বিশ্বকাপের বাংলাদেশের ওরা ১৫ঃ মিডল অর্ডারে 'বিকল্প' কে?
বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দল ঘোষণা করা হবে কাল (মঙ্গলবার)। অন্তত ১৩ জনের নাম সেখানে একরকম নির্বাচন হয়েই গেছে। প্রথম তিনে তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস। এরপর সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহর জায়গাও পাকা। সাব্বির রহমান আর মোহাম্মদ মিঠুনের দলে জায়গা নিয়েও সংশয় নেই। মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাইফ উদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন তো থাকবেনই। আর বাকি থাকে দুজন। সেখানে অন্তত একজন ব্যাটসম্যানই। সেই জায়গা কে পাবেন, সেটি নিয়েই এখন তুমুল আলোচনা। মোসাদ্দেক হোসেন আর ইয়াসির আলী চৌধুরীর নামটাই বেশি শোনা যাচ্ছে। কিন্তু দুজনের কে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে?
সাম্পতিক ফর্মে একজনকে এগিয়ে রাখা একটু কঠিন। মোসাদ্দেক আর ইয়াসির দুজনেই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন। মোসাদ্দেক দুই বছর আগেও প্রিমিয়ার লিগে চার-পাঁচেই নেমেছিলেন। এবার আবাহনীর হয়ে একটু নিচে নেমে ছয়-সাতে খেলেছেন। সেই হিসেবে বড় স্কোর করার সুযোগ ছিল কম। তারপরও একটি সেঞ্চুরির সঙ্গে চারটি ফিফটি করেছেন। দ্রুত উইকেট পড়ার পর কয়েকটি ম্যাচে ব্যাট করতে হয়েছে টেল এন্ডারদের সঙ্গেও। বিশেষ করে শেখ জামালের বিপক্ষে তাঁর ইনিংসটা একটু হলেও পাল্লাটা তাঁর পক্ষে হেলে দিয়েছে। ৮৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল আবাহনী, মোসাদ্দেক শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি করেই মাঠ ছেড়েছেন।
দুই বছর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে যেমন দাপটের সঙ্গে ব্যাট করতেন মোসাদ্দেক, সেটা হয়তো পুরোপুরি ফিরে আসেনি। চোখের সমস্যায় এরপর যে ব্যাট করাই ভুলে গিয়েছিলেন! গত বছর দুঃস্বপ্নের একটা মৌসুম কাটিয়ে এবার রান ফিরেছেন আবার। জাতীয় দলে অবশ্য সুযোগ পেয়েছিলেন গত বছর, তেমন কিছু করতে পারেনি। ইমার্জিং কাপে সেঞ্চুরির পর বিপিএলেও কিছুটা ঝলক দেখালেন। রাজশাহী কিংসকে একটা ম্যাচে হারিয়ে দিলেন দারুণভাবে। রান খুব বেশি না পেলেও আগের সেই ঝলকটা দেখা যাচ্ছিলই।
তারপরও জাতীয় দলে জায়গার দাবিটা জোরালো করতে হলে আরেকটু ধারাবাহিক কিছু দরকার ছিল। মোসাদ্দেক সেটা করেছেন এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। একটা ব্যাপার তাঁর বিপক্ষে, ৭২ এর একটু ওপরের স্ট্রাইক রেট ঠিক তাঁর পক্ষে নেই। তবে অন্য একটা অংকে মোসাদ্দেক এগিয়ে থাকবেন কিছুটা। মাহমুদুল্লাহ্র কাঁধের চোটে বিশ্বকাপে কতটা ঠিকঠাক বল করতে পারবেন, সেটা নিয়ে আছে সংশয়। সেক্ষেত্রে সাতে নেমে মোসাদ্দেকের বল হতে পারে কার্যকরী একটা অস্ত্র। এই প্রিমিয়ার লিগেও ৭ উইকেট নিয়ে জানিয়েছেন সেটি। দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মোসাদ্দেককে বল করানোর ফাটকাটা দারুণ কাজে লেগেছিল বাংলাদেশের। এবারও সেরকম কিছু চাইতে পারেন মাশরাফি।
এই অভিজ্ঞতার অভাবই কিছুটা পিছিয়ে দিতে পারে ইয়াসির আলী চৌধুরীকে। ফর্মের বিচারে সম্ভবত ক্যারিয়ারের সেরা সময়টাই কাটাচ্ছেন। গত বছর ইমার্জিং কাপ আর বিসিএলে রান করার পর বিপিএলেও নিজেকে চিনিয়েছিলেন আলাদা করে। দেশীদের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশি রান ছিল শুধু রনি তালুকদার, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালের। প্রিমিয়ার লিগে ব্রাদার্সের হয়েও রান করছেন নিয়মিত। এমনিতে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, বিপিএলে ওপরের দিকেও ব্যাট করেছেন। তবে ব্রাদার্সের হয়ে পাঁচেই ব্যাট করেছেন বেশি। বড় ইনিংস খেলার সুযোগ তাই বেশি পাননি, একমাত্র সেঞ্চুরিটা অবশ্য আবাহনীর বিপক্ষে। তবে শেষ দিকে নেমে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ঝড় তুলেছেন নিয়মিত, ১০০র বেশি স্ট্রাইক রেট সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে। গত বিশ্বকাপের আগে প্রায় আনকোরা সৌম্য সরকারকে খেলিয়ে ভালো একটা জুয়া খেলিয়েছিল বাংলাদেশ। বড় কিছু করতে না পারলেও সেটা একেবারে বিফলে যায়নি। এবার কি সেরকম কিছু হবে?
এই দুজনের বাইরে অন্য কারও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণই। ইমরুল কায়েস ছয় মাস আগেও এক সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড করেছিলেন। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজে ব্যর্থতার পর নিউজিল্যান্ড সফরে আবার জায়গা হারিয়ে ফেলেন। প্রিমিয়ার লিগেও সেঞ্চুরি ছাড়া বলার মতো সেরকম কিছু করতে পারেননি। ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্সও খুব ভালো নয়, পাঁচ ম্যাচ খেলে ফিফটি আছে মাত্র একটিতে। আর লোয়ার মিডল অর্ডারে বাড়তি একজনের কথা ভাবলে সেটিও বিপক্ষে যেতে পারে কায়েসের।
এর বাইরে আপাতত জাতীয় দলে অন্য কোনো ব্যাটসম্যানের সম্ভাবনা আপাতত নেই বললেই চলে। এই তিন জনের মধ্যে অন্তত একজন, হয়তো দুজনের ভাগ্যেই শেষ পর্যন্ত শিকে ছেড়ার কথা।