লুকাকুর ফেরার দিনে শীর্ষ চারে ইউনাইটেড
পুরো মৌসুমটা একেবারেই গড়পড়তা কেটেছে তার। চড়া দামে কেনা হলেও ২০১৮-১৯ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল একাদশে জায়গা অনেক আগেই হারিয়েছিলেন রোমেলু লুকাকু। আবার ফেরতও এসেছিলেন। এবার বোধ হয় জায়গা পাকাপাকিও করে ফেললেন। আবারও জোড়া গোল করেছেন তিনি। তার দুই গোলেই সাউদাম্পটনকে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
দারুণ সব গোল এবং উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে সাউদাম্পটনকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে সোলশারের দল। এর আগে টটেনহাম হটস্পার এবং আর্সেনালের ম্যাচ ড্র হওয়ায় শীর্ষ ৪-এ জায়গা ফিরে পেয়েছে ইউনাইটেডও।
মার্শিয়াল, লিনগার্ডরা না থাকলেও ম্যাচের শুরু থেকেই সাউদাম্পটনকে চেপে ধরেছিল ইউনাইটেড। ভাগ্য সহায় হলে ম্যাচের ৫ মিনিটেই দুই গোলের লিড নিতে পারত তারা। কিন্তু লুকাকুর ব্যর্থতা এবং 'সেইন্টস' গোলরক্ষক অ্যাঙ্গাস গানের দক্ষতায় লিড নিতে পারেনি ইউনাইটড। সুযোগ বুঝে সাউদাম্পটনও আক্রমণে নেমেছিল। জেমস ওয়ার্ড-প্রাউসের ক্রস থেকে ইয়ান ভেস্টারগার্ডের হেড চলে যায় ডেভিড ডি গেয়ার গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। এর মিনিট দুয়েক পর পেনাল্টির আবেদনও জানিয়েছিল রালফ হাসেনহুটেলের দল। ক্রিস স্মলিংয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে ডিবক্সে পড়ে গিয়েছিলেন সাউদাম্পটন লেফটব্যাক রায়ান বার্ট্রান্ড, কিন্তু রেফারি ছিলেন অনড়। তবে এজন্য খুব একটা ভুগতে হয়নি সাউদাম্পটনকে। আর গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার চড়া মাশুলই দিতে হয়েছে ইউনাইটেডকে। ২৬ মিনিটে স্ট্রাইকার চার্লি অস্টিনের পাস থেকে ডানপ্রান্তে বল পেয়ে যান ইয়ান ভ্যালেরি। ৩০ গজ দূর থেকে তার আগুনে শট ফেরানোর সাধ্য ছিল না ডি গিয়ারও। হাতে লাগালেও বলের গতির কাছে হার মানতে হয়েছে স্প্যানিশ গোলরক্ষককে।
গোলের পর সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে ইউনাইটেডও। ম্যাচের আধঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর বেশ কিছু সুযোগও পেয়েছিল ইউনাইটেড। ৩৪ মিনিটে সাজানো এক আক্রমণ থেকে র্যাশফোর্ড ও লুকাকুর দুইজনই গোল করতে পারতেন। কিন্তু কেউই ঠিকঠাক বলের নাগাল পাননি। এরপর একটি হেডের সুযোগও পেয়েছিলেন লুকাকু। মিনিট তিনেক পর ক্রিস স্মলিং অবশ্য আরও কাছে গিয়েছিলেন গোলের। কিন্তু তার হেড চলে গেছে বাইরে দিয়ে। প্রথমার্ধের শেষদিকে শ'য়ের ক্রস ডিবক্সে ভেস্টারগার্ডের হাতে লাগলেও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। সুযোগ মিসের মহড়ায় তাই পিছিয়ে পড়েই প্রথমার্ধ শেষ করতে হয়েছে ইউনাইটেডকে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আবারও ইউনাইটেডের জালে বল পাঠিয়েছিল সাউদাম্পটন। কিন্তু অস্টিন, অ্যাশলি ইয়ংকে ফাউল করায় বাতিল হয় গোলটি। প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধে আবারও পেনাল্টির আবেদন জানিয়েছিল সোলশারের দল। ইয়ংয়ের ক্রস ওয়ার্ড-প্রাউসের হাতে লাগলেও এবারও পেনাল্টি আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি।
৫১ মিনিটে হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ায় মাঠ ছাড়তে হয় অ্যালেক্সিস সানচেজকে। চিলিয়ান ফরোয়ার্ডের বদলে নামেন পর্তুগিজ ফুলব্যাক ডিয়েগো দালো। এরপর থেকেই স্বরূপে ফিরতে থাকে ইউনাইটেড। ৫২ মিনিটে দালোর ক্রসেই সমতায় ফিরতে পারত ইউনাইটেড, কিন্তু তার আবারও হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি রাশফোর্ড। তবে এজন্য খুব একটা ভুগতে হয়নি ইউনাইটেডকে। ৫৩ মিনিটে সেই দালোর পাস থেকেই বাঁ-প্রান্তে বল পান আন্দ্রেয়াস পেরেরা। দুই টাচ নিয়ে পেরেইরার দুর্দান্ত এক বাঁকানো শটে অবশেষে সমতায় ফেরে ইউনাইটেড। স্বস্তির নিঃশ্বাস এবং জোরাল উদযাপনে মুখরিত হয় ওল্ড ট্রাফোর্ড। উদযাপনে আসন ছেড়ে নেমে আসেন সোলশার নিজেও। ব্যবধান দ্বিগুণ করতেও খুব একটা সময় নেয়নি তারা। ৫৯ মিনিটে পেরেইরার বুদ্ধিদীপ্ত পাস নিয়ন্ত্রণে এনে ভেস্টারগার্ডকে দারুণভাবে কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন লুকাকু। এরপর ডান পায়ের ফিনিশে দলকে লিড এনে দেন লুকাকু। এবার আর কোনও স্বস্তির নিঃশ্বাস নয়, বুনো উদযাপনেই মাতে ওল্ড ট্রাফোর্ড। তবে উল্লাসটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি খুব একটা। পিছিয়ে পড়েই ম্যাচে ফেরার জন্যই প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে সাউদাম্পটন। অস্টিন, ভ্যালেরিদের সামলাতে কিছুটা হিমশিমই খেতে হয়েছে ইউনাইটেডকে। তবে উৎসবমুখর ওল্ড ট্রাফোর্ডে ঠিকই আবারও মৃত্যুপুরিতে পরিণত করেছিল সাউদাম্পটন। ৭৪ মিনিটে ডিবক্সের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে ওয়ার্ড-প্রাউসের চমৎকার ফ্রিকিকে সমতায় ফেরে সাউদাম্পটন। স্পার্স-আর্সেনালের ম্যাচটি ড্র হওয়ায় ইউনাইটেডের সামনে সুযোগ এসেছিল শীর্ষ চারে উঠার। ড্রয়ের দিকে ধাবমান ম্যাচ যেন সেই সম্ভাবনা শেষ করে দিচ্ছিল ইউনাইটেডের। কিন্তু তখনও শেষ হয়নি নাটকীয়তা।
প্রথমার্ধের 'জিরো' লুকাকু দ্বিতীয়ার্ধে দলকে লিড এনে দিয়ে বনে গিয়েছিলেন 'হিরো'। কিন্তু 'সেইন্টস'রা সমতায় ফেরায় লুকাকুর মিসের জন্যই হয়ত পুড়তে হত ইউনাইটেডকে। কিন্তু এমনটা আর হতে দেননি লুকাকু নিজেই। শেষদিকে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেছেন। ৮৮ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন লুকাকু।
হ্যাটট্রিকটা পেয়ে যেতে পারতেন বেলজিয়ান স্ট্রাইকার। সেই সুযোগ এসেছিল তার কাছেও। যোগ করা সময়ে পেনাল্টি পেয়েছিল ইউনাইটেড। তবে লুকাকু নয়, গানকে ১২ গজ থেকে পরাস্ত করতে এগিয়ে এসেছিলেন পল পগবা। কিন্তু দারুণ সেভে পগবাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন গান। খালি হাতে ফিরলেও নিজের সামর্থ্যের জানান ঠিকই দিয়েছেন সাউদাম্পটন গোলরক্ষক। আর রুদ্ধশ্বাস এক জয়ে শীর্ষ ৪-এ ফিরে এল ইউনাইটেড।