ইউরোপিয়ান ডার্বির ডামাডোলে
ইউরোপিয়ান ফুটবলে এ সপ্তাহে রয়েছে একাধিক ডার্বি। চাইলেই তাই হারিয়ে যাওয়ার উপায় থাকছে না আপনার, গোটা শহর বাতি জ্বেলে সতর্কই থাকছে। ইউরোপিয়ান ডার্বির ডামাডোলে এই সপ্তাহের ৫ ডার্বি ম্যাচের আগে খুঁটিনাটি আর ক্লাবগুলোর 'খুনসুটিতে' চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক আরেকবার...
টটেনহাম হটস্পার-আর্সেনাল
শনিবার, বিকেল ৬.৩০ মিনিট
রেষারেষি শুরু : ১৮৯৬ সাল
ডার্বির নাম : নর্থ লন্ডন ডার্বি
হেড টু হেড : মুখোমুখি ১৯৭, আর্সেনাল ৮২ জয়, টটেনহাম ৬৪ জয়
টটেনহামের শত্রু
সল ক্যাম্পবেল। টটেনহামেই ফুটবলের হাতেখড়ি হয়েছিল তার, খেলেছেনও অনেকদিন। কিন্তু এরপর শিরোপা জেতার জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন আর্সেনালে। ২০০১ সাল থেকেই তাই ক্যাম্পবেল টটেনহামের সবচেয়ে বড় শত্রু।
আর্সেনালের শত্রু
আর্সেনালের জার্সি পরা হ্যারি কেইনের একটি ছবি সব বিতর্ক উস্কে দিয়েছিল। ছোটবেলায় আর্সেনাল সমর্থক ছিলেন কেইন। কিন্তু ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় খেলছেন টটেনহামের হয়ে। এই ক্লাবের সঙ্গে নাড়ির সম্পর্ক হয়ে গেছে কেইনের। ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ নয় গানার সমর্থকদের।
টেল অফ দ্য সিটি
টেমস নদীর দক্ষিণের এক শহরে গোঁড়াপত্তন হয়েছিল আর্সেনালের। কিন্তু ১৯১৩ সালে টটেনহামের টার্ফ দখলে নিয়ে দুই সমর্থকদের মধ্যে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিয়েছিল তারা। সেই থেকে দুই দলের সমর্থকদের রেষারেষি রূপ নিয়েছিল যুদ্ধে।
এবারের লড়াইয়ের মাহাত্ম্য কি?
টানা দুই ম্যাচ হেরে টটেনহামের এখন শীর্ষ চারে জায়গায় পাওয়াই ঝুলে আছে সুতোর ওপর। আর আর্সেনাল দুর্দান্ত গতিতে ছুটে টটেনহামকে প্রায় ধরেও ফেলছে। চারে থাকা আর্সেনাল পিছিয়ে আছে ৪ পয়েন্টে। নর্থ লন্ডন ডার্বিতে জিতে গেলে সেই ব্যবধান আর্সেনাল কমিয়ে আনবে ১ এ।
লাতসিও-রোমা
রবিবার, রাত ১.৩০ মিনিট
রেষারেষি শুরু : ১৯২৯ সাল
ডার্বির নাম : ডার্বি ডেল্লা কাপিতাল
হেড টু হেড : ১৭১ ম্যাচ, রোমার জয় ৬৫, লাতসিও ৪৫
রোমার শত্রু
জর্জিও চিনাগ্লিয়া আর পাওলো ডি ক্যানিও। দুইজনই রোমার বিপক্ষে গোল করার পর রোমার পাড় সমর্থকদের সামনে গিয়ে ব্যঙ্গাত্মক উদযাপন করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে চিনাগ্লিয়ার উদযাপনটা তো ইতালির ফুটবলের আইকনিক ছবিগুলোর একটি।
লাতসিওর শত্রু
রোমের রাজাই লাতসিওর সবচেয়ে বড় শত্রু। ফ্রাঞ্চেস্কো টট্টিকে ঘৃণা করতে হলে আপনাকে লাতসিও সমর্থকই হতে হবে। এই ফিক্সচারে সবচেয়ে বেশি গোল টট্টিরই, সেটাও একটা কারণ হতে পারত এই ঘৃণার। কিন্তু লাতসিও সমর্থকদের চটার কারণ আরও ভয়াবহ। বিভিন্ন সময় লাতসিওর বিপক্ষে গোল করে তাদের সমর্থকদের বেশ কয়েকবার তাঁতিয়ে দিয়েছিলেন টট্টি। গোল উদযাপনে "গেম ওভার", "তোমাদের আরেকবার হারিয়ে দিলাম"- জার্সির নিচে টিশার্টে লেখা এসব 'বাণী' দেখিয়ে লাতসিও সমর্থকদের চোখের বালি হয়েছেন টট্টি।
টেল অফ দ্যা সিটি
২০০৬ সালে লাতসিও ম্যানেজার ডেলিও রসি ডার্বি জিতলে শহরের জিয়ানিকোলো ঝরনায় ঝাঁপ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ম্যাচটা লাতসিওই জিতেছিল। কথাও রেখেছিলেন রসি। কিন্তু রোমা সমর্থকেরাও নিজেদের কাজটা সেরে রেখেছিল। ঝরনার পানিতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় ধরে মূত্র বিসর্জন করে রসিকে শুদ্ধ স্নান আর করতে দেননি রোমা সমর্থকেরা।
এবারের লড়াইয়ের মাহাত্ন্য কী?
দুইদলই চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে সিরি আর পয়েন্ট টেবিলের অবস্থা বলে দিচ্ছে, শেষ পর্যন্ত দুই ক্লাবের একটির পক্ষে হয়ত সম্ভব হবে চ্যাম্পিয়নস লিগে যাওয়ার। লাতসিওর হার অনেকটাই শেষ করে দেবে তাদের শীর্ষ চারের আশা।
রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা
রবিবার, রাত ১.৪৫ মিনিট
রেষারেষি শুরু : ১৯০২ সাল
ডার্বির নাম : এল ক্লাসিকো
হেড টু হেড : ২৪১ ম্যাচ, রিয়াল মাদ্রিদ ৯৫, বার্সেলোনা ৯৫
রিয়ালের শত্রু
লিওনেল মেসি। মাদ্রিদ সমর্থকদের কাছে এর চেয়ে সহজ প্রশ্ন আর হতেই পারে না। এই ফিক্সচারে সবচেয়ে বেশি গোল মেসিরই। বার্সাকে একাই টেনে নিচ্ছেন প্রায় এক যুগ ধরে। এখন বার্সা মাদ্রিদের সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে শিরোপার সংখ্যাতেও।
বার্সার শত্রু
বার্সেলোনা তাকে অধিনায়ক বানাতে চেয়েছিল। ন্যু ক্যাম্পে তাকে নিজেদের ছেলেই মনে করত। কিন্তু সেই ন্যু ক্যাম্পেই ঘৃণার পাত্র পরিণত হয়েছিল লুইস ফিগো। বার্সেলোনা থেকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মাদ্রিদে যোগ দিয়ে রীতিমত চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। হয়েছিলেন বললে অবশ্য ভুল হবে, এখনও ফিগোকে মন থেকেই ঘৃণা করে বার্সা সমর্থকেরা।
টেল অফ দ্যা সিটি
২০০২ সালে ফিগো ন্যু ক্যাম্পে ফিরেছিলেন বার্সার বিপক্ষে খেলতে। কর্নার নিতে যাচ্ছিলেন ফ্ল্যাগের দিকে। তখনই একটি শুকরের কাটা মাথা ছুড়ে মারা হয়েছিল গ্যালারি থেকে ফিগোর দিকে উদ্দেশ্যে করে। দুই ক্লাবের রাজনৈতিক আর ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ছাপিয়ে এই ঘটনাটাই আলাদা করে মনে করিয়ে দেয় এল ক্লাসিকোর তাৎপর্য!
এবারের লড়াইয়ের মাহাত্ম্য কী?
লা লিগায় বার্সার চেয়ে ৯ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে মাদ্রিদ। কোপা ডেল রে মাত্র তিনদিন আগেই বার্সার কাছে হেরেছে তারা। আরও একটি হার লিগ জয়ের সম্ভবনা শেষ তো করবেই, সঙ্গে হেড টু হেডেও পিছিয়ে দেবে মাদ্রিদিস্তাদের।
বেনফিকা-পোর্তো
রবিবার, রাত ২.৩০ মিনিট
ডার্বির নাম : ও ক্লাসিকো
হেড টু হেড : ২৩৪ ম্যাচ, পোর্তোর জয় ৯১ ম্যাচে, বেনফিকার ৮৪
বেনফিকার শত্রু
পোর্তোর প্রেসিডেন্ট হোর্হে নিনো পিন্তো। পোর্তোর আধুনিক সাফল্যের রুপকার তিনিই। ১৯৮২ সাল থেকে ক্লাব প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন পিন্তো। সেটা আবার বিশ্বরেকর্ডও। এই ভদ্রলোক চাকরি ছাড়লে বেনিফিকা আবার তাদের পুরনো গৌরব ফিরে পাবে বলে মনে করেন ক্লাবটির অনেক সমর্থক। বিভিন্ন সময় উস্কানিমূলক কথা বার্তা বলে পিন্তো তো তাদের কম দিন ধরে যন্ত্রণার কারণ হয়ে নেই!
পোর্তোর শত্রু
বেনফিকা কিংবদন্তী হোসে আগুয়াস। ১৯৫০ এর দশকে পোর্তোকে একাই ভুগিয়েছেন তিনি। ১৭ গোল করে এই ফিক্সচারে এখনও সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। পোর্তো ডিফেন্ডারকে তাকে আটকাতেই হিমশিত খেয়ে যেত সেসময়!
টেল অফ দ্যা সিটি
আগুয়াসের ছেলে রিও বাবার মতোই বেনিফিকার জার্সিতে একের পর এক গোল করতেন। কিন্তু ১৯৮৮ সালে তিনি হুট করেই পাড়ি জমান পোর্তোতে। দুই বছর সেখানে কাটিয়ে আবার বেনফিকাতেও ফেরত এসেছিলেন, কিন্তু বেনফিকা সমর্থকদের অনেকেই এখনও তাকে ক্ষমা করতে পারেননি!
এবারের লড়াইয়ের মাহাত্ম্য কী?
পর্তুগালের সবচেয়ে সফল দুই ক্লাবের লড়াই শিরোপার লড়াইও। দুই দলের পয়েন্ট ব্যবধান এক। শীর্ষে আছে পোর্তো।
এভারটন-লিভারপুল
রবিবার, রাত ১০.১৫ মিনিট
রেষারেষি শুরু : ১৮৯৪ সাল
ডার্বির নাম : মার্সিসাইড ডার্বি
হেড টু হেড : ২৩৪ ম্যাচ, লিভারপুল ৯৩, এভারটন ৬৬ জয়
এভারটনের শত্রু
শৈশবে এভারটন সমর্থক ছিলেন রবি ফাওলার। কিন্তু তরুণ হয়ে লিভারপুলে নাম লিখিয়ে এই স্ট্রাইকারকে বারবার সহ্য করতে হয়েছে প্রতিপক্ষের বিদ্রুপ।
লিভারপুলের শত্রু
সাবেক এভারটন ম্যানেজার ডেভিড ময়েস। তিনি দাবি করেছিলেন এভারটন গণমানুষের ক্লাব। ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ হয়নি কপদের!
টেল অফ দ্যা সিটি
দুই ক্লাবের রেষারেষি বহু পুরনো। তবে একটা ঘটনা আলাদা করা যায় সহজেই। অ্যানফিল্ড শুরুতে ছিল এভারটনের হোম গ্রাউন্ড। কিন্তু ১৮৯২ সালে লিভারপুলও যোগ দেয় সেই মাঠে, পরে এভারটনকে খুঁজতে হয়েছিল নতুন স্টেডিয়াম। এরপর থেকে লিভারপুলের ছায়াতেই দিন কেটেছে এভারটনের।
এবারের লড়াইয়ের মাহাত্ম্য কী?
লিভারপুলকে লিগ জয়ের পথে থেকে সরিয়ে দেওয়ার এর চেয়ে মোক্ষম সুযোগ আর কি হতে পারে এভারটনের জন্য?