'সেরা দলের ধুয়া তোলার প্রয়োজন দেখি না'
কথাটা সরাসরিই বললেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, ‘সম্ভবত না, এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ।’
সেটা আসলে না বললেও চলে। বয়স ৩৬ হয়ে গেছে, এই বিশ্বকাপ শেষে বাংলাদেশ দল থেকেই অবসর নিতে পারেন। সেখানে চার বছর পরের বিশ্বকাপ খেলাটা বাড়াবাড়ি বললেও কম বলা হয়। দেশের মাটিতে শেষ সংবাদ সম্মেলন কি না, সেটি নিয়েও কিছু বলতে রাজি হলেন না মাশরাফি। স্বভাবসুলভ রসিকতার সুরেই বললেন, এসব ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। নিজের ব্যাপারে তেমন কিছু বললেন না, তবে জোর গলাতেই বললেন এবারের দলটা গত বেশ কয়েক বারের চেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ। তবে সেরা দল নিয়ে গেলেই যে পারফরম্যান্স সেরা হয়, সেটা মানতে রাজি হলেন না বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
বিশ্বকাপ মাশরাফির নিজের জন্যও একটা অম্লমধুর অভিজ্ঞতা। ২০০৩ বিশ্বকাপটা ভুলে যাওয়ার মতো ছিল বাংলাদেশের, মাশরাফি নিজেও চোট পড়ে বাদ পড়ার সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলে যেতে চাইবেন। ২০০৭ সালেরটা কেটেছিল দারুণ, পথ দেখিয়েছিলেন সামনে থেকে। তবে ২০১১ সালের ওই বাদ পড়াটা তাঁর ক্যারিয়ারেরই সবচেয়ে কালো অধ্যায়। এরপর ২০১৫ সালে আবার বীরের বেশে ফেরা, অধিনায়কত্বের যে ব্যাটন এবারও নিয়ে যাবেন বিশ্বকাপে। মাশরাফি অবশ্য নিজের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছেন না খুব একটা, ‘আমার কাছে মনে হয় না আলাদা করে তৈরি হয়ে ওখানে কিছু করতে পারব। খেলোয়াড় হিসেবে আমাকে পারফর্ম করতে হবে। অবশ্যই অধিনায়কত্বটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। আমার যে দায়িত্বটা আছে সেগুলো চেষ্টা করবো পুরোপুরি ঠিক করার।’
দলের কথাটাই বার বার এলো ঘুরে ফিরে। এই দলের কতদূর যাওয়ার সামর্থ্য আছে বা কতদূর পর্যন্ত গেলে বিশ্বকাপ মিশন সফল মনে করবেন, এমন প্রশ্ন তো হলোই। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এই বিশ্বকাপে শুধু ভারতই এগিয়ে। তবে মাশরাফি বললেন, সেটিই শেষ কথা নয়, ‘অভিজ্ঞ ক্রিকেটার অনেক আছে বলে গত কয়েকবারের থেকে এবারের দলটাকে ভারসাম্যপূর্ণ বলা যায়। যারা জুনিয়র খেলোয়াড় আছে বেশির ভাগের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। এর মানে এই যে অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো টুর্নামেন্ট খেলা যাবে। অবশ্যই একতাবদ্ধ থাকতে হবে। একটা টুর্নামেন্টে নয়টা ম্যাচ খেলতে হবে। তার আগে আয়ারল্যান্ড সিরিজ আছে। নয়টা ম্যাচে কঠিন পরিস্থিতি আসবে। সেগুলো সামলাতে পারার মানসিকতা বেশি জরুরী। আয়ারল্যান্ড থেকেই সেটা প্র্যাকটিস করতে হবে যেন আমরা বিশ্বকাপে সেরকম কোনো পরিস্থিতি হলে আমরা তৈরি থাকি।’
নয় দলের ফরম্যাট বলে একদিকে এবার সুযোগটাও বেশি, সেটি ভুলছেন না মাশরাফি, ‘ অসম্ভব কোনো কিছুই না। অবশ্যই সম্ভব। তবে কঠিন অনেক কঠিন। এর আগে বিশ্বকাপে যেরকম ছিল গ্রুপ পর্যায়ে একটা বড় হারালে পারলে যেটা হতো…তাদের ফেরা কঠিন হয়ে যেত। এখানে নয়টা ম্যাচ। যারা প্রত্যাশা করছে সেমিফাইনাল খেলবে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক সুযোগ থাকবে। আমাদেরকে ওই জায়গাটা খেয়াল রাখতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশ তো এবার স্মরণকালের মধ্যে সম্ভাব্য সেরা দলটা নিয়েই যাচ্ছে। এই দলের কাছে প্রত্যাশাও তো বেশি থাকা উচিত? মাশরাফি এখানে একমত নন, ‘আপনারা যেটা বলেছেন, সেরা দল, এইটা গুরুত্বপূর্ণ না। এশিয়া কাপে এই দল নিয়েই গিয়েছিলাম। ট্রফি জিততে পারি নি, সেরা দলই ছিলাম। শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছিলাম। খুব আগের বিষয় না। এই দলই ছিল। এই ধুয়া তোলার কোনো প্রয়োজন নেই। দুই বছর আগে এই দলই খেলেছে। নতুন করে অসাধারণ এমন কিছু তাদের ভেতর আসেনি যে তারা এই মুহূর্তেই সেরা দল। সেরা দল সবসময় ভালো করে না। যারা মাঠে ভালো করে তাঁরাই ভালো করে।’
সেই মন্ত্রটাই মাশরাফি জপে দিতে চাইবেন দলের বাকিদের ওপর।