ওয়ার্ন-শচীনের ক্রিকেট বিশ্বায়ন
গ্লেন ম্যাকগ্রা শেষবারের মতো বল হাতে উইকেট পানে ছুটেছিলেন ২০০৭ সালে। ওয়াসিম আকরাম তো যুগ কাল আগে, শেষ টেস্টটা খেলেছিলেন ২০০২ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে। সৌরভ, লক্ষণ, পন্টিং, হেইডেন, পলক, ক্যালিস, ক্লুজনার, লারা, অ্যাম্ব্রোস, সাঙ্গাকারা, মুরালিধরন, জয়াবর্ধনে, সাকলায়েন...ক্রিকেটের সোনালি সময়টা উপহার দিয়ে গেছেন তাঁরাই।
বলা বাহুল্য, তাঁদের সবাইকে এক মাঠে ব্যাট-বলের ঝড় তুলতে দেখাটা যে কোন ক্রিকেটপ্রেমীরই পরম আরাধ্য। কেমন হয় যদি ক্রিকেটের এই জীবন্ত কিংবদন্তীরা দুনিয়া ঘুরে ঘুরে বাইশ গজের দ্বৈরথের বিজ্ঞাপন শুরু করেন মাঠের খেলা দিয়েই? “লর্ড’স গেম”-এর দু’শ বছর পূর্তিতে এ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তেমনি এক সিরিজ। ‘ক্রিকেট অল স্টারস’ শিরোনামে তিন ম্যাচের টিটয়েন্টি সিরিজটিকে দুনিয়া জুড়ে ক্রিকেটকে নতুন করে ছড়িয়ে দেয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই নিতে চান আয়োজনের দুই প্রধান ‘আইকন’ শেন ওয়ার্ন ও শচীন টেন্ডুলকার।
আগামী ৭, ১১ ও ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় কুড়ি ওভারের ম্যাচ তিনটি হবে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, হাউসটন ও লস অ্যাঞ্জেলেসের তিনটি বেসবল স্টেডিয়ামে। ২৬ জন তারকা ক্রিকেটার মুখোমুখি হবেন ‘ওয়ার্ন ওয়ারিয়র্স’ ও ‘শচীন ব্লাস্টার্স’ নামে দুটো দলে ভাগ হয়ে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের আয়োজনে এই সিরিজের টিকিট বিক্রি শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে ৩০ হাজার টিকিট শেষ হয়ে যায়।
সাবেক তারকাদের এই জনপ্রিয়তাটুকু স্রেফ একটা টুর্নামেন্টে সীমাবদ্ধ না রেখে শেন ওয়ার্ন চাইছেন এটাকে ক্রিকেটের প্রসারে কাজে লাগাতে, “এমসিসি’র কাছ থেকে প্রস্তাবটা পাওয়ার পর আমার আর শচীনের মাথায় একই চিন্তা ভর করে। আমরা ভেবে দেখলাম এটাকে তো অন্যভাবেও কাজে লাগানো যায়। আয়োজনটা তো আমরা ধারাবাহিকভাবে দুনিয়া জুড়েই করতে পারি। লোকজনকে আমরা সুযোগ করে দিতে পারি নিজেদের প্রিয় তারকাকে খুব কাছ থেকে সরাসরি, স্বচক্ষে দেখবার।”
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও করে ফেলেছেন ওয়ার্ন, “আগামী তিন বছরে ১৫৬টা ম্যাচ খেলার জন্য আমরা ২৮ জন খেলোয়াড়কে বেঁছে নিয়েছি। খেলাগুলো আমেরিকার পর অন্যান্য দেশেও হবে। এসব নিয়ে এখনও কাজ চলছে। আমারা ইতোমধ্যেই কানাডা থেকে প্রস্তাব পেয়েছি, আবু ধাবি থেকে আমন্ত্রণ এসেছে। আশা করছি একদিন আমরা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত হয়ে প্রতিটা ক্রিকেট খেলুড়ে দেশেই যেতে পারব। তবে এই মুহূর্তে আমরা কেবলই আমেরিকা নিয়ে ভাবছি। এটা শেষ হোক, তারপরই পরবর্তী পদক্ষেপের প্রশ্ন আসবে।”
শচীন টেন্ডুলকারও আপাতত আমেরিকাতেই নজর সীমাবদ্ধ রাখতে চান, “খেলাধুলার প্রতি আমেরিকানদের আগ্রহ প্রশ্নাতীত। আমি মনে করি ক্রিকেটের মতো একটা খেলার এখান থেকে অবশ্যই অনেক কিছু নেয়ার আছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের বুকে ক্রিকেটের বীজটা এই সিরিজের মধ্য দিয়ে নতুন করেই বপন করে দিয়ে যেতে চান ভারতীয় কিংবদন্তী, “আমরা এখানে কিছুটা হলেও ক্রিকেটের প্রতি ভালোলাগা রেখে যেতে চাই। সেজন্যেই তো আমাদের এতদূর আসা- ভালোমানের ক্রিকেটে দর্শকরা বিনোদন পাক, তাঁদের মনে দাগ কেটে থাকুক। বেসবল ব্যাট, বাস্কেটবল আর ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট ব্যাটও একদিন আমেরিকায় আলাদা জায়গা করে নিলে সেটা হবে আক্ষরিক অর্থেই দারুণ কিছু।”
মনোনীত ক্রিকেটারদের মধ্যে ওয়াসিম-ম্যাকগ্রাদের মতো অনেকে যেমন দীর্ঘকাল আগে জার্সি তুলে রেখেছেন, সাঙ্গাকারা-ক্যালিসদের মতো কেউ কেউ আবার এখনও খেলছেন ঘরোয়া বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। তবে এটা বোঝাপড়ায় কোন সমস্যা করবে না বলেই মনে করছেন ওয়ার্ন, “হতে পারে তাঁদের লেভেলটা ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু আমরা তো এখানে বিশ্বের সব সেরা ক্রিকেটারদেরকেই নিয়ে আসছি। মাঠে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোন খাদ থাকবে না বলেই আমার বিশ্বাস। সবাই অনুশীলন করছে, রোমাঞ্চকর একটা কিছুই হতে যাচ্ছে আশা করি।”
শেন-শচীনের এই বিজ্ঞাপন যদি কাজে দেয়, ব্যবসায়িকভাবে যদি সিরিজটা লাভবান হয় তাহলে হয়তোবা ক্রিকেট বিশ্বায়নের নতুন যুগ শুরু হতে যাচ্ছে বলে। সে অগ্রযাত্রায় ব্যাট-বলের লড়াই মেরু থেকে মরু সর্বত্র ছড়িয়ে যাক, অনুরাগীরা সেটা চাইবেন খুব করেই।