ভেনেজুয়েলায় ভেঙে পড়ল মেসির আর্জেন্টিনা
নতুন জার্সি পরেছেন, দাড়িও কামিয়ে ফেলেছেন। নয় মাস পর হাতে নিয়েছেন জাতীয় দলের আর্মব্যান্ড। নতুন আরেকটা শুরুর অপেক্ষায় ছিলেন লিওনেল মেসি। এক সপ্তাহ আগে স্পেনেই মাঠ ছেড়েছিলেন প্রতিপক্ষ দলের করতালি পেয়ে। সপ্তাহ না ঘুরতেই পুরনো বাস্তবতার সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হলো আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। ফিরলেন ঠিকই, কিন্তু আর্জেন্টিনাকে ফেরাতে পারলেন না তিনিও। প্রীতি ম্যাচে ভেনেজুয়েলার কাছে ৩-১ গোলে হেরে গেছে আর্জেন্টিনা।
বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে সবশেষ খেলেছিলেন আর্জেন্টিনার হয়ে। এতোদিনে সেই দলটার চেহারাই পালটে গেছে। নতুন এক দলের অংশ হয়ে নেমেছিলেন মেসি। কিন্তু ফিরেও পুরনো দৃশ্যটাই আরও একবার দেখেছেন তিনি। স্পেনের ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে শুরু থেকেই আনকোরা আর্জেন্টিনাকে চমকে দিয়ে আক্রমণাত্মক শুরু করে ভেনেজুয়েলা। মেসির ফেরার ম্যাচে এগিয়ে যেতে ভেনেজুয়েলা সময় নিয়েছে মাত্র ৬ মিনিট। রোসালেসের মিডফিল্ড থেকে বাড়ানো লং বল ডিবক্সের ঠিক বাইরে প্রথম টাচে নিয়ন্ত্রণে আনেন সোলেমান রন্ডন। এরপর দারুণ এক ফিনিশে গোল করে আর্জেন্টিনাকে ভড়কে দেন নিউক্যাসেল স্ট্রাইকার।
আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি তিন জনের ব্যাকলাইন নামিয়ে খানিকটা চমক রেখেছিলেন শুরুতে। তার সেই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করেছেন ভেনেজুয়েলা। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটা সময়ই অগোছালো ছিল আর্জেন্টিনার রক্ষণ। মিডফিল্ডেও ছিল না কোনো নিয়ন্ত্রণ। এক মেসি আর লাউতারো মার্টিনেজ ছাড়া আর্জেন্টিনা দলের বাকি সবার মার্কিং করা হলে হয়ত পাস করবেন না কেউই!
এক গোল হজম করার পর মেসি অবশ্য নিজের কাজটাই করে গেছেন। দুইবার লাউতারো মার্টিনেজকে গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন প্রথমার্ধে। ইন্টার ফরোয়ার্ড একবার প্রতিহত হয়েছেন ২১ বছর বয়সী গোলরক্ষক ফারিনেজের কাছে। আরেকবার মেরেছেন ওপর দিয়ে। এসব কিছুর আগে নিজেও একবার সুযোগ তৈরি করে শেষ মুহুর্তে ডিফেন্ডার অসোরিওর ব্লকে আর গোল পাননি।
আক্রমণে যেমন তেমন, রক্ষণে আর্জেন্টিনার অবস্থা আরও খারাপ। ভেনেজুয়েলা যতবার আক্রমণে উঠেছে ততোবারই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে আর্জেন্টাইন রক্ষণ। একবার ত্রাতা হয়ে দলকে বাঁচিয়েছেন ফ্রাঙ্কো আর্মানি। ওয়ান অন ওয়ানে তিনি গোলবঞ্চিত করেছিলেন মাকিসকে। কিন্তু বেশিক্ষণ আর সেটা নিয়ে আফসোস করতে হয়নি ভেনেজুয়েলাকে। কুইক ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে বিরতির ঠিক আগে ডিবক্সের বাইরে থেকে ধনুকের মতো বাঁকানো শটে গোল করে জন মুরিয়ো দুই গোলে পিছিয়ে দেন আর্জেন্টিনাকে।
দলের অবস্থা ফেরাতে কৌশল বদলাতেই হত আর্জেন্টিনা কোচকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তিনটি বদল করেন স্কালোনি। তবে তারাও কোনো প্রভাব রাখতে পারেননি ম্যাচে। আর্জেন্টিনার অবশ্য আক্রমণে ধার বেড়েছিল খানিকটা, সেটাও সেই মেসির কল্যাণেই। সেই সুযোগে এক গোল শোধও করে তারা। ৫৯ মিনিটে মেসিই মিডফিল্ডে শুরু করেছিলেন আক্রমণ, এরপর বল বাড়িয়েছিলেন বাম দিকে লো সেলসোর কাছে। তার পাস ডিবক্সের ভেতর ঢুকে রিসিভ করে বাম পায়ের ফিনিশে লাউতারো মার্টিনেজই অবশেষে গোল করেন। কিন্তু এক গোল শোধ করার পর আর্জেন্টিনার যখন ম্যাচে ফেরার লড়াই করার কথা, তখন ঘটেছে উল্টোটা।
রক্ষণে হুয়ান ফয়েথ দুঃস্বপ্নের মতো এক ম্যাচ খেলেছেন। ৭৬ মিনিটে করলেন সবচেয়ে বড় ভুলটা। ডিবক্সের ভেতর তিনি ফাউল করে বসেন জোসেফ মার্টিনেজকে। রেফারির কাছে অবশ্য এর আগেও একবার পেনাল্টির আবেদন জানিয়েছিল ভেনেজুয়েলা। তখন লিয়ান্দ্রো পারেদেস ফাউল করেছিলেন মাকিসকে। সে দফায় পেনাল্টির বাঁশি না বাজালেও রেফারি এবার ঠিকই পেনাল্টি দিলেন ভেনেজুয়েলাকে। পরে মার্টিনেজই আর্মানিকে ভুলদিকে পাঠিয়ে স্পটকিক থেকে ব্যবধান ৩-১ করেন।
এরপর মেসির একটি ফ্রি কিক অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করেছে, দারিও বেনেদেত্তোর হেডও লক্ষ্যে পৌঁছায়নি। পাউলো দিবালা মাঠে নামারই সুযোগ পাননি। আর্জেন্টিনারও আর ফেরা হয়নি বাকি সময়ে।কোপা আমেরিকার কয়েক মাস বাকি থাকতে তাই বড় আরেক ধাক্কা খেল আর্জেন্টিনা। মেসিও ফিরে পারলেন না দলের হাল ধরতে। এই দলটার কতোখানি সামর্থ্য আছে, আর কোচই বা কতোখানি যোগ্যতাসম্পন্ন- পুরনো সেই প্রশ্নগুলো তাই থেকে গেল আরও একবার। আর এসব প্রশ্ন ছাপিয়ে আরও একবার ব্যর্থ হয়ে মাঠ ছাড়তে হলো 'আর্জেন্টিনার' মেসিকে।
আর্জেন্টিনা একাদশ
আর্মানি, মন্তিয়েল, ফয়েথ, মের্কাদো, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, টালিয়াফিকো, লো সেলসো, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, মেসি, লাউতারো মার্টিনেজ, গঞ্জালো মার্টিনেজ