• লা লিগা
  • " />

     

    মেসির হ্যাটট্রিকে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে গেল বার্সা

    মেসির হ্যাটট্রিকে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে গেল বার্সা    

    গত সপ্তাহে অলিম্পিক লিঁওর বিপক্ষে বার্সেলোনার জয়ের মূল নায়ক ছিলেন তিনিই। ২ গোল, ২ অ্যাসিস্ট করে বার্সার চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছিলেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। সপ্তাহ বদলাল, বদলাল প্রতিপক্ষ। আর মেসি হয়ে গেলেন আগের চেয়েও বেশি বিধ্বংসী। স্তাদিও বেনিতো ভিয়ামারিনে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের হ্যাটট্রিকে রিয়াল বেটিসকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে বার্সা। অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের কাছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ হেরে যাওয়ায় লা লিগার শীর্ষস্থানে লিডটা ১০ পয়েন্টে নিয়ে গেল এর্নেস্তো ভালভার্দের দল।

    বেটিসের মাঠে ম্যাচের শুরু থেকেই মেসিকে মনে হচ্ছিল ভয়ঙ্কর। মেসি বল পেতেই তাকে মার্ক করতে ছুটে এসেছেন বেটিসের অন্তত তিনজন ডিফেন্ডার। তবে শুরুর দিকে মেসিকে আটকানোর কাজটা ভালমতই করেছিল কিকে সেটিয়েনের দল। ১৩ মিনিটে হোয়াকিনের ক্রসে গোলের সামনে থেকেও পা ছোঁয়াতে পারেননি সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড হেসে রদ্রিগেজ। বার্সার বিপক্ষে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করলে কী হয়, সেটা আবারও জানান দিল কাতালানরা।

    ১৮ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত ফ্রিকিকে দলকে লিড এনে দিয়েছিলেন মেসি। ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে এই মৌসুমে ফ্রি-কিক থেকে সর্বোচ্চ গোল এখন মেসিরই (৭)। গোলের পর থেকেই বেটিসকে চেপে ধরে বার্সা। প্রেসিং ফুটবলেও সার্জিও বুস্কেটসদের বিপাকে ফেলতে পারেনি বেটিস। প্রথমার্ধের শেষদিকে ঠিকই ব্যবধান দ্বিগুণ করেছে কাতালানরা।

     

     

    প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে লুইস সুয়ারেজকে পাস বাড়িয়ে ডিবক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। ডিফেন্ডারদের চার্জেও দুর্দান্ত এক ব্যাকহিলে ডিবক্সে থাকা মেসিকে খুঁজে পান সুয়ারেজ। তিনজন ডিফেন্ডার পেছন থেকে চাপে ফেলার চেষ্টা করলেও তাতে ভ্রূক্ষেপ করেননি 'লিও'। বাঁ-পায়ের টোকায় ঠিকই ব্যবধান দ্বিগুণ করেছেন তিনি।

    মৌসুমের শুরুর দিকে ন্যু ক্যাম্পে জিতে এসেছিল বেটিস। দ্বিতীয়ার্ধে হয়ত সেরকম কোনও রূপকথারই আশায় বুক বাঁধছিল তারা। ৫৬ মিনিটে ম্যাচে ফেরার সুযোগও পেয়েছিল বেটিস। কিন্তু বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টার স্টেগানকে একা পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি সদ্যই স্পেনের জাতীয় দলে প্রথমবারের মত ডাক পাওয়া সার্জিও ক্যানালেস। প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও মিসের চড়া মাশুলই দিতে হয়েছে বেটিসকে।

    ৬০ মিনিটে মেসির পাস থেকে বেটিস গোলরক্ষক লোপেজকে একা পেয়ে যান সুয়ারেজ। কিন্তু শট গোলে রাখতে পারেননি। মিনিটখানেক পর একেবারে 'কার্বন কপি', এবার মেসির জায়গায় ইভান রাকিটিচের থ্রু পাসে লোপেজকে একা পেয়ে গেলেন সুয়ারেজ। গোল করতে পারলেন না এবারও। তবে শাপমোচনের কাজটা দুর্দান্তভাবেই করেছেন তিনি।

     

     

    রক্ষণে হোয়াকিনের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে সুয়ারেজকে পাস বাড়ান জেরার্ড পিকে। মেসি তখন মাঝমাঠে, আক্রমণে বার্সার কেউ নেই। কিন্তু সুয়ারেজ থামলেন না। বেটিসের চারজন ডিফেন্ডারকে  কাটিয়ে লোপেজকে পরাস্ত করলেন তিনি। যেভাবে কাটিয়ে ডিবক্সে ঢুকে পড়েছিলেন, হুট করে দেখে অনেকেই হয়ত ভাবতে পারেন সুয়ারেজ নয়, বরং গোলটা এসেছে মেসির পা থেকেই। লা লিগার ইতিহাসে উরুগুয়াইনদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডে (ডিয়েগো ফোরলান, ১২৮) ভাগ বসালেন সুয়ারেজ।

    ৮১ মিনিটে অবশ্য ব্যবধান কমানোর সুযোগটা ঠিকই কাজে লাগিয়েছিল বেটিস। কর্নার থেকে বার্সা রক্ষণভাগের ভুলে নিচু শটে ব্যবধান ৩-১ করেন লরেন মোরোন। জয় নিশ্চিত জেনেও থেমে থাকেনি বার্সা। ৮৩ মিনিটে আর্তুরো ভিদালের জোরাল শট অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন লোপেজ। তবে ব্যবধান ঠিকই বাড়িয়েছে বার্সা।

     

     

    ৮৪ মিনিটে কর্নারের পর বাঁ-প্রান্তে বল পান রাকিটিচ। পাস বাড়ান মেসিকে। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই ডিবক্সের একেবারে সামনে থেকে চিপ করেন মেসি। লোপেজের মাথার ওপর দিয়ে ক্রসবারে লেগে বল জড়ায় বেটিসের জালে। মেসি পূরণ করেন হ্যাটট্রিক। বার্সা অধিনায়কের এই গোলের পর খোদ বেটিস সমর্থকেরাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন তাকে। 'মেসি! মেসি!!' চিৎকারে তখন স্তাদিও বেনিতো ভিয়ামারিন যেন পরিণত হয়েছে এক টুকরো ন্যু ক্যাম্পে। লা লিগার ইতিহাসে মেসির (৩৩) চেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক আছে কেবল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর (৩৪)। ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে এই মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (২৭), ডিবক্সের বাইরে থেকে সর্বোচ্চ গোল (৭)- দুটোই মেসিরই।

     

     

    মেসির দুর্দান্ত ফর্মে লা লিগার শিরোপা ঘরে তোলা এখন সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছে বার্সার। দলকে নিয়ে গেছেন কোপা ডেল রে ফাইনালেও। চ্যাম্পিয়নস লিগেরও অন্যতম দাবিদার এবার বার্সাই। আগের দুই 'ট্রেবল' জয়ের নায়ক ছিলেন তিনিই। মেসি যখন এমন ফর্মে, তখন তো 'ট্রেবল' জয়ের 'ট্রেবল' পূরণ করার স্বপ্ন দেখতেই পারে কাতালানরা।