• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    মেসির জোড়া গোলে তিন বছর পর সেমিফাইনালে বার্সেলোনা

    মেসির জোড়া গোলে তিন বছর পর সেমিফাইনালে বার্সেলোনা    

    আগের তিনবার এই কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে গিয়েছিল বার্সেলোনার ইউরোপ যাত্রা। ব্যাপারটা বার্সার মতো দলের জন্য ছিল মারাত্মক অস্বস্তির। অবশেষে সেই গেরো কাটল বার্সার। গেরো কেটেছে লিওনেল মেসিরও। তার হাত ধরেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে দ্বিতীয় লেগে উড়িয়ে দিয়েছে বার্সা। মেসি করেছেন জোড়া গোল, তার সঙ্গে যোগ করেছেন ফিলিপ কৌতিনহো। দুই লেগ মিলিয়ে তাই ৪-০ গোলের জয়ে বার্সেলোনা উঠে গেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে। আগামীকাল লিভারপুল-পোর্তোর টাইয়ে জয়ী দলের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ৫ বারে চ্যাম্পিয়নরা।

    ন্যু ক্যাম্পে অবশ্য শুরুতে বার্সেলোনাকে ভড়কে দিয়েছিল ম্যান ইউনাইটেড। দুই মিনিটের মধ্যেই মার্কোস র‍্যাশফোর্ড চলে গিয়েছিলেন গোলের কাছাকছি। কিন্তু বারপোস্টে লেগে ফেরত আসে তার শট। এর কিছুক্ষণ পর স্কট ম্যাক টমিনেও ডিবক্সের ভেতর হুট করে ফাঁকায় বল পেয়েও কিছু করতে পারেনি। পুরো ম্যাচে ইউনাইটেডের দাপট ওইটুকুই। ওই সুযোগগুলো কাজে লাগালেও যে  ইউনাইটেডের খুব বেশি লাভ হত- সেটা মনে করারও সুযোগ দিল না মেসি।

     

    পরের গল্পটা আসলে যতটা বার্সার ঠিক ততোটাই মেসিরও। তিনি গোল করবেন সেটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সেই ব্যত্যয়ও এতোদিন দেখেছে ফুটবল। ৬ বছর ধরে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে গোল নেই! তার নামে সঙ্গে বড্ড বেমানান। সেই খরা যখন কাটালেন, সেটা হলো দেখার মতোই। অ্যাশলি ইয়াং নিজের অর্ধে বল পেয়েছিলেন। মেসি তাকে আটকে দিয়ে বল ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন। ফ্রেড আর ফিল জোন্স দর্শকের ভূমিকায়। দুইজনকে কাটিয়েই গোল দেখতে পাচ্ছিলেন মেসি। এরপর বাঁকানো শটে ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে নিখুঁত ফিনিশে করলেন গোল। ১৬ মিনিটে মেসির গোলে খেলার মোড়ও গেল ঘুরে।

    এর চার মিনিট পর খেলাটা প্রায় শেষই হয়ে গেল মেসির হাত ধরে। ফিলিপ কৌতিনহোকে আটকে দিয়েছিল ইউনাইটেড ডিফেন্ডাররা। কিন্তু বলটা ঘুরে ফিরে গেল সেই মেসির কাছেই। কয়েক ধাপ এগিয়ে আরও একবার ডিবক্সের বাইরে থেকে মেসি নিলেন শট। এবার ডান পায়ে। মেসির এবারের শট দুর্বল, নিখুঁতও না। কিন্তু রাতটা যখন মেসির তখন তাকে ঠেকায় কে। তবে রাতটা আর যাই হোক ডেভিড ডি গিয়ার ছিল না। মেসির শটটা গ্রিপ করতে পারলেন না, সেটা হয়ে গেল গোল।

    মেসির ওই দুই গোলের আগে ম্যাচের ১০ মিনিটে একটি পেনাল্টি পেয়ে গিয়েছিল বার্সা। ইভান রাকিটিচকে ফাউল করেছিলেন ফ্রেড। রেফারি প্রথমে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিলেও পরে ভিএআরের সাহায্যে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। কিন্তু সেটা নিয়ে আর কোনো আফসোস বা তর্ক-বিতর্কেই যেতে হয়নি বার্সাকে।

    দুই গোল হজম করে দিশেহারা ইউনাইটেড এরপর আর এক মুহুর্তের জন্যও ম্যাচের লাগাম ধরতে পারেনি। প্রথমার্ধের শেষদিকেই আরও একবার মেসির জাদুকরী মুহুর্তের কাছে হার মেনেছিল তারা। তবে সে দফায় আর গোল হজম করতে হয়নি। মিডিফিল্ডে বেশ কয়েকবার ড্রিবলিং করে বাম দিকে জর্দি আলবাকে বল দিয়েছিলেন মেসি। তার করা ফারপোস্টের ক্রস অল্পের জন্য গোলে পরিণত করতে পারেননি বুসকেটস।

    দ্বিতীয়ার্ধের খেলা আরও একপেশে। তবে কারও কারও জন্য তখনও প্রমাণের অনেক কিছুই বাকি ছিল। কৌতিনহোর সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। তিনি কী করতে পারেন, সেটাও দেখিয়ে দিলেন ইউনাইটেডের বিপক্ষে। সাবেক লিভারপুল ফরোয়ার্ডও গোল করলেন তার নিজস্ব ভঙ্গিতে। মেসিও থাকলেন ওই গোলে। মিডফিল্ড থেকে লব করে বাম দিকে বল দিয়েছিলেন আলবাকে। সেখান থেকে কৌতিনহো, ২৫ গজ দূর থেকে ব্রাজিলিয়ান করলেন ধনুকের মতো বাঁকানো শট। ডি গিয়া ঝাঁপ দিয়েছিলেন, কিন্তু তারও অনেক আগেই বল পৌঁছে গিয়েছিল তার ঠিকানায়।

     

     

    ৩-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ন্যু ক্যাম্প মাতে ‘ওলে’ উৎসবে। মেসিকে হ্যাটট্রিকটা পেতেও পারতেন। শেষ পর্যন্ত চেষ্টাও করেছেন। শেষদিকে পেয়েছিলেন সেরা সুযোগটা, তবে এবার ডি গিয়া থামালেন তাকে। এরও আগে একবার ওভারহেড কিক মেরেছিলেন, কিন্তু অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করেছেন। বাকি সময়ে লুইস সুয়ারেজও গোল পেতে পেতে আর পাননি। অবশ্য তাতে কিছু যায় আসেনি ন্যু ক্যাম্পের। ইউনাইটেডকে আরও আগেই দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে তারা। শেষদিকে নামা সাবেক বার্সা খেলোয়াড় অ্যালেক্সিস সানচেজও তাই পেলেন উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলেন। ইউনাইটেডের হয়ে তিনিও পারেননি সান্ত্বনার গোলটা এনে দিতে । ডানদিক থেকে আসা ক্রস ভালো একটা হেড করেছিলেন। কিন্তু আরও ভালো সেভে মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান ঠেকিয়ে দিয়েছেন তাকে।

     

     

    বার্সেলোনা (৪-৩-৩): টের স্টেগান; রবার্তো, পিকে, লংলে, আলবা; রাকিটিচ, বুস্কেটস, আর্থার; মেসি, সুয়ারেজ, কুতিনিয়ো

    ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (৪-৩-৩): ডি গেয়া; লিন্ডেলফ, জোনস, স্মলিং, ইয়ং; ফ্রেড, ম্যাকটমিনে, পগবা; লিনগার্ড, রাশফোর্ড, মার্শিয়াল