বাংলাদেশেকে ফুটবল শেখাল তাজিকিস্তান
তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে এই মুহূর্তে কনকনে ঠাণ্ডা, তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। প্রতিকূল আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে সপ্তাহখানেক আগেই দেশ ছেড়েছিলেন মামুনুলরা। পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়া তাতে কতটুকু হয়েছে সেটা ফ্যাবিও লোপেজের শিষ্যরাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু স্কোরলাইন বা মাঠের খেলা, কোনটিতেই তেমন কিছুর ছিটেফোঁটা প্রতিফলনও দেখা যায় নি। ফলশ্রুতে ঘরের মাঠে যে একটি দলের কাছ থেকেই পাওয়া একটিমাত্র পয়েন্ট চলতি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এ যাবত বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি, সেই তাজিকিস্তানের বিপক্ষে তাঁদের মাঠে ৫-০ ব্যবধানের বড় পরাজয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বেঙ্গল টাইগাররা। চারটি গোলই করেছেন তাজিক ফরোয়ার্ড ম্যানুখের জালিলভ।
পরিকল্পনাবিহীন খেলা, এলোমেলো শট আর নামমাত্র রক্ষণভাগ- মোটা দাগে বাংলাদেশ দলের নব্বই মিনিটকে এই কয়টি শব্দেই কেবল বিশেষায়িত করা যায়। অথচ একটু গোছানো ফুটবল খেললে শুরুর দিকেই এগিয়ে যাওয়ার একাধিক সুযোগ ছিল সফরকারীদের সামনে। প্রথম মিনিটেই হেমন্তর ক্রসে আক্রমণে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রনির লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড থেকে পাওয়া বল মামুনুলের দুর্বল শটে গোললাইন অতিক্রম করে। পাঁচ মিনিটের মাথায় তাজিকদের দূরপাল্লার শট গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ষষ্ঠ মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন তাজিক ফরোয়ার্ড এম জালিলভ। নবম মিনিটে দ্বিতীয়বারের মতো লাল-সবুজ জার্সিতে আক্রমণে ওঠেন দেশসেরা স্ট্রাইকার হেমন্ত ভিনসেন্ট। কিন্তু তাঁর ক্ষিপ্র গতির শট লক্ষ্যের অনেক বাইরে দিয়ে সীমানা ছাড়ায়। এগারো মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার চমৎকার থ্রো থেকে বল বাগিয়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে দারুন মুন্সিয়ানায় কাটিয়ে ক্রস করেছিলেন বাংলাদেশের তকলিস আহমেদ। কিন্তু সে যাত্রায়ও বিপদমুক্তই থাকে তাজিকদের জাল।
১৬ মিনিটে জালিলভের গোলে এগিয়ে যায় তাজিকরা। গোল পেয়ে উজ্জীবিত তাজিকরা উপর্যুপরি আক্রমণে ২৪ মিনিটের মাথায় আদায় করে নেয় দ্বিতীয় গোলও। কমলের স্লাইডিং ট্যাকল পেরিয়ে গোলরক্ষক শহীদুলকে একা পেয়ে মাপা শটে বল জালে জড়ান ওই জালিলভই।
৩১ মিনিটে হ্যাট্রিকের সুযোগ হাতছাড়া করেন জালিলভ। মিনিট দুয়েক বাদে হেমন্তর বা পায়ের শট সরাসরি তাজিক গোলরক্ষকের হাতে আশ্রয় নেয়। ৩৪ মিনিটে দারুণ ড্রিবলিংয়ে বল দখলে রেখে মাইনাসে মামুনুলকে বল বাড়ান কমল। কিন্তু স্বল্প দুরত্বে মামুনুলের শট গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ৪১ মিনিটে মামুনুলের লম্বা পাসে সুবিধেজনক জায়গায় বল পেয়েও নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হন জীবন।
৫০ মিনিটে ডি-বক্সের মধ্যে জালিলভকে বাজে ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখেন নাসিরুদ্দিন। পেনাল্টি থেকে তাজিকদের আরও এক গোলে এগিয়ে দেন নাজারভ।
সময়ের সাথে ক্রমেই কেহি হারাতে থাকা বাংলাদেশের নামমাত্র রক্ষণভাগকে পরাস্ত করে ৫৯ মিনিটে হ্যাট্রিক আদায় করে নেন জালিলভ। দুর্বল হেড গোলবারে লেগে ফিরে আসলে ফিরতি শটে সেটা জালে জড়ান তিনি।
৭২ মিনিটে মামুনুলের ভালো কর্নার শটে জটলা থেকে চমৎকার হেড নিয়েছিলেন বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড, কিন্তু গোললাইন থেকে সেটি বিপদমুক্ত করেন তাজিক গোলরক্ষক। এক মিনিট বাদেই পাল্টা আক্রমণে ব্যক্তিগত চতুর্থ ও দলের হয়ে পঞ্চম গোল করেন জালিলভ।
৭৮ মিনিটে বাংলাদেশকে ষষ্ঠ গোল হজমের হাত থেকে বাঁচান গোলরক্ষক শহীদুল। ৮৭ মিনিটে তাজিকদের ক্রস লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে পাঁচ গোলের পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে সক্ষম হন মামুনুলরা।
আগামী ১৭ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।