আরও একবার উলভসের শিকার ইউনাইটেড
এফএ কাপে হারের পর মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে লিগেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে মেনে নিতে হলো একই ভাগ্য। উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে এবারের হারে ক্ষত হলো আরও বড়। চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার যে আশা দেখাচ্ছিলেন ওলে গানার সোলশার, সেটাই যেন মিলিয়ে যেতে বসেছে। মলিনেক্স স্টেডিয়ামে উলভসের কাছে ম্যান ইউনাইটেড হেরেছে ২-১ গোলে।
১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর ম্যাচের ১৩ মিনিট বাকি থাকতে ক্রিস স্মলিং করেছেন আত্মঘাতী গোল। সেটাই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে দুইদলের। প্রিমিয়ার লিগে ৬ ম্যাচ বাকি থাকতে ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে তাই ইউনাইটেড থাকল পয়েন্ট তালিকার পাঁচেই। তবে চেলসি পরের ম্যাচ জিতে গেলে ইউনাইটেডকে নেমে যেতে হবে আরও এক ধাপ।
ইউনাইটেডের নতুন ম্যানেজার ওলে গানার সোলশার স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন বাকি ৭ ম্যাচ শেষে ৭৬ পয়েন্ট হলেই চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা পাবে তার দল। ৭ ম্যাচের প্রথমটাতে দুর্দান্ত শুরুর পর ৩ পয়েন্টের আশাও করছিলেন সোলশার। ৫ মিনিটেই রোমেলু লুকাকু গোল পেতে পারতেন। ডিয়েগো দালোর দারুণ একটা ক্রস সিক্স ইয়ার্ড বক্সের ভেতর থেকে হেড করেছিলেন, কিন্তু গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও বরাবর সোজা মেরেছিলেন। তাই গোল পাননি। কিন্তু তাতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে ইউনাটেডের। এর কিছুক্ষণ পরই ডিবক্সের বাইরে থেকে গ্রাউন্ড শটে গোল করে স্কট ম্যাকটমিনে এগিয়ে নেন ইউনাইটেডকে। দুই মিনিট পর একাদশে ফেরা জেসি লিনগার্ড ব্যবধান দ্বিগুণ করতে গিয়েও শেষে প্যাট্রিসিওর দারুণ এক সেভে গোলবঞ্চিত হয়ে ফেরেন। এসব কিছুই হয়েছে ম্যাচের ১৫ মিনিটের মধ্যেই।
কিন্তু এমন শুরুর পরও ভুল এড়াতে পারেনি ইউনাইটেড। ডেভিড ডি গিয়া শর্ট পাসে খেলা বিল্ড আপের চেষ্টা করছিলেন। তিনিই পাস দিয়েছিলেন সামনে থাকা ফ্রেডকে। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার বলেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপদে ফেলে দেন দলকে। রাউল হিমেনেজের থ্রু বল ধরে এরপর ডিয়েগো জোতা এফএ কাপ কোয়ার্টার ফাইনালের পর আরও একবার গোল করেন ইউনাইটেডের বিপক্ষে।
পয়েন্ট তালিকার সাত নম্বরে থাকলেও শেষ দুই মাসে উলভস লিগে জয় পেয়েছে মাত্র একবার। পরের সপ্তাহেই এফএ কাপের সেমিফাইনালেও খেলতে হবে তাদের। এই ম্যাচটা তাই ইউনাইটেডের পক্ষেই ছিল। ১-১ এ সমতায় যাওয়ার পরও বিরতির সময় খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ ছিল না সোলশারের। তবে আফসোস করেছেন ঠিকই, প্রথমার্ধের একেবারে শেষদিকে লুকাকুর ডান পায়ের শট বারপোস্টে শিস বাজিয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ার্ধে সোলশারের আফসোস পরে পরিণত হয়েছে হতাশায়। এবারও শুরুটা ভালোই করেছিল তার দল। কিন্তু সেই প্যাট্রিসিও বাধাই এবার পার করতে পারলেন না ম্যাকটিমিনেও। ৫৫ মিনিটে লুকাকুর ক্রস থেকে তার হেড দুর্দান্ত এক সেভে ফিরিয়ে দেন উলভস গোলরক্ষক। ইউনাইটেডের আধিপত্যও শেষ ওখানেই। এর কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন অ্যাশলি ইয়াং। এর ৫ মিনিট আগে দেখেছিলেন প্রথম হলুদ কার্ড। জোতাকে ফাউল করার দায়ে দেখেন লাল কার্ড।
১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর খেই হারিয়ে ফেলে ইউনাইটেডও। উলভস তখন ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠে দ্বিতীয় গোলের জন্য। ডি গিয়াও স্বভাববিরুদ্ধ এক ভুল করে বসেছিলেন, অবশ্য বেঁচে গেছেন। কিন্তু স্মলিং আর বাঁচতে পারেননি।
দ্বিতীয়ার্ধে তখন পর্যন্তও একবারও ইউনাইটেডের গোলে শট করতে পারেনি উলভস। কিন্তু মৌটিনহোর একটা ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে গড়বড় পাকিয়ে ফেলল ইউনাইটেডের রক্ষণ। সবগুলো ভুলের শেষ ভুলটা স্মলিংয়ের, তাই আত্মঘাতী গোলটাও তারই। ডি গিয়া না থাকলে অবশ্য আরও একবার স্কোরশিটে নাম লেখাতে হত স্মলিংকে। ৯০ মিনিটে সে দফায় সতীর্থকে আত্মঘাতী গোলের হাত থেকে রক্ষা করেছেন ইউনাইটেড কিপার।
কিন্তু মার্কোস র্যাশফোর্ড বিহীন ইউনাইটেডকে আর সেখান থেকে উঠে আসা হয়নি। অ্যান্থনি মার্শিয়ালকেও বাজিয়ে দেখেছিলেন সোলশার। কিন্তু তাতেও ফল পাননি। উলটো শেষদিকে ইভান কাভায়েরি বারপোস্টের কারণে গোলবঞ্চিত না হলে হারের ব্যবধানটা বাড়ত ইউনাইটেডের। চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার স্বপ্ন ধাক্কা খেয়েছে ইউনাইটেডের, কিন্তু এই জয়ের পর ইউরোপা লিগের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে উলভসের। ১৯৮০ সালের পর এবারই প্রথম এক মৌসুমে ইউনাইটেডের বিপক্ষে দুইবার জিতল তারা।