ন্যু ক্যাম্পে অপ্রতিরোধ্য বার্সার সামনে আত্মবিশ্বাসী ইউনাইটেড
ওল্ড ট্রাফোর্ডে ১-০ গোলের জয়ের পর চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বার্সেলোনা নামছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে। ঘরের মাঠে ইউরোপে টানা ৩০ ম্যাচ অপরাজিত বার্সা। এর মধ্যে জিতেছে ২৭ টিতেই। সবশেষ হারটি ২০১৩ সালে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে। এই ৩০ ম্যাচে বার্সা গোল করেছে ৯৩ টি। ডিফেন্সিভ রেকর্ডও দারুণ তাদের। হজম করেছে মাত্র ১৫ টি গোল।
তবে দুর্দান্ত এই ফর্মও গত তিন বছর ধরে কোয়ার্টার ফাইনাল পার করাতে পারেনি বার্সাকে। শেষ ৫ বছরে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাটা তাঁরা ছুঁয়ে দেখেছে মাত্র একবার। দল হিসেবে প্রতিবারই ফেভারিট হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরু করা বার্সার জন্য যেটা যথেষ্ট নয় কোনোভাবেই।
ম্যান ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রথম লেগে নিজেদের খেলাটাও খেলতে পারেনি এর্নেস্তো ভালভার্দের দল। এক গোলের জয়টা বার্সাকে দ্বিতীয় লেগের আগে অনেকটা এগিয়ে রাখলেও খুব বেশি ভরসা যোগাচ্ছে না তাই। বার্সা অধিনায়ক লিওনেল মেসিকেও বেশিরভাগ সময় আটকে রেখেছিল ইউনাইটেড। ৬ বছর ধরে কোয়ার্টার ফাইনালে গোল না পাওয়ার খরাটা তাই এখনও কাটেনি মেসির।
তবে ওই ম্যাচের পর বার্সার প্রায় সবাই পুরো ৬ দিন বিশ্রাম পেয়েছেন। লা লিগা শিরোপা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় হুয়েস্কার বিপক্ষে একমাত্র মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান বাদে ওই ম্যাচের একাদশের কাউকেই মাঠে নামাননি ভালভার্দে। প্রথম লেগের আগে অবশ্য 'বিলাসীতার' সুযোগটা ছিল না বার্সার। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে এর তিনদিন আগে কঠিন ম্যাচ খেলতে হয়েছিল মেসিদের।কিছুটা ক্লান্তির ছাপও তাই ছিল বার্সার খেলায়। এবার অবশ্য সেই সম্ভাবনাটা নেই।
তবে সার্জিও বুসকেটসকে খেলতে হবে আলাদা সতর্কতা নিয়ে। প্রথম লেগে হলুদ কার্ড দেখেছিলেন।আরেকটু হলে লাল কার্ডও দেখতে পারতেন, যদিও বেঁচে গেছেন। তবে দ্বিতীয় লেগে হলুদ কার্ড দেখলে আর বার্সা সেমিফাইনালে উঠে গেলে প্রথম লেগটা দর্শক হয়ে পার করতে হবে বুসকেটসকে।
ইনজুরির শঙ্কা কাটিয়ে উঠেছেন ইভান রাকিটিচও। আরেক মিডফিল্ডার আর্থার অবশ্য খুব ভালো ফর্মে নেই, তবে তার জায়গাও প্রায় নিশ্চিত। রক্ষণে পিকে, লংলে, আলবারাও থাকবেন। কিন্তু রাইটব্যাকে সেমেদো নাকি সার্জি রবার্তো নামবেন সেটা ভালভার্দের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে। আর আক্রমণে প্রথম লেগের মতো মেসি, সুয়ারেজ, কৌতিনহোরই থাকার কথা।
বার্সেলোনা যতই সুবিধাজনক জায়গায় থাকুক, তাতে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি পড়ছে না ম্যান ইউনাইটেডের। ওলে গানার সোলশার বরাবরের মতোই পজিটিভ তার দল নিয়ে। সেটার পেছনে অবশ্য যুক্তিও আছে। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে অবিশ্বাস্য দুইটি জয় নিয়ে ফিরেছে ইউনাইটেড। গ্রুপপর্বে জুভেন্টাসকে তুরিনে হারিয়েছিলেন রেড ডেভিলরা, এরপর পিএসজির বিপক্ষে তো দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও প্যারিসে তারা জিতল ৩-১ গোলে। তুরিন, প্যারিসে সম্ভব হলে, বার্সেলোনাতে কেন নয়?
সোলশারের ভরসা তার আক্রমণভাগ। মার্কোস র্যাশফোর্ড, রোমেলু লুকাকু, পল পগবা, অ্যান্থনি মার্শিয়ালদের ঠেকাতে বার্সাকেও সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি, "আপনি এই খেলোয়াড়দের মান দেখুন। আমরা তাই বার্সার জন্য বড় বাধা।"
"আমরা এক গোলে পিছিয়ে আছি, তবে পিএসজির বিপক্ষে এই দলটা যা করেছে সেটা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা পিএসজির ম্যাচ, জুভেন্টাসের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচগুলো কাজে লাগাব। এ বছর আমরা বেশকিছু বড় দলকে তাদের মাঠে হারিয়েছি। আর সেরা কিছু খেলোয়াড়দের বিপক্ষেও খেলেছি।"
ন্যু ক্যাম্পে সোলশারের নিজেরও আছে অসাধারণ এক স্মৃতি। ১৯৯৯ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ইনজুরি সময়ে করা তার গোলেই বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়েছিল ইউনাইটেড। পেছন থেকে কীভাবে ফিরে আসা যায় সেটা তো তার ভালোভাবেই জানা।
এই ম্যাচের জন্য সোলশার দলে পাচ্ছেন না লুক শকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারছেন না ইংলিশ লেফটব্যাক। পল পগবাও ম্যানেজারের মতোই আত্মবিশ্বাসী ন্যু ক্যাম্পে, "চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল দারুণ। আমাদের আসলে উপভোগ করতে হবে। সেরাটা দিতে হবে আর বিশ্বাস রাখতে হবে।"
"এ কারণেই আমরা ফুটবল খেলি। এসব দলের বিপক্ষে এরকম ম্যাচ খেলার জন্যই। খেলা শেষ হয়ে যায়নি। আমি জানি এটা বার্সেলোনা, আমি জানি এটা তাদের ঘরের মাঠ। এরপরও ব্যাপারটা ৯০ মিনিটের। মাত্র এক অর্ধ খেলা হয়েছে, এখন দ্বিতীয় অর্ধের পালা!"