• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    রিয়ালের জয় ছাপিয়ে আবারও 'ভিএআর' বিতর্ক

    রিয়ালের জয় ছাপিয়ে আবারও 'ভিএআর' বিতর্ক    

    গত সপ্তাহে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে তাদের জয় কিছুটা চাপা পড়ে গিয়েছিল 'ভিএআর' বিতর্কে। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগে আয়াক্সের বিপক্ষেও জিতল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু আবারও ভিডিও রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তই যেন হয়ে উঠল মূল উপজীব্য বিষয়। প্রথমার্ধে আয়াক্সের গোল বাতিল, বা ম্যাচের দুই মিনিট বাকি থাকতে মার্কো আসেন্সিওর গোল- দুই ক্ষেত্রেই ছিল বিতর্ক। কিন্তু গত সপ্তাহে অ্যাটলেটিকোর মত আবারও হয়ত বিতর্কের এপিঠটাই দেখল রিয়াল। ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনাতে আয়াক্সকে ২-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল। জয়ের সাথে দুটি অ্যাওয়ে গোল। কিন্তু তারপরও রিয়ালের জার্সিতে নিজের ৬০০তম ম্যাচ স্মরণীয় করতে রাখতে পারলেন না অধিনায়ক সার্জিও রামোস। দ্বিতীয়ার্ধে হলুদ কার্ড দেখায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দ্বিতীয় লেগ মিস করবেন তিনি। 

    অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল করায় আজ গ্যারেথ বেলকে শুরু থেকেই নামিয়েছিলেন কোচ সান্তিয়াগো সোলারি। কিন্তু পূর্ণশক্তির রিয়াল প্রথমার্ধে পাত্তাই পায়নি আয়াক্সের সামনে। তারুণ্যে ভরপুর ডাচদের প্রেসিং ফুটবলের সামনে রীতিমত দিশেহারাই মনে হয়েছে রিয়ালকে। করিম বেনজেমা, লুকা মদ্রিচ, টনি ক্রুসদের খুঁজে পাওয়া যায়নি প্রথমার্ধে। ৫৩ ভাগ পজেশন নিয়ে রিয়ালকে চেপে ধরেছিল আয়াক্স। চকিত পাসিং এবং দুর্দান্ত গতিময় ফুটবলে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়েছে ডাচ চ্যাম্পিয়নরা। ৯ মিনিটেই লিড নেওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল আয়াক্স। হাকিম জিয়েচের থ্রু পাস থেকে ডিবক্সে বল পেয়ে যান রাইটব্যাক মাজরাউই। কিন্তু শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রিয়ালের আক্রমণভাগে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। আজও তার প্রতি দেখানো আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তরুণ। ১৫ মিনিটে আয়াক্সের দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে চমৎকার এক বাঁকানো শট নেন তিনি। কিন্তু আয়াক্স গোলরক্ষক ওনানা ফিরিয়ে দিয়েছেন ভিনিসিয়াসকে। তরুণ ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংদের সামনে অভিজ্ঞ সার্জিও রামোসদেরই উলটো মনে হয়েছে অনভিজ্ঞ। ২৭ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ, কিন্তু বাধ সাধল ভাগ্য। রামোস, কাসেমিরোকে কাটিয়ে আয়াক্স ফরোয়ার্ড দুসান তাদিচের শট রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে পরাস্ত করলেও প্রতিহত হল বারপোস্টে।

     

     

     

     

    ৩৬ মিনিটে খুব সম্ভবত প্রথমার্ধের সেরা সু্যোগটা পেয়েছিলেন জিয়েচ। ভ্যান ডার বিকের পাস থেকে কর্তোয়াকে একা পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি মরোক্কান ফরোয়ার্ড। কিন্তু তাতেও দমে যায়নি আয়াক্স। মিনিটখানেক পর রিয়ালের জালে ঠিকই বল পাঠিয়েছিল আয়াক্স। এজন্য কর্তোয়াকে ধন্যবাদ দিতেই পারে ডাচরা। কর্ণার থেকে মাথিয়াস ডি লিটের হেড ধরতে গিয়ে বল ফসকে যায় কর্তোয়ার হাত থেকে। ফিরতি বল হেড করে ঠিকই জালে পাঠান আয়াক্সের আর্জেন্টাইন লেফটব্যাক নিকোলাস টালিয়াফিকো। কিন্তু আয়াক্সের বুনো উল্লাস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ভিডিও রেফারির সাহায্যে গোল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন মূল রেফারি ড্যামিয়েল স্কোমিনা। রিপ্লেতে দেখা গেছে, অফসাইডে থেকে খেলায় পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলছিলেন তাদিচ। 'ভিএআর'-এর গোল বাতিলের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বড় বাঁচা বাঁচেন কর্তোয়া। এক মিনিটের ব্যবধানে আরেকটু হলেই 'হিরো' থেকে 'জিরো'-ই বনে যেতেন রিয়ালের বেলজিয়ান গোলরক্ষক।

     

     

    বড় দলগুলোর বিপক্ষে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করা মানেই নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বহুল প্রচলিত কথাটি হাড়ে হাড়ে টের পায় আয়াক্স। ৫২ মিনিটে চমৎকার আক্রমণে বেনজেমার শট ফিরিয়ে দেন ওনানা। কিন্তু ৬০ মিনিটে আর শেষরক্ষা হয়নি তাদের। আবারও ভিনিসিয়াস জাদুতে গোল পেল রিয়াল। বাঁপ্রান্তে আয়াক্সের চারজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বেনজেমাকে পাস বাড়ান ভিনিসিয়াস। ডানপায়ের জোরাল শটে মৌসুমে নিজের ১৯তম গোল করেন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার। গোলের পর ম্যাচের দখলটা নিজেদের করে নেয় রিয়াল। স্বরূপে ফিরতে থাকেন মদ্রিচ, ক্রুসরা। পিছিয়ে পড়লেও কিন্তু আয়াক্সের প্রেসিং ফুটবল ছিল অব্যাহত। এই প্রেসিং দিয়েই ৭৫ মিনিটে সমতায় ফেরে তারা। পুরো ম্যাচ অসাধারণ খেলা রামোসের ভুল পাসে বল পেয়ে যান ডি বিক। পাস বাড়ান নেরেসকে। আয়াক্স ফরোয়ার্ডের ক্রস থেকে দলকে সমতায় ফেরান জিয়েচ। প্রথমার্ধে সহজ সুযোগ হাতছাড়ার শাপমোচনটা এর চেয়ে দারুণভাবে করতে পারতেন না তিনি। কিন্তু নাটকীয়তার বাকি ছিল তখনও।

    ৮৮ মিনিটে দানি কারভাহালের ক্রস থেকে গোল করেন বদলি খেলোয়াড় আসেন্সিও। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেছে, গোলের 'বিল্ড আপ'-এ আগামী গ্রীষ্মে বার্সায় যোগ দিতে যাওয়া ডি ইয়ংকে ফাউল করেছিলেন লুকাস ভাজকেজ। ডি ইয়ংদের জোর দাবিতে ভিডিও রেফারির সাথে কথাও বলেছিলেন রেফারি ড্যামিয়েন স্কোমিনা। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলাননি তিনি। দুটি সিদ্ধান্তের ভুক্তভোগী হওয়ায় আয়াক্স সমর্থকদের জোর দুয়োতেই শেষ হয় দুর্দান্ত এক প্রথম লেগ। আয়াক্সের নতুন 'সোনালী প্রজন্ম' নিজেদের জাত চেনাল ঠিকই, কিন্তু রিয়াল দুটি 'অ্যাওয়ে' গোল পেয়ে যাওয়ায় ১৩ বছর পর নকআউটে আসা ডাচদের হয়ত ফিরতে হচ্ছে খালি হাতেই। সম্পূর্ণ স্বস্তিতে থাকতে পারছে না রিয়ালও। আরও এক বড় জয়ের পরও যে বিতর্কের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের।