• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    টটেনহাম না আয়াক্স, কে এগিয়ে?

    টটেনহাম না আয়াক্স, কে এগিয়ে?    

    মৌসুমের শুরুতে এই ম্যাচের কথা কল্পনা করতে পারেননি কেউই। পাড় আয়াক্স, টটেনহাম হটস্পার ভক্তরাও খুব বেশি আশা করেননি। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে টটেনহাম হটস্পার আর আয়াক্সের সেমিফাইনাল উত্তাপ কমাচ্ছে না এতোটুকুও। বরং যোগ করছে বাড়তি মাত্রা। 

    ৫৭ বছর পর ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে উঠেছে টটেনহাম। আর আয়াক্সের অপেক্ষা ছিল ২২ বছরের। এবারের টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ফুটবল খেলা দলটির নামও আয়াক্স। সেটা শুধুমাত্র সেমিফাইনালে উঠে যাওয়ার জন্যই নয়। যেভাবে আয়াক্স সেমিফাইনালে উঠেছে সে কারণে। গ্রুপপর্বে বায়ার্ন মিউনিখকে দুইবারই আটকে দিয়েছিল আয়াক্স। এরপরের গল্পটা তো জানাই। রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসকে বিদায় করে দিয়ে সেমিফাইনালে উঠে যাওয়া দলটির নামই আয়াক্স। ​

    আয়াক্সের খেলার ধরনে অনেকে খুঁজে পান সেই ইয়োহান ক্রুইফের টোটাল ফুটবলের ছায়া। তার দর্শনই আয়াক্সের দর্শন। তবে এই আয়াক্স ঠিক ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলে না। রীতি মেনে একজন নাম্বার সিক্স, দুইজন নাম্বার এইটও নেই দলে। আছেন দুইজন নাম্বার সিক্স ও একজন নাম্বার এইট। সেটার কারণ ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ং। নাম্বার এইট সাধারণত খেলেন সিক্সের চেয়ে খানিকটা ওপরে। আর নাম্বার সিক্স নিচ থেকে খেলা বিল্ড আপে সাহায্য করেন।

    ডি ইয়ং আর লার্স শোন দুই নাম্বার সিক্স এই কাজটাই করেন। এদের মধ্যে ডি ইয়ং এর খেলা সম্পর্কে ধারণাটা তো স্পষ্টই হয়ে যাওয়ার কথা।  বল পায়ে তিনি প্রথমে পাস দেওয়ার চেষ্টা করেন, সেই সুযোগ না পেলে নিজেই কাটিয়ে নিয়ে যান। তার সহজাত খেলার ধরনে বল রিকভারি করার দুর্দান্ত ক্ষমতা ইউরোপের উঠতি তরুণদের মধ্যে অন্যতম সেরা বানিয়ে ফেলেছে তাকে। বার্সেলোনাও তাই ৭৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে ডি ইয়ংকে ভেড়াতে ভুল করেনি।

    সে কারণেই আয়াক্সের ফর্মেশনটা ৪-৩-৩ এর বদলে হয়ে যায় ৪-২-৩-১। দুই ডিপ লাইং মিডফিল্ডার শোন আর ডি ইয়ং। আর তাদের সামনে তিনজনের একজন হাকিম জিয়েচ খেলেন রাইট উইংয়ে। বাম পায়ের খেলোয়াড়, তাই কাট করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন প্রথমে। তার পাসিংও নিখুঁত, প্রথম চেষ্টায় কাট করতে না পারলে খালি জায়গায় থাকা সতীর্থদের খোঁজেন পাস দেওয়ার জন্য। আরেক উইংয়ে ডেভিড নেরেসের কাজও প্রায় একই। আর স্ট্রাইকার পজিশনে খেলা ডুসান টাডিচের ঠিক পেছনে ডনি ভ্যান ডি বিক। ২২ বছর বয়সী খেলেন নাম্বার টেন হিসেবে। টাডিচ স্ট্রাইকার না হলেও, এই দলের সঙ্গে তার সমন্বয়টা হয়েছে দারুণ। 

    তবে একটা জায়গায় সেটা আয়াক্সের জন্য কিছুটা দুশ্চিন্তারও। তুরিন, বার্নাব্যুর দুই ম্যাচেই বেশ কিছু গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছিল আয়াক্স। অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে ডিসিশন মেকিংএ গুলিয়ে ফেলার কারণেই বার বার সেটা হয়েছে। কখনও কখনও সোজাসুজি গোলে শট করার চেয়ে আয়াক্স মন দিয়েছে নিখুঁত হওয়ার দিকে। সেটার সুযোগ আগের দুই প্রতিপক্ষ না নিলেও টটেনহামের মতো গোছানো দল কাজে লাগিয়ে ফেলতে পারে।  

    অধিনায়ক আর রক্ষণের মূল ভরসা ১৯ বছর বয়সী ম্যাথিয়াস ডি লিটের ওপর ভরসা না করার কারণ নেই আয়াক্সের। তার সঙ্গে লেফটব্যাক পজিশনে খেলা আর্জেন্টাইন নিকোলাস টালিয়াফিকোও দারুণ। দলের প্রায় সব আক্রমণেই কম বেশি অবদান থাকে তার। আক্রমণে ওয়াইড স্পেসে ওভারল্যাপ করার চেয়ে আন্ডারল্যাপ করেন বেশি। ট্রাকব্যাক করার ক্ষেত্রে অবশ্য তিনি কিছুটা পিছিয়ে। সেক্ষেত্রে টটেনহাম কাজে লাগাতে পারে তার ফেলে যাওয়া জায়গাটাই। 

    কিন্তু প্রথম লেগে এই জায়গাটা খুব বেশি ভরসা যোগাচ্ছে না টটেনহামকে। হ্যারি কেইন তো ইনজুরির জন্যে নেই, নেই হিউং মিন সনও। ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে দুই লেগে ৩ গোল করেছিলেন দ.কোরিয়ান। কার্ডের খড়গে ঘরের মাঠের প্রথম লেগ খেলা হবে না তার। লুকাস মউরার নামার কথা রয়েছে। তার সঙ্গে খেলার কথা ফার্নান্দো ইয়োরেন্তের। 

    মউরার গতি থাকলেও, ইয়োরেন্তে একেবারেই ধীর গতির। ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে দ্বিতীয় লেগে তিনি নামার পরই খেলার গতি মন্থর হয়ে গিয়েছিল টটেনহামের। মিডফিল্ডেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল তারা। তাই মুসা সিসোকোর এই ম্যাচ খেলা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে টটনেহামের জন্য। সিটির সঙ্গে সিসোকো যতক্ষণ ছিলেন, ততক্ষণ টটেনহাম টেক্কা দিয়েছিল সমান তালে। স্পার্সের জন্য সুখবর হচ্ছে ম্যাচের আগের দিন পুরোদমে অনুশীলন করেছেন সিসোকো। তবে একাদশে আদৌ থাকবেন কী না- সেই নিশ্চয়তা নেই।  ইনজুরির কবল তো আছেই, সঙ্গে প্রিমিয়ার লিগে টানা খেলে যাওয়া টটেনহাম দলের বিশ্রামের অভাবটাও ব্যবধান গড়ে দিতে পারে ম্যাচে।  বিশেষ করে প্রতিপক্ষ আয়াক্স এই ম্যাচের আগে পেয়েছে প্রায় সপ্তাহখানেকের বিশ্রাম। তাই প্রথম লেগের আগে মিডফিল্ডের লড়াইয়ে আপাতত এগিয়ে আছে আয়াক্সই।

    ডি ইয়ংকে আটকাতে পারলে টটেনহামের কাজ এগিয়ে যাবে অনেকটাই। সে কারণেও তাদের প্রয়োজন সিসোকোকে। মিডফিল্ডে হ্যারি উইংক্সও নেই। তবে সিসোকো না থাকলে এরিক ডায়ার খেলতে পারেন তার জায়গায়। তিনি কতোখানি প্রভাব রাখতে পারেন- সেটার ওপরও নির্ভর করতে টটেনহামের ভাগ্য। 

     

     

    টটেনহাম আর আয়াক্সের অবশ্য একটা জায়গায় মিল আছে খেলার ধরনে। দুইদলই ফার্স্ট প্রেসে দারুণ। বল হারানোর পর ফল ব্যাক করে তাড়াতাড়ি বল উইন করার চেষ্টা করে দুইদল। তাই আক্ষরিক অর্থেই ফ্রি ফ্লুইড ফুটবল বলতে যা বোঝায় সেটাই অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। সেখানেও টটেনহাম খেলোয়াড়দের ক্লান্তির ছাপ প্রভাব রাখতে পারে খেলায়।

    তবে আয়াক্স এগিয়ে আছে আরও একটা জায়গায়। এই দলের ভয়-ডর বলতে নেই কিছুই। তুরিন, মাদ্রিদের রূপকথা সম্ভব করা দলের অবশ্য ভয় না থাকাই স্বাভাবিক।  লন্ডনের প্রথম লেগে হয়ত টাইয়ের নিষ্পত্তি হবে না, কিন্তু ম্যাচটা যে দুর্দান্ত হবে সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।