সুযোগ হাতছাড়া করলো চেলসিও
টটেনহাম হটস্পার, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, আর্সেনাল- তিনদলই হেরেছে। সেই সুযোগে বার্নলিকে হারালেই তিনে উঠে আসত চেলসি। কিন্তু স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে তারাও জিততে পারেনি। অবশ্য শীর্ষ চারের শেষ দুই স্থানের জন্য লড়াইয়ে থাকা বাকি তিন দলের মতো খালি হাতে ফিতে হয়নি তাদের। বার্নলির সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে মাউরিসিও সারির দল। আর্সেনাল আর টটেনামের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে চারে উঠেছে চেলসি।
সুযোগ হারানোর রাতে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ম্যাচশেষে দুয়ো দিয়েছেন সমর্থকেরা। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে চেলসির পারফরম্যান্স আর ম্যানেজার সারির সিদ্ধান্তগুলোও কাজে না আসায় সমর্থকদের অসোন্তোষ একেবারেই অযৌক্তিকও ছিল না। তবে এসবের আগে নিজেদের মাঠে শুরুটা ভালোই ছিল চেলসির।
প্রথম কয়েক মিনিটেই বার্নলির নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিলেন হ্যাজার্ড, হিগুয়াইনরা। বেশ কয়েকবার গোলের সুযোগ তৈরি করার পর ৬ মিনিটে এডেন হ্যাজার্ডের লব থেকে গঞ্জালো হিগুয়াইনের শট ক্লিয়ার হয় গোললাইন থেকে। কিন্তু এর দুই মিনিট পর স্রোতের বিপরীতে ম্যাচে এগিয়ে যায় উলটো বার্নলিই। কর্নার থেকে হেডে ডিবক্সের মাথায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন জেফ হেন্ড্রিক। তার দুর্দান্ত এক ভলি চমকে দেয় কেপাকে। চমকে যায় আসলে গোটা স্ট্যামফোর্ড ব্রিজই। কিন্তু এরপর ১১৩ সেকেন্ডের ব্যবধানে দুই গোল করে আবার ঘরের মাঠে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছিল চেলসি।
১২ মিনিটে বাম দিক থেকে হ্যাজার্ডই তৈরি করে দিয়েছিলেন গোলটা। বার্নলির ম্যাথু লটনকে দুইবার বোকা বানিয়ে মাইনাস করেছিলেন হ্যাজার্ড। স্পটকিক নেওয়ার কাছাকাছি জায়গা থেকে বাম পায়ের শটে টপ কর্নারে বল জড়িয়ে চেলসিকে সমতায় ফেরান এনগোলো কান্তে। এর কিছুক্ষণ পর দুর্দান্ত আরও একটি গোল করে চেলসি।
হিগুয়াইনই ওয়ান টু করে শুরু করেছিলেন ডিবক্সের বাইরে থেকে। জর্জিনিয়োর ফিরতি পাস দৃষ্টিনন্দন এক ব্যাকহিল করে সিক্স ইয়ার্ড বক্সের কোণাকুণি জায়গায় ফেলেছিলেন সিজার আজপিলিকুয়েতা। হিগুয়াইন সেখান থেকেই মেরেছেন বুলেটে গতির শট। ক্রসবার কাঁপিয়ে সেটা ঢুকে গেছে বার্নলির গোলে।
চেলসির সেই স্বস্তিটা অবশ্য দশ মিনিটের বেশিও স্থায়ী হয়নি। মিডফিল্ড থেকে পাঠানো লং বল আরও দুইবার হেড করে ফারপোস্টে অ্যাশলি বার্নসের কাছাকছি চলে যায়। তিনি এরপর স্লাইড করে শট মেরে গোল করে বার্নলিকে ফিরিয়ে আনেন ম্যাচে। ২৪ মিনিটে ৪ গোল দেখা ম্যাচ অবশ্য এরপর নিরপক্ষে সমর্থকদের হতাশই করে গেছে।
বল পায়ে চেলসির আধিপত্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে বার্নলি। প্রথমার্ধে আরও বেশ কয়েকবার সুযোগ তৈরি করেছিল চেলসি। রুবেন লফটাস চিক অল্পের জন্য মিস করেছেন লক্ষ্য, তাই দেখার মতো একটি গোল পাওয়া হয়নি। এছাড়াও হ্যাজার্ড বারবারই ভুগিয়েছেন বার্নলিকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে চেলসির ধার কমে আসলে গোল পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যায় ঘরের দলের জন্য। ৫০ মিনিটে হিগুয়াইন একবার দূর্বল শট করেছিলেন, কিন্তু সেটা সহজেই ঠেকিয়ে দেন বার্নলি গোলরক্ষক।
কাউন্টার অ্যাটাকে বেশ কয়েকবার ভীতি ছড়িয়েছিল বার্নলি। ক্রিস উড অবশ্য চেলসির ভুলগুলোকে শাস্তি দিতে পারেননি দুইবারের একবারও। একবারও বলের নাগালই রাখতে পারেননি তিনি। অন্যদিকে ধীরে ধীরে চেলসিকে হতাশ করে যাওয়া বার্নলিও সময়ের সঙ্গে আরও মনোযোগী হয় রক্ষণে। দুইদিক থেকে অনবরত আসা চেলসির ক্রসগুলো বার্নলি ডিফেন্ডাররা ঠেকিয়ে গেছেন আয়েশ করেই।
এর মধ্যে বহুদিন পর গোল পাওয়া হিগুয়াইনকে তুলে নেন সারি। প্রথমার্ধে একবার কলাম হজসন ওদয়কে ইনজুরির জন্য হারিয়েছিলেন। এরপর আর একটাই বদলির সুযোগ ছিল তার হাতে। রুবেন লফটাস চিক খুব বেশি সুবিধা করতে না পারলেও, হিগুয়াইনকে তুলে স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুকে নামান তিনি। বদলি হওয়ার পর হিগুয়াইনের অসোন্তোষ আবার নতুন করে বিতর্ক ছড়াচ্ছে। দলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে তো ম্যানেজারের? সারির বদলির সিদ্ধান্তটা বাকি সময়ে আর কাজেও আসেনি। সেভাবে ক্ষুরধার আক্রমণই আর করতে পারেনি চেলসি।
ড্রটা চেলসির জন্য যতখানি হতাশার তার চেয়েও অনেক বেশি আনন্দের ছিল বার্নলির জন্য। এই এক পয়েন্ট দিয়ে পরের মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ খেলার আরও কাছাকাছি চলে গেছে সিন ডাইচের দল। ম্যাজিক্যাল ৪০ পয়েন্ট অর্জন করা হয়ে গেছে তাদের।