মেসি দুই, এস্পানিওল শূন্য
ফ্রি কিক থেকে পানেনকা মারার আত্মবিশ্বাসটা এই মুহুর্তে কারও থেকে থাকলে সেটা তারই ছিল। ডিবক্সের ঠিক বাইরে ৭১ মিনিটে পেয়েছিলেন ফ্রি কিক। ওয়াল মজবুত করতে এস্পানিওল সময়ও নিল খানিকটা বেশি। লিওনেল মেসি ততোক্ষণ বলের সামনেই ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। রেফারির বাঁশির পর বাম পা দিয়ে কেবল বলটা মানব দেওয়ালের ওপর দিয়ে তুলে দিলেন। গোললাইনের সামনে ছিলেন ভিক্টর সানচেজ, তার সামনে সতীর্থদের দেওয়াল। ধন্ধে পড়ে গিয়ে নিজেই হেড করে বল ঢুকিয়ে দিলেন নিজের গোলে। গোলরক্ষক ডিয়েগো লোপেজ ঝাঁপ দিয়েও তাই কিছু করতে পারেননি।
মেসির অদ্ভুত ওই গোলে ডেডলক ভাঙে কাতালান ডার্বির। এরপর শেষদিকে আরও একবার স্কোরশিটে নাম লিখিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন মেসি। এস্পানিওলের বিপক্ষে বার্সার জয়টা তাই ২-০ গোলে। এই নিয়ে লা লিগায় শেষ ১৫ ম্যাচে মেসির গোল দাঁড়াল ২২টি! মৌসুমে ৪০ গোলের মাইলফলকও ছোঁয়া হয়ে গেছে মেসির প্রথম গোলের পরই। টানা দশ মৌসুম ধরে ধারাটা অব্যাহত রাখলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
ন্যু ক্যাম্পে ম্যাচটা কঠিন হলেও শুরুটা দাপটের সঙ্গেই করেছিল বার্সা। প্রথমার্ধে কেবল নিজেদের দোষেই লিডে যেতে পারেননি মেসিরা। দায়টাও বার্সা অধিনায়কের কম নয়। ৯ মিনিটে স্বভাব বিরুদ্ধ এক মিস করেছেন তিনি। দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে একটু দেরি করে করা মেসির শট এস্পানিওল ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে চলে যায় বাইরে দিয়ে। মেসি-সুয়ারেজের সঙ্গে বার্সার আক্রমণে নেমেছিলেন কৌতিনহো। ১৮ মিনিটে সেমেদোর ক্রসটা পা ছোঁয়াতে পারলেই দারুণ কিছু হতে পারত, কিন্তু নাগাল পাননি সে দফায়। ম্যাচের বয়স যখন আধঘণ্টা তখন মেসির একটি ফ্রি কিক আত্মঘাতী গোলে পরিণত হতে পারত। তবে গোলরক্ষক লোপেজ সে দফায় ছিলেন সজাগ। প্রথমার্ধে তাই বার্সাকে আটকেই রেখেছিল এস্পানিওল।
বিরতির পর ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকা এস্পানিওলের বিপক্ষে নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি করতেই সমস্যা হচ্ছিল বার্সার। কৌতিনহো একবার মেরেছেন ওপর দিয়ে, আরেকবার ম্যালকমও বুদ্ধি করে শট করেছিলেন, কিন্তু লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। তবে ম্যালকমের সংযোজনটা ম্যাচের ঘণ্টাখানেক পর বার্সার আক্রমণে ধারই বাড়িয়েছিল। পরে ৭১ মিনিটে ম্যাচের তৃতীয় ফ্রি কিক থেকে গোল করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন মেসি। এস্পানিওলের বিপক্ষে ফ্রি কিক থেকে মেসি গোল করলেন এই নিয়ে ছয়বার।
শেষদিকে অবশ্য এস্পানিওল চোখ রাঙাচ্ছিল বার্সাকে। ক্লেমেন্ত ল্যাংলেট বেশ কয়েকবার বার্সাকে বাঁচিয়েছেন। ৮০ মিনিটে করলেন ম্যাচ বাঁচানো এক ব্লক। সেটাকে পুঁজি করেই শেষদিকে ম্যাচে বার্সার জয় নিশ্চিত করেছেন মেসি। মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের বাড়ানো বল থেকে আক্রমণের শুরু। এরপর মিডফিল্ড থেকে বাম প্রান্তে বল পান ম্যালকম। ডিবক্সের ভেতর করলেন মাইনাস, মেসি পেছন থেকে দৌড়ে গিয়ে বাম পায়ের বাঁকানো ফিনিশে করলেন দ্বিতীয় গোলটি। একেবারে টেক্সটবুক ফিনিশ!
সবকিছু যেদিন মেসির পক্ষে গেছে, সেদিন ভাগ্যও আর মুখ ফিরিয়ে নেয়নি মেসির ওপর থেকে। নইলে ওই জোড়া গোলের পর ন্যু ক্যাম্পে লাল কার্ড দেখেও মাঠ ছাড়তে হতে পারত মেসিকে। এস্তেবান গ্রানেরোকে ম্যাচের শেষদিকে বল দখলের সময় লাথি মেরে বসেছিলেন বার্সা অধিনায়ক, রেফারি ফাউল দিলেও আর এর চেয়ে বেশি কিছু করেননি! নইলে ম্যাচের শিরোনাম হয়ে যেতে পারতেন তিনিও।