• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    মেসি, রোনালদোর দুইরকম ফেরার রাত

    মেসি, রোনালদোর দুইরকম ফেরার রাত    

    মেসির মিশন পসিবল? 

    ২০০৭-০৮ মৌসুমে লিওনেল মেসির বয়স ছিল ২০। ঘাড় বেয়ে নেমে আসা লম্বা চুলের মেসি সেবার শেষবারের মতো ওল্ড ট্রাফোর্ডে এসেছিলেন বার্সেলোনার জার্সিতে। চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগটা বার্সা হেরেছিল ১-০ গোলে। ওই মৌসুমের পর বার্সা থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড। আর ওই মৌসুমে শেষবার ইউরোপ সেরার মুকুট পরেছিল ম্যান ইউনাইটেড।

    ওই বয়সেও মেসির বিপক্ষে খেলা ফুটবলাররা ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন মেসির মাহাত্ম্যের। পরের মৌসুমে সব ঐশীবানী বাস্তবে রূপান্তর করেছিলেন মেসি। ইউনাইটেডকে ঘায়েল করেই শুরু। এরপর আরও একবার ইউনাইটেডকে শিরোপাবঞ্চিত করেছেন তিনি। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। 

    পল স্কোলসের গোলে ওল্ড ট্রাফোর্ডের ওই হারটা মেসির ক্যারিয়ার গ্রাফের উত্থানের আগে সবশেষ বিন্দু। ওই মৌসুমে করেছিলেন ১৬ গোল। এক লাফে পরেরবার সেটা নিয়ে গেলেন ৩৬ এ।আর এখন তো গড়ে ৪০-৫০ গোল করা অভ্যাসেই পরিণত করেছেন।  

    মেসি যেমন তরতর করে উঠেছিলেন, ইউনাইটেডে ঘটেছে উলটোটা। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের বিদায়ের পর থেকে রঙ হারিয়েছে রেড ডেভিলরা। পুরনো লড়াইয়ে তাই বার্সাই পরিষ্কার ফেভারিট। কিন্তু মেসির জন্য সেটাও একটা চ্যালেঞ্জ। তিনি নেমেছেন নতুন মিশনে।

    অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে লা লিগার শিরোপা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে বার্সেলোনা। এখন পুরো মনোযোগ এই শিরোপার দিকে। অধিনায়কত্ব নিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, বড় কানওয়ালা শিরোপাটা এবার ঘরে নিয়ে আসতে চান তিনি। ওই শিরোপাটা অনেকদিন ধরেই তো ছুঁয়ে দেখা হয় না তার। 

    গতবছর মেসির প্রিয় সতীর্থ কার্লোস পুয়োল মাদ্রিদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের চ্যাম্পিয়নস লিগের হ্যাটট্রিক পূরণ করার পর আক্ষেপ করেছিলেন- মেসির মতো খেলোয়াড় দলে থাকার পূর্ণ সুবিধা বার্সা আদায় করতে পারছে না বলে। আক্ষেপটা যে মেসির নিজেরও সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মৌসুম শুরুর আগে ন্যু ক্যাম্পে দেওয়া ওই ঘোষণায়।

    শেষ তিনবার কোয়ার্টার ফাইনাল বাধাই পার হতে পারেনি মেসির বার্সা। পরের রাউন্ডে যাওয়ার তাড়না তো আছেই। সঙ্গে আছে মেসির কোয়ার্টার ফাইনালে গোলখরা ঘোচানোর তেষ্টাও। যেসব জায়গায় খেলেছেন  প্রায় স্টেডিয়ামে গোল করেছেন মেসি। ওল্ড ট্রাফোর্ড আর অ্যানফিল্ড গুটিকয়েক স্টেডিয়ামের মধ্যে দুইটি, যেখানে গোল নেই তার। কোয়ার্টার ফাইনাল উতরে গেলে বার্সার প্রতিপক্ষ সেই লিভারপুলই। এ দফায় দুই তাই সেই আক্ষেপটা ঘুচিয়ে ফেলার সুযোগ থাকছে মেসির সামনে।       
    লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা, চ্যাম্পিয়নস লিগেও তাই। মেসির এই দুর্দান্ত ফর্ম পুঁজি করে এবার পারবে বার্সা? দ্বিতীয় রাউন্ডে অলিম্পিক লিঁও বড় বাধা ছিল না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বর্তমান ফর্মও তাদের পক্ষে কথা বলছে না। কিন্তু পিএসজির বিপক্ষে তাদের লড়াইটা দুশ্চিন্তার কারণ বার্সার জন্য। যে মিশনে মেসি নেমেছিলেন একেবারে মৌসুমের শুরুতে, সেটা তাই শুরু হচ্ছে ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকেই। যেখানে শেষটা হয়েছিল, সেখান থেকেই আরেকটা নতুন মিশন শুরু মেসির।   
       

    আয়াক্সকে হারাতে রোনালদোকে দরকার হবে জুভেন্টাসের?

    চ্যাম্পিয়নস লিগ নক আউট পর্বে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কোন ধাতুতে গড়া সেটা বুঝতে বাকি নেই কারও। বয়স ৩৪ হয়ে গেলেও, প্রতিবার নতুন করে চেনাচ্ছেন নিজেকে। অনন্য সব কীর্তি গড়ছেন। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে যেভাবে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে জুভেন্টাস, এরপর কি আর পা হড়কাবে তারা? কোয়ার্টার ফাইনালের প্রতিপক্ষও তুলনামূলক সহজ। মাদ্রিদকে হারিয়ে ওঠা আয়াক্সের আরেকটা রূপকথা রচনা করার সেই সামর্থ্য আছে কী না সেটা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। দলের বিচারে তো যোজন এগিয়ে মাসসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির দল। 

    এই জানা কথাগুলোর সবগুলো ফলে গেলে অবশ্য মাঠের খেলা সীমাবদ্ধ থাকত কেবল কাগজে কলমেই। তবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে অ্যালেগ্রির একটু দূরদর্শীই হতে হবে এই জায়গাটায়। পর্তুগালের হয়ে খেলতে গিয়ে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন রোনালদো। শারীরিক দিক দিয়ে রোনালদো ৩৪ বছর বয়সেও দারুণ। মিলানের বিপক্ষে শেষ লিগ ম্যাচেও নামতে চেয়েছিলেন রোনালদো, জুভেন্টাসের ডিরেক্টর ও সাবেক ফুটবলার পাভেল নেদভেদ জানিয়েছিলেন সেটা। আয়াক্সের বিপক্ষে রোনালদো তাই বসিয়ে রাখাও কঠিন অ্যালেগ্রির জন্য। 

    কিন্তু ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে একটা সুযোগ নিয়েই দেখতে পারেন অ্যালেগ্রি। আরও একবার ইনজুরিতে পড়লে পুরো মৌসুমটাই শেষ হয়ে যেতে পারে রোনালদোর। তাকে নিয়ে ঝুঁকিটা নেবেন? নাকি বের্নাদেস্কি, দিবালাদের ওপরই ভরসাটা রাখবেন? প্রথম লেগের পর তো সুযোগ থাকছে তুরিনের দ্বিতীয় লেগেও। ততোদিনে ফিটনেস পুরোপুরি ফিরে পাওয়ার কথা রোনালদোর।

     

     

    তবে রোনালদো কি মানবেন সেটা? চ্যাম্পিয়নস লিগের কোনো পর্বের প্রতি রোনালদোর বিশেষ আকর্ষণ থাকলে সেটা কোয়ার্টার ফাইনলই। ২০ ম্যাচে করেছেন ২৩ গোল! আর রোনালদোর যে একাগ্রতা, তাতে তাকে দমানোও কঠিন। কিন্তু অ্যালেগ্রি শেষ পর্যন্ত কোনটা করবেন সেটা তিনিই ভালো জানেন। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে অতিমানবীয় ওই হ্যাটট্রিকের পর আর জুভেন্টাসের হয়ে খেলতে নামেননি রোনালদো। আয়াক্সের বিপক্ষে যদি ফেরেনই, সেটাও হবে অন্যরকম! এই বয়সেও এমন ইনজুরি থেকে এতো দ্রুত সেরে ওঠা যায়- সেটা প্রমাণ করে ফেরা।