ওল্ড ট্রাফোর্ডে ভাগ্য গড়ে দিল আত্মঘাতী গোল
ওল্ড ট্রাফোর্ডের টানেল দিয়ে বের হওয়ার সময় হতাশাই ভর করার কথা পগবা-র্যাশফোর্ডদের। রাতভর হয়ত হিসাব-নিকাশ মেলাবেন তারা, বার্সেলোনার বিপক্ষে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু এক আত্মঘাতী গোলে দুর্ভাগ্য নিয়ে ফিরতে হয়েছে। আর হাপ ছেড়ে বাঁচা বার্সেলোনা ম্যাচ শেষের বাঁশির সঙ্গে স্বস্তি পেয়েছে ওল্ড ট্রাফোর্ডে। মেসিরা ভালো করেই জানেন, পার পেয়ে গেছেন তারা। লুক শ এর আত্মঘাতী গোলে ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে ম্যাচের। বার্সেলোনা পেয়ে গেছে মহামূল্যবান অ্যাওয়ে গোল। ন্যু ক্যাম্পের দ্বিতীয় লেগের আগে তাই এগিয়েই থাকল তারা।
তিন বছর ধরে চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল না পাওয়ার হতাশা ভুলতে সময় লাগেনি বার্সার। ১৩ মিনিটেই গোলটা পেয়ে গিয়েছিল তারা। সার্জিও বুস্কেটস মিডফিল্ড থেকে লব করেছিলেন ডিবক্সের ভেতর। লিওনেল মেসি এরপর ডিবক্সের ভেতর ডানদিক থেকে ক্রস করেছিলেন ফারপোস্টে। লুইস সুয়ারেজের হেড শ'এর বাহুতে লেগে দিক পরিবর্তন করে গোললাইন অতিক্রম করার পর সহকারি রেফারি অবশ্য অফসাইডের সংকেত দিয়েছিলেন। কিন্তু ভিএআরে হাসি ফেরে বার্সার, দেরীতে হলেও উদযাপনে ভাটা পড়েনি সুয়ারেজের।
শ এর ওই গোল ম্যান ইউনাইটেডকে বানিয়ে দিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আত্মঘাতী গোল করা দল। আর তাতে এবারের আসরে বার্সার পাওয়া আত্মঘাতী গোলের সংখ্যা দাঁড়াল ৬! মেসির পর বার্সার সর্বোচ্চ গোলের উৎসও সেটাই।
গোল হজম করে হুশ ফেরে ম্যান ইউনাইটেডের। এর আগ পর্যন্ত নিজেদের অর্ধেই আঁটোসাটো হয়ে বসেছিল রেড ডেভিলরা। কিন্তু এরপর বার্সাকে প্রেস করে তাদের ছন্দটাই এলোমেলো করে দেয় ওলে গানার সোলশারের দল। চাপে পড়ে স্বভাববিরুদ্ধভাবে ডিফেন্সে বেশ কয়েকবার বলও হারিয়েছিল বার্সা। আর অন্যপ্রান্তে প্রথমার্ধে মাত্র একবার গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল বার্সা। সেটাও লিন্ডেলফের একটা ভুল থেকে। ফিলিপ কৌতিনহোর শট পা দিয়ে সে দফায় ফিরিয়ে দেন ডেভিড ডি গিয়া।
ইউনাইটেডের মিডফিল্ডে দারুণ খেলছিলেন পগবা, ফ্রেড, ম্যাকটমিনে। কিন্তু ফাইনাল থার্ডে গিয়ে ভালো ফিনিশের অভাবে বেশকয়েকবার খালি হাতে ফিরেছে ইউনাইটেড। প্রথমার্ধে নিজেদের দোষেই গোলটা শোধ করতে পারেনি ইউনাইটেড। ৪০ মিনিটে ডিয়েগো দালো সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন। ডানদিক থেকে মার্কাস র্যাশফোর্ডের ক্রসে হেডটা লক্ষ্যে রাখতে পারলেই হয়ত গোল পেতেন। কিন্তু গোলের সামনে গিয়ে গড়বড় পাকিয়ে ফেললেন দালো।
তবে তখন থেকেই ওল্ড ট্রাফোর্ডে বিশ্বাসটাও ফিরে আসে। বার্সা যতই শক্তিশালী হোক, টক্কর দেওয়ার ক্ষমতাটা আছে তাদেরও! দ্বিতীয়ার্ধেও তাই দুর্দান্ত শুরু ইউনাইটেডের। কিন্তু ওল্ড ট্রাফোর্ড সমর্থকদের উল্লাসে ভাসানোর মতো আরেকটি সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করল ঘরের দল। এবার মিসটা করলেন র্যাশফোর্ড। ডানদিক থেকে আসা ক্রস মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান পাঞ্চ করেছিলেন। পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি জায়গায় ছিলেন র্যাশফোর্ড। তার কাছে গেল বল, কিন্তু তাড়াহুড়োয় তিনি ভলিটাই করতে পারলেন না ঠিকঠাক। পায়ের বদলে বল লাগালেন হাঁটুতে।
বার্সার বিপক্ষে এতোখানি অবসর সময় পাবেন সেটা হয়ত ডি গিয়া নিজেও ভাবেননি। প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে আর একবার সেভ করতে হলো তাকে। জর্দি আলবার শটটা তার জন্য নিয়মিত সেভ। আরেকবার অবশ্য বিপদ আঁচ করতে পেরেছিলেন ডি গিয়া। নেলসন সেমেদোর থ্রু বল ধরে ঢুকে গিয়েছিলেন সুয়ারেজ। কিন্তু সাবেক লিভারপুল স্ট্রাইকার ভালো জায়গা থেকে বল মারলেন সাইড নেটে। ডি গিয়াকে কিছুই করতে হয়নি। ২০১৫ সালের পর থেকে তাই অ্যাওয়ে ম্যাচের গোল না পাওয়ার রেকর্ডটা ওল্ড ট্রাফোর্ডেও টেনে নিয়ে গেছেন সুয়ারেজ।
খরা কাটেনি মেসিরও। গোলটা তৈরি করে তিনিও হারিয়ে গেলেন ব্ল্যাকহোলে। এরমধ্যে একবার ক্রিস স্মলিংয়ের শক্তিশালী চ্যালেঞ্জে নাক মুখ ফাটিয়ে রক্তও ঝরিয়েছিলেন। প্রথমার্ধের ওই ঘটনার পর আর সেভাবে তাকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি ম্যাচে। প্রায় পুরোটা সময় তাকে কড়া পাহারায় রেখেছিলেন স্কট ম্যাকটমিনে। বার্সাকে আটকে রাখায় ইউনাইটেডের ২২ বছর বয়সী মিডফিল্ডারের অবদানটাও কম নয়। শেষদিকে মেসি অবশ্য একটা ফ্রি-কিক পেয়েছিলেন ভালো জায়গায়। তবে রাতটা যে তার না। গ্রাউন্ড শট মেরেও ফাঁকি দিতে পারেননি ডি গিয়াকে। ৬ বছর ধরে কোয়ার্টার ফাইনালে তাই থাকলেন গোলশূন্যই। বার্সা নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ওল্ড ট্রাফোর্ডেও জিতলেও মেসি দ্বিতীয় চেষ্টাতেও এই মাঠ থেকে ফিরলেন খালি হাতে।
দ্বিতীয়ার্ধে সার্জি রবার্তো আর আর্তুরো ভিদাল নামার পর বার্সার ছন্দ কিছুটা ফিরেছিল। কিন্তু স্থায়ী হয়নি সেটিও। রবার্তো একবার গোলের সামনে গিয়ে লিন্ডেলফের চ্যালেঞ্জের কাছে নত হয়েছেন। তবে ম্যাচ বাঁচানো ট্যাকেলটা করেছেন জেরার্ড পিকে। সাবেক ইউনাইটেড ডিফেন্ডারকে ম্যাচ শেষে আলাদা করে ধন্যবাদ জানাতে পারেন মেসি-সুয়ারেজরা। ৮৪ মিনিটে বদলি অ্যান্থনি মার্শিয়াল চলে গিয়েছিলেন গোলের সামনে, শেষ মুহুর্তের ব্লকে তাকে গোলবঞ্চিত করেন পিকে। দারুণ কিছু সুযোগ পেয়েও তাই ২০০৫ সালের পর প্রথমবারের মতো কোনো শট অন টার্গেট ছাড়াই ম্যাচ শেষ হয়েছে ইউনাইটেড।
ন্যু ক্যাম্পের দ্বিতীয় লেগে স্বস্তির অ্যাওয়ে গোল ঝুলিতে থাকলেও ইউনাইটেড কিন্তু বার্সাকে সংকেতটা দিয়েই রাখল। প্যারিস, তুরিনের পর বার্সেলোনাতেও আন্ডার ডগ হয়েই খেলতে নামবে ইউনাইটেড। কিন্তু ফিরে আসার সক্ষমতা যে তাদের আছে, সেটাই তারা বুঝিয়ে দিলেন ভালোমতোই। আর ন্যু ক্যাম্পে যে ফিরে আসা যায় সেটা তাদের ম্যানেজার সোলশারের চেয়ে ভালো আর কে জানেন!