• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    বার্সা-লিভারপুল ক্ল্যাসিকের অপেক্ষায়

    বার্সা-লিভারপুল ক্ল্যাসিকের অপেক্ষায়    

    বার্সেলোনা-লিভারপুল 

    চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল ড্রয়ের পরই অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল সেমিফাইনালের একটা লাইন আপ। অনুমিত সেই দুইদলই মুখোমুখি হচ্ছে। পোর্তোকে বিদায় করে দেওয়া লিভারপুলের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বাধা পেরুনো বার্সেলোনা। ১৩ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ চারে দেখা হচ্ছে দুই দলের। 

    ১ মে ন্যু ক্যাম্পে প্রথম লেগে ইয়ুর্গেন ক্লপের দলকে আতিথেয়তা দেবে বার্সা। অ্যানফিল্ডের দ্বিতীয় লেগ সপ্তাহখানেক পরই। চ্যাম্পিয়নস লিগ নকআউট পর্বে অবশ্য আগেও দেখা হয়েছে দু’দলের। এবারের মত শেষ দলের দেখায় দ্বিতীয় লেগটাও ছিল অ্যানফিল্ডেই। ২০০৬-০৭ মৌসুমে বার্সার কাছে অ্যানফিল্ডে ১-০ গোলে হারলেও প্রথম লেগ ২-১ গোলে জেতায় ফাইনাল খেলেছিল ‘অল রেড’রাই। ‘হেড টু হেড’ লড়াইয়েও এগিয়ে আছে লিভারপুলই। বার্সার ২ জয়ের বিপরীতে  লিভারপুল জিতেছে ৩ ম্যাচ, বাকি ২টি হয়েছে ড্র।

    মৌসুমের শেষদিকে এসে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দুই দলের পথটা অবশ্য বেশ ভিন্ন। স্প্যানিশ লিগ ধরে রাখা সময়ের ব্যাপার, দল পৌঁছে গেছে কোপা ডেল রে ফাইনালেও। বার্সার ধ্যানজ্ঞান জুড়ে এখন কেবলই চ্যাম্পিয়নস লিগ। তবে লিভারপুলের সেই বিলাসীতা নেই। প্রিমিয়ার লিগের রুদ্ধশ্বাস শিরোপা দৌড়ে এখনও টিকে আছে তারা। চ্যাম্পিয়নস লিগে তাই বার্সার মত অখণ্ড মনোযোগ হয়ত দিতে পারবে না ক্লপের দল।

     

     

    একসময় লিভারপুলের লাল জার্সিতে ইংল্যান্ড মাতানো ফিলিপ কুতিনিয়ো এবং লুইস সুয়ারেজ ফিরছেন অ্যানফিল্ডে। সুয়ারেজের জন্য অভ্যর্থনাটা উষ্ণই হবে, তবে কুতিনিয়োর জন্য সে কথা হয়তো নিশ্চিত করে বলা যায় না এখনই। শিরোপা, টাকাপয়সার জন্য ক্লাব ছাড়া কুতিনিয়োর জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে দুয়োই। ইউনাইটেডের বিপক্ষে স্বরূপেই ছিলেন সুয়ারেজ-কুতিনিয়ো দুজনই। বার্সার আক্রমণভাগ দুর্দান্ত খেললেও রক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তাটা থেকেই যাচ্ছে।

    ন্যু ক্যাম্পে প্রথম ১০ মিনিটে বার্সার রক্ষণভাগকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন মার্কাস রাশফোর্ডরা, সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে হয়তো গল্পটা অন্যরকমও হতে পারত। কিন্তু সেমিতে প্রতিপক্ষ লিভারপুল, পিকেদের প্রতিপক্ষ ইউরোপের অন্যতম দুর্ধর্ষ ত্রয়ী সালাহ, মানে এবং ফিরমিনো। চ্যাম্পিয়নস লিগে এই মৌসুমে মিনিটপ্রতি গোলের হিসেবে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন মানেই (প্রতি ৯৫ মিনিটে গোল)। রাশফোর্ডরা যেসব সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, সালাহরা যে তা করবেন না; সেটা হয়তো জানাই আছে বার্সা কোচ এর্নেস্তো ভালভার্দের।

    রক্ষণে ভুল হোক বা না হোক, কোনও দলই যে রক্ষণাত্মক খেলবে না, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। দুই দলই চলতি মৌসুমে গোলের ‘সেঞ্চুরি’ পূরণ করেছে আগেই। সালাহদের মতই দারুণ ফর্মে আছেন মেসি, সুয়ারেজও। দিনশেষে অবশ্য এই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে রক্ষণটাই। ভার্জিল ভ্যান ডাইক তো লিভারপুলের রক্ষণে বিপ্লবই ঘটিয়েছেন। এবার তার জন্য অপেক্ষা করছে লিভারপুল ক্যারিয়ারে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। থামাতে হবে মেসিকে। আর পিকে যেন নতুন করে ফর্ম ফিরে পেয়েছেন এই মৌসুমে। কোয়ার্টার ফাইনালেও খেলেছেন দারুণ। এবার তার সামনে লিভারপুল ত্রয়ী। 

    নিশ্চিতভাবেই তাই আরও একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ 'ক্ল্যাসিক' দেখার জন্য দিন গণনা শুরু করে দিতে পারেন এখন থেকেই।    

     

     

    টটেনহাম হটস্পার- আয়াক্স

    ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে শেষবার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিতে খেলেছিল আয়াক্স আমস্টারডাম। তখন জন্মই হয়নি আয়াক্সের বর্তমান স্কোয়াডের অনেকেরই। ইউরোপে এরপরের ২২ বছর আয়াক্সের কেটেছে অপেক্ষায়, হতাশায় এবং নীরব দর্শক থেকেই। গত সপ্তাহে তুরিন রূপকথায় দীর্ঘ সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন মাথিয়াস ডি লিটরা। প্রতিপক্ষ টটেনহাম হটস্পারের অপেক্ষাটা অবশ্য আরও দীর্ঘ। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ চারে কখনও খেলেনি তারা, সেই ১৯৬১-৬২ মৌসুমে তখনকার ইউরোপিয়ান কাপে শেষবার এতদূর এসেছিল তারা।

    টটেনহামের মাঠে ২ মে হবে প্রথম লেগ। হ্যারি কেইনের মত সেদিন হিউঙ-মিন সনকেও পাবে না স্পার্স, হলুদ কার্ডের গেরোয় আটকে গেছেন তিনি। ৯ মে আয়াক্সের ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনাতে হবে দ্বিতীয় লেগ। ইউরোপে নিজেদের সেরা মৌসুম কাটানো স্পার্সের এতদূর আসারই কথা ছিল না। শেষ ম্যাচে ন্যু ক্যাম্প বার্সেলোনাকে আটকে দেওয়া স্পার্স আর পেছনে ফিরে তাকায়নি। স্পার্সের মত নাটকীয়তা নয়, আয়াক্স এসেছে নিজেদের জাত চিনিয়েই।

    আরেকটু হলেই বায়ার্ন মিউনিখকে টপকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও হতে পারত তারা। একই মৌসুমে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা, সান্তিয়াগো বার্নাব্যু এবং জুভেন্টাস স্টেডিয়ামে অপরাজিত থেকেছে আয়াক্স।ইউরোপে অপেক্ষার মত আরও একদিক দিয়ে সাদৃশ্য আছে দুই দলের। মূল একাদশের জোরেই এতদূর এসেছে তারা। দুই দলের কারোই বেঞ্চে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য সম্পন্ন নেই কেউই।

     

     

    হ্যারি কেইনকে ছাড়াই সিটি বাধা টপকেছে স্পার্স, কিন্তু মুসা সিসোকোর ইনজুরির পর ফার্নান্দো ইয়োরেন্তে নামার পরই খেই হারিয়ে ফেলে মাউরিসিও পচেত্তিনোর দল। এরিক টেন হাগের অবস্থাও একই। মাদ্রিদ, তুরিন জয় করা দলে পার্থক্য নেই তেমন। দ্বিতীয় লেগ নিজেদের মাঠে হওয়ায় আয়াক্স হয়তো এগিয়ে থাকবে কিছুটা। কিন্তু ইতিহাদ স্টেডিয়াম থেকেই শেষ হাসি নিয়ে ফিরেছিলেন হিউঙ-মিন সনরা। কেইনের অভাবটা টের পাবে স্পার্স, কিন্তু অধিনায়ককে ছাড়াও যে ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর তারা; সে প্রমাণ মিলেছে কোয়ার্টার ফাইনালেই। আর ইউরোপে একের পর এক অবিস্মরণীয় ম্যাচ উপহার দেওয়া আয়াক্সের চোখ থাকবে ২৩ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে।