দুই পেনাল্টি, এক লাল কার্ডে শেষ নর্থ লন্ডন ডার্বি
অ্যারন রামসের শেষ নর্থ লন্ডন ডার্বি ছিল ওয়েম্বলিতে। রামসে যতক্ষণ মাঠে ছিল ঠিক পথেই ছিল আর্সেনাল। ওয়েলশম্যানের একমাত্র গোলে টটেনহামের বিপক্ষে লিগ ডাবল জয়ের পথে ছিল উনাই এমেরির দল। টটেনহামকে আগের দুই ম্যাচের মতো দিশেহারাই মনে হচ্ছিল ততোক্ষণ। কিন্তু রামসেও মাঠ ছাড়লেন, এর কিছুক্ষণ পর ভাগ্যও মুখ ফিরে তাকাল টটেনহামের দিকে। টটেনহামের দরকার ছিল আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া। বিতর্কিত এক পেনাল্টি থেকে হ্যারি কেইন সমতা ফিরিয়েছিলেন ম্যাচে। কিন্তু ম্যাচটা যখন নর্থ লন্ডন ডার্বি, সেখানে তো নাটক হবেই। ঘটনা জমলোও শেষদিকে গিয়ে। রেফারির আরেকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আর্সেনালকে সুযোগ করে দিয়েছিল ম্যাচ জেতার। কিন্তু কয়েকদিন ধরে ধুঁকতে থাকা হুগো লরিস বীরত্বে আর জেতা হয়নি আর্সেনালের। পিয়ের এমেরিক অবামেয়াংও আর কেইন হয়ে উঠতে পারেননি। দুই পেনাল্টি আর এক লাল কার্ডের ম্যাচ শেষ পর্যন্ত শেষ হয়েছে ১-১ গোলে।
প্রায় পুরো ম্যাচ জুড়েই লং বলে হ্যারি কেইনকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছিল টটেনহাম। ফ্রি কিক থেকে প্রথমার্ধে একবার হেডে গোলও করেছিলেন কেইন, কিন্তু তখন অফসাইডের কারণে বাতিল হয়েছিল সেই গোল। ৭৩ মিনিটে প্রায় একই রকম জায়গা থেকেই ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন ফ্রি কিক নিলেন, এবার আর কেইন হেড করার সুযোগ পেলেন না। পেছন থেকে স্কদ্রান মুস্তাফির ধাক্কায় পড়ে গেলেন ডিবক্সের ভেতর। রেফারিও পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিলেন। ভুলটা করেছিলেন লাইনসম্যান। ওই আক্রমণেও অফসাইডেই ছিলেন কেইন। টটেনহামের ইংলিশ ফরোয়ার্ড অবশ্য আর ভুল করলেন না, প্রথমার্ধে দুর্দান্ত দুই সেভ করা বার্নড লেনোকে ভুল দিকে পাঠিয়ে স্পটকিক থেকে দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন ইংলিশ স্ট্রাইকার।
সমতায় ফেরার পর অবশ্য টটেনহামকে উজ্জীবিতও মনে হচ্ছিল বেশি। তবে দ্বিতীয় গোল পাওয়ার মতো আর সেরকম আক্রমণও করতে পারেনি তারা। উলটো ৯০ মিনিটে আর্সেনালকে পেনাল্টি দিয়ে তাদেরকেই জয়ের পথে এগিয়ে দিচ্ছিল টটেনহাম। অবামেয়াংকে করা ডেভিনসন সানচেজের ফাউলটা আর যাই হোক পেনাল্টি মনে হয়নি রিপ্লে দেখে। তবে মাঠের রেফারির সিদ্ধান্তটা কাজেও লাগাতে পারেনি আর্সেনাল। অবামেয়াং এর দূর্বল পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন লরিস। রিবাউন্ডেও সুযোগ ছিল অবামেয়াং এর সামনে। কিন্তু ওই একবার বল ক্লিয়ার করে শাপমোচন করেছেন সানচেজ।
নইলে সানচেজের ম্যাচটা হতে পারত দুঃস্বপ্নের মতো। আর্সেনালের প্রথম গোলে তাঁর ভুলটাই চোখে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। অ্যালেক্সান্ডার লাকাজেত নিজেদের অর্ধ থেকে লং বল পাঠিয়েছিলেন রামসের উদ্দেশ্যে। মিডফিল্ডে থাকা সানচেজ তখন বল ক্লিয়ার করতে ভুল করে, রামসেকে সোজা গোলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। এরপর ১৬ মিনিটে লরিসকে কাটিয়ে ফাঁকা বারে গোল করে আর্সেনালকে এগিয়ে নেন রামসে।
সেটা অবশ্য বিরতির সময় আর্সেনালের খুব বেশি আফসোসের কারণ হয়নি। কারণ ৪৪ মিনিটে দুর্দান্ত দুই সেভে বার্নড লেনোই তখনও নায়ক বনে ছিলেন ম্যাচে। কেইনের ক্রস থেকে প্রথমে ডিবক্সের ভেতর থেকে ভলি করেছিলেন এরিকসেন। সেই শট ঠেকানোর পর আরও দুর্দান্ত এক সেভে সিসিকোর শট ঠেকিয়ে দেন লেনো।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা চলছিল প্রায় প্রথমার্ধের মতো একই ধারায়। তবে এবার টটেনহামকে একটু বেশি তীক্ষ্ণ মনে হচ্ছিল আক্রমণে। যদিও ৫৩ মিনিটে লাকাজেত সুযোগ হাতছাড়া না করলে অনেক আগেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে পারত টটেনহাম। পরে লাকাজেতের জায়গায় নামা অবামেয়াংও হতাশই করেছেন আর্সেনাল সমর্থকদের। আর্সেনালের আরেক বদলি হতাশার কারণ হয়েছেন অন্য কারণে। লুকাস তোরেয়েরা আগেরবার গোল করেছিলেন টটেনহামের বিপক্ষে। এবার দেখলেন উলটো চিত্র। বদলি নেমে ইনজুরি সময়ে ড্যানি রোজকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন তিনি।
আর্সেনালের কাছে ঘরের মাঠে কখনোই হারেননি মাউরিসিও পচেত্তিনো। হারটা প্রায় দেখেই ফেলেছিলেন আজ। কিন্তু জন্মদিনটা আর শেষ পর্যন্ত অতো খারাপ কাটেনি টটেনহামের আর্জেন্টাইন ম্যানেজারের। এই ড্র টা আপাতত হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ দিচ্ছে তাকে। চারে থাকা আর্সেনালের সঙ্গে পয়েন্ট চার পয়েন্ট ব্যবধানটা ধরে রেখেছে টটেনহাম।