়ল পিএসজির। দল হিসেবে যে তারা ইউনাইটেডের চেয়ে ভালো- এরপর তাই সেটা প্রমাণেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন পিএসজির খেলোয়াড়েরা। প্রথমার্ধে গোলের সেরা সুযোগটাও পেয়েছিলেন এমবাপ্পেই। ভেরাত্তি, ড্রাক্সলারের দারুণ এক আক্রমণ থেকে থ্রু পাস ধরে ঢুকে পড়লেন ডিবক্সের ভেতর। কিন্তু ওয়ান অন ওয়ানে ডেভিড ডি গিয়ার পরীক্ষাটা তখন নিতে পারেননি, মারলেন সাইড নেটে। সহজ সুযোগ নষ্ট করে প্রথমার্ধে আর এগিয়ে যাওয়া হয়নি পিএসজির, তবে ঠিক পথেই ছিল তারা।

     

     

    আর ওলে গানার সোলশায়ারের জন্য কাজটা আরও কঠিন হয়ে গিয়েছিল ইনজুরিতে। জেসি লিনগার্ড মাঠ ছেড়েছেন ইনজুরি নিয়ে, প্রথমার্ধের ইনজুরি দ্বিতীয়ার্ধে আর নামতেই দেয়নি অ্যান্থনি মার্শিয়ালকে। অ্যালেক্সিস সানচেজ আর হুয়ান মাতাকে নিয়ে আর সেভাবে গুছিয়েও ওঠা হয়নি ইউনাইটেডের আক্রমণভাগের।   

    দ্বিতীয়ার্ধে ইউনাইটেডকে আর সুযোগই দেয়নি পিএসজি। ৫২ মিনিটে আলভেজের ক্রস থেকে এমবাপ্পে ভালো একটা শট করেছিলেন, কিন্তু ডি গিয়াও বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে করেছিলেন দুর্দান্ত এক সেভ। কিন্তু ডি গিয়াও এরপর আর পারেননি দলকে বাঁচাতে। এমবাপ্পেকে গোলের জন্য আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলেও অপেক্ষা বাড়েনি পিএসজির, ওই কর্নার থেকেই গোল পেয়ে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধে রেড ডেভিলদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছেন আসলে ডি মারিয়াই। তার কর্নার থেকেই ভলিতে প্রিস্নেল কিমপেম্বে করেন প্রথম গোল। পরের মিনিটে আরও একটি কর্নার থেকে আলভেজের ভলিও গোলে পরিণত হতে পারত। আলভেজ অবশ্য মেরেছিলেন ডিবক্সের বাইরে থেকে, কিন্তু পগবার গায়ে গেলে অল্পের জন্য সেই শট লক্ষ্যে পৌঁছেনি।  

    ম্যাচের সময় ঘন্টার কাঁটা ছোঁয়ার পর অপেক্ষা ফুরোয় এমবাপ্পের। বাম প্রান্ত থেকে ডি মারিয়ার নিখুঁত গ্রাউন্ড ক্রস ইউনাইটেডের দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে পৌঁছে যায় জায়গামতো, এমবাপ্পের জন্য কাজটা সহজই ছিল। পা ছোঁয়ালেই গোল। এমবাপ্পে অতো সহজ সুযোগ আর নষ্ট করলেন না তখন। ৬০ মিনিটেই তাই পিএসজি ২, ইউনাইটেড ০।

    এই মৌসুমে খেলা ৩৪ ম্যাচে পিএসজি গোল করেছে ১০৪ টি। নেইমার-কাভানির তাতে বড় অবদান ছিল। তারা থাকলে হয়ত বাড়তে পারত গোল সংখ্যাও। তবে ড্রাক্সলার, ডি মারিয়ারা সে অভাবটা বুঝতেই দেননি। ডি গিয়া নিজেও গোল পেতে পারতেন। সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন, অবশ্য অফসাইড ফ্ল্যাগ আর দোষ কমিয়ে দিচ্ছে ডি মারিয়ার! পিএসজির জয়ের  ব্যবধানটা শেষ পর্যন্ত বাড়েনি আসলে ডি গিয়ার জন্যই। ৬২ আর ৬৩ মিনিটে এমবাপ্পে আর হুয়ান বার্নেটকে ফিরিয়ে দেন ইউনাইটেড গোলরক্ষক।

    এরপর অবশ্য কিছুটা সময় ইউনাইটেড চেষ্টা করেছিল আক্রমণে ওঠার। তবে গোল শোধ করার মতো আক্রমণে ওঠার সুযোগই পায়নি তারা। ওল্ড ট্রাফোর্ডের রাতটা ঘরের দলের জন্য শেষে দুঃস্বপ্নে  পরিণত হয়েছে পগবার জন্য। রেফারি প্রথম ২৫ মিনিটেই দেখিয়েছিলেন ৩ হলুদ কার্ড। এ ৩ জনের শেষজন ছিলেন পগবা। তখন ফাউল করেছিলেন ভেরাত্তিকে। ম্যাচের সঙ্গে মেজাজ হারিয়ে ৮৯ মিনিটে আলভেজকে ফাউল করে পগবা দেখেন দ্বিতীয় হলুদ কার্ড। ঘরের মাঠে ২-০ ব্যবধানে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের পরের পর্বে ওঠার ইতিহাস নেই কোনো দলেরই। তারওপর প্যারিসের ম্যাচে থাকবেন না পগবাও। নাটকীয় কিছু না হলে তাই পিএসজিকে কোয়ার্টার ফাইনালের দল হিসেবে ধরতেই পারেন আপনি!

    রাতে অন্য ম্যাচে ঘরের মাঠে পোর্তোকে ২-১ গোলে হারিয়েছে রোমা। ১৯ বছর বয়সী নিকোলা জানিয়োলা করেছেন জোড়া গোল। সবচেয়ে কমবয়সী ইতালিয়ান হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে জোড়া গোল করেছেন জানিওলা। অবশ্য ৭৯ মিনিটে আদ্রিয়ান লোপেজ এক গোল শোধ দিয়ে জানিওলাকে সব আলো কেড়ে নিতে দেননি, পোর্তোকে ভালোভাবেই তিনি টিকিয়ে রেখেছেন টাইয়ে।