রোনালদোর ফেরার রাতে আশা বাঁচিয়ে রাখল আয়াক্স
গত সপ্তাহ দুয়েক ধরেই আজকের ম্যাচের পাদপ্রদীপের আলোর পুরোটাই ছিল তার উপরেই। ইনজুরিতে পড়া ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর খেলা নিয়েই ছিল যত জল্পনা-কল্পনা। রোনালদো খেললেন, ইনজুরি থেকে ফিরলেন তার মত করেই। আয়াক্সের বিপক্ষে ফিরেই জাল খুঁজে পেয়েছেন পর্তুগিজ অধিনায়ক। কিন্তু রাতের পুরো আলোটা রোনালদোর হতে দেননি ডেভিড নেরেস। ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনাতে ১-১ গোলে শেষ হয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগ।
ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনাতে আজকের ম্যাচের সাথে অনেকেই হয়ত চ্যাম্পিয়নস লিগে আয়াক্সের শেষ 'হোম' ম্যাচের মিল খুঁজে পাবেন অনায়াসেই। রিয়াল মাদ্রিদের মত আজ জুভেন্টাসের বিপক্ষেও শুরুটা দারুণই হয়েছিল আয়াক্সের। এরিক টেন হাগের তারুণ্যনির্ভর আয়াক্সের ট্রেডমার্ক প্রেসিং ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদের মত হিমশিম খেয়েছে জুভেন্টাসও। ১২ মিনিটেই লিড নিতে পারত আয়াক্স। ডিবক্সের বাইরে থেকে শেষ ষোলতে আয়াক্সের নায়ক হাকিম জিয়েচের বাঁকানো শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন জুভেন্টাস গোলরক্ষক ওয়েচেক শেজনি। ১৮ মিনিটে যেন 'কার্বন কপি', ডিবক্সের বাইরে থেকে জিয়েচের আরেকটি বাঁকানো শট ফিরিয়ে দেন শেজনি।
তবে ২৫ মিনিটে প্রথমার্ধে নিজেদের সেরা সুযোগটা পেয়েছিল ডাচরা। কিন্তু দুসান তাদিচের ক্রসে ডিবক্সে বল নিয়ন্ত্রণে এনেও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ভ্যান ডি বিক। রোনালদোর গোলে রিয়ালের মত জুভেন্টাসের বিপক্ষেও মিসের চড়া মাশুল দিতে হয়েছে আয়াক্সকে। প্রথমার্ধের একেবারে ৪৫ মিনিটে হোয়াও ক্যান্সেলোর ক্রসে আয়াক্সের তিন ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে হেড করে দলকে লিড এনে দেন রোনালদো। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটে খেলা ২১ ম্যাচে রোনালদোর গোলসংখ্যা এখন ২৪।
এতক্ষণের সরব ক্রুইফ অ্যারেনা তখন নিস্তব্ধ। কেবল শোনা যাচ্ছিল রোনালদোর এবং জুভেন্টাস সমর্থকদের উদযাপনের ধ্বনি। মনোবল না হারানোতে যেন পারদর্শী এই আয়াক্সের তরুণ দল। পিছিয়ে পড়লেও হাল ছাড়েনি তারা। ফলাফল? দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতায় ফিরল ডাচরা।
৪৬ মিনিটে ড্যানিয়েল রুগানির ভুলে বল পেয়ে যান নেরেস। ডিবক্সে ঢুকেই ডানপায়ের বাঁকানো শটে শেজনিকে পরাস্ত করেন তিনি। গলার জোর ফিরে পায় আয়াক্স সমর্থকেরা, প্রেসিং ফুটবলে মাঠে আবারও জুভেন্টাসকে চেপে ধরে তারা। ৫১ মিনিটে আবারও জুভেন্টাসের জালে বল পাঠিয়েছিলেন নেরেস, কিন্তু অফসাইডের কারণে লিডটা আর নেওয়া হয়নি। তবে আয়াক্স থেমে থাকেনি।
নেরেস-জিয়েচ জুটিতে ৬২ মিনিটেই লিড নিতে পারত আয়াক্স, কিন্তু অ্যালেক্স সান্দ্রোর দুর্দান্ত ব্লকে সে যাত্রায় বেঁচে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ বেশি এসেছে আয়াক্সের থেকেই। পাউলো দিবালাকে নামিয়ে দিয়েও মাথিয়াস ডি লিটদের তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি মাসিমিলিয়ান আলেগ্রির দল। শেষদিকে আরেকটু হলেই জয়সূচক গোলের দেখা পেয়ে যেত আয়াক্স। ৮২ মিনিটে তাদিচের ব্যাকহিল থেকে এক্কেলেঙ্ক্যাম্পের শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন শেজনি। রোনালদোর ‘অ্যাওয়ে’ গোল থাকলেও আজকের ম্যাচে জুভেন্টাসের অন্যতম পার্শ্বনায়ক পোলিশ গোলরক্ষকই।
শেষ পর্যন্ত সমতায়ই শেষ হল প্রথম লেগ। ‘অ্যাওয়ে’ গোল পেয়ে হয়ত আত্মবিশ্বাসটা বেশিই থাকবে জুভেন্টাসের। আর আয়াক্সের অনুপ্রেরণা থাকবে শেষ ষোলতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দ্বিতীয় লেগ। তবে তুরিনে জুভেন্টাসের বিপক্ষে সেই পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি কি করতে পারবে আয়াক্স?