'ব্যর্থ' দ্বাদশ খেলোয়াড়!
১৭ মার্চ, ১৯৯৬। লাহোরের গাদ্দাফী স্টেডিয়াম। অষ্টম ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি শ্রীলংকা। লঙ্কান দলের দ্বাদশ খেলোয়াড় ২১ বছরের তরুণ রবীন্দ্র পুষ্পকুমারা। একাদশের অতিরিক্ত ব্যাক্তিটির সাধারণত যে ধরণের কাজ করতে হয় পুষ্পকেও তাই করতে হয়েছিল; মাঠে থাকা সতীর্থদের কিছু প্রয়োজন হলে নিয়ে যাওয়া, ড্রেসিং রুমের বার্তা পৌঁছে দেয়া এইসব আর কি।
সেদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়া। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে অসিদের সংগ্রহ ছিল ২৪১। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৩ রানের মাথায় দু’ ওপেনারকে হারায় লঙ্কানরা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ধীরেসুস্থে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটাতে শুরু করেন অশোকা গুরুসিনহা ও অরবিন্দ ডি সিলভা। এরই মধ্যে শুরু হয় পানি পানের বিরতি। রবীন্দ্রর গল্পটা ওখানেই।
মাঠের ব্যাটসম্যানদ্বয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিসিনপাতি নিতে ড্রেসিংরুমে প্রবেশ করেই রীতিমতো ভড়কে যেতে হল পুষ্পকে। মাঠে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রায় প্রত্যেকেই তাঁকে কোন না কোন পরামর্শ দিতে শুরু করলো, “অরবিন্দকে এটা অবশ্যই বলবে কিন্তু…”, “গুরুকে বোলো শুধু স্পিন বলে মারতে, পেস নয়!” এমন অগুনিত বার্তা সঙ্গী করে ড্রেসিং রুম থেকে বেরোতেই রবীন্দ্র পরে যান কোচ ডেভ হোয়াটমোরের সামনে। কোচও তাঁকে প্রায় মিনিটখানেক ধরে কিছু ‘মেসেজ’ দিলেন মাঠে পৌঁছে দিতে। মজার ব্যাপার হল ইংরেজীতে ভীষণ কাঁচা পুষ্প নাকি হোয়াটমোরের একটা বাক্যও বুঝতে পারেন নি! তবে মুখে সেটা স্বীকার না করে কোচকেও তিনি আশ্বস্ত করলেন, “আচ্ছা, ডেভি”। বলেই দৌড়ে মাঠে চলে যান তিনি।
কিন্তু ব্যাটসম্যানদ্বয়ের কাছে গিয়ে সব কিভাবে যেন গুলিয়ে গেল তাঁর! কিচ্ছু মনে করতে পারলেন না। হোয়াটমোরের কথা তো বোঝেনই নি, সতীর্থদের খুব সাধারণ বার্তাগুলোও বেমালুম ভুলে গেলেন! ব্যাটসম্যানদের শুধু বলে এলেন, “খুব ভালো খেলছো... চালিয়ে যাও!”
ড্রেসিং রুমে ফেরার পর খুব স্বাভাবিকভাবেই জনে জনে এসে জিগ্যেস করতে লাগলো যে তাঁর বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে কিনা! পুষ্প সবাইকেই ইতিবাচক উত্তর দিলেন। একপর্যায়ে হোয়াটমোর এসে আবারও ইংরেজীতে পুষ্পকে কিছু জিগ্যেস করলেন। এ যাত্রায়ও ডেভের কথা কিছুই বোধগম্য হল না তাঁর। তবে ধরেই নিলেন কোচও ওই এক কথাই জানতে চাইছেন যে তাঁর মেসেজ মাঠে পৌঁছেছে কিনা। আন্দাজের উপর তাঁকেও তাই ইংরেজীতে অনুরূপ জবাব দিলেন, “হ্যাঁ, আমি বলেছি!”
সেদিনের স্মৃতিচারণে পুষ্পকুমারা বলছিলেন, বাকিরা তাঁর কথা বিশ্বাস করলেও হোয়াটমোর তাঁর দিকে যেভাবে তাকিয়েছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল তিনি খানিকটা দ্বিধান্বিত! কে জানে হয়তো ডেভ তাঁকে এমন কিছু জিগ্যেস করেছিলেন যেটার জবাব কেবল ‘ইয়েস/নো’ দিয়ে হয় না!
ম্যাচটা শেষপর্যন্ত শ্রীলংকা জিতে নিয়েছিল ৩ উইকেটে, ২২ বল হাতে রেখে। বিশ্বকাপজয়ী দলের দ্বাদশ খেলোয়াড় থাকার স্মৃতি পুষ্পকুমারা অবশ্যই আজীবন মনে রাখবেন। ৩৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বলছেন সেই সাথে বার্তাবাহক হয়ে একটি বার্তাও প্রাপককে পৌঁছে দিতে না পারার বিড়ম্বনাটুকুও তিনি কোনদিন ভুলবেন না!