• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    বার্সেলোনা-লিভারপুল সেমিফাইনালের আগে পাঁচ প্রশ্ন

    বার্সেলোনা-লিভারপুল সেমিফাইনালের আগে পাঁচ প্রশ্ন    

    চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ন্যু ক্যাম্পে রাতে মুখোমুখি হচ্ছে বার্সেলোনা ও লিভারপুল । ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের সামনে টানা দ্বিতীয় ফাইনালের হাতছানি। আর লা লিগা জিতে যাওয়া বার্সার আসল পরীক্ষা শুরু এখান থেকেই।


    বার্সেলোনার আসল পরীক্ষা?

    লা লিগা জেতা হয়ে গেছে সপ্তাহের শুরুতেই। মৌসুমে বড় একটা কাজ শেষ বার্সেলোনার। কিন্তু আসল কাজটাই শুরু এবার। লিগে বার্সাকে এবার সেভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি কোনো দলই। একরকম হেসে খেলেই লিগ জিতেছে তারা। চ্যাম্পিয়নস লিগে নক আউট পর্বের দুই প্রতিপক্ষও তুলনামূলক সহজ ছিল তাদের জন্য। তবুও অলিম্পিক লিঁও আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রথম লেগের দুই ম্যাচেই খুঁড়িয়েছে এর্নেস্তো ভালভার্দের দল। লিভারপুল তাই বার্সেলোনার এই মৌসুমের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। হেসে খেলে জেতা লিগে বার্সার শেষদিককার পারফরম্যান্সও আরেকটা দুশ্চিন্তার কারণ ভালভার্দের জন্য।

    হয়তো সাম্প্রতিক ইতিহাসেও বার্সার সবচেয়ে বড় ম্যাচ এটাই। এর আগে টানা তিনবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়েছিল তারা। তিনবারই বার্সাই ছিল ফেভারিট। প্রথমবার অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সঙ্গে প্রথম লেগ জিতেও বাদ পড়তে হয়েছিল বার্সাকে। পরের বার দুর্দান্ত এক জুভেন্টাসের কাছে প্রথম লেগে ৩ গোল হজম করে দুই লেগেই বার্সা ছিল গোলশূন্য। আর শেষবার তো রোমাকে প্রথম লেগে উড়িয়ে দিয়েও পরের লেগে নাটকীয় এক হারে শেষ হয়েছিল বার্সার ইউরোপ যাত্রা। গত পাঁচবারের চারবারই লিগ জেতা বার্সার জন্য লিভারপুলের বিপক্ষে সেমিফাইনালটা তাই হতে পারে অগ্নিপরীক্ষাই।

    লিভারপুলের মিশন পসিবল?

    ইয়ুর্গেন ক্লপ অবশেষে একটা দল দাঁড় করিয়েছেন। প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাটাও টেক্কা দিচ্ছে যারা। এই লিভারপুল যে কোনো মূল্যে জিততে জানে যে কোনো মূল্যে। আরও বড় কথা, ভালো খেলেও জেতার কৌশলটা রপ্ত করে ফেলেছে ক্লপের দল। চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো নকআউট টুর্নামেন্টে যেটা খুবই কার্যকর। পোর্তোর বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের কথাই ধরা যাক। লিভারপুল শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা হেসে খেলেই জিতেছে। কিন্তু প্রতিপক্ষের চাপে বেশ কয়েকবার নুয়ে পড়ার মতো অবস্থা থেকেও দুর্দান্তভাবে ফিরে এসেছেন সালাহ, মানেরা। লিগেও স্নায়ুচাপ সামাল দেওয়া অভ্যাসে পরিণত করে শিরোপার পেছনে ছুটছে তারা। মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে ফরোয়ার্ডদের সঙ্গে নিয়মিত গোল পাচ্ছেন মিডফিল্ডাররাও। এই লিভারপুলের জন্য তাই মিশনটা খুবই পসিবল।

     

    ইতিহাস বদলাতে পারবে বার্সা?

    লিভারপুলকে কখনই চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় করতে পারেনি বার্সা। এমন কি বার্সা ন্যু ক্যাম্পেও কখনও হারাতে পারেনি লিভারপুলকে। ৪ বার ন্যু ক্যাম্প দেখেছে এই দুইদলের লড়াই, দুইবার হেরেছে বার্সা, দুইবার হয়েছে ড্র। একবার গোল পেয়েছিল তারা, সেটাও এক যুগ আগে ডেকোর করা।

    ন্যু ক্যাম্প আবার বার্সার দূর্গও। চ্যাম্পিয়নস লিগে ৩১ ম্যাচ ধরে নিজেদের মাঠে অপরাজিত বার্সা। ইউরোপে এমন রেকর্ড নেই একটিও। কিন্তু গেমস অফ থ্রোন্সের ব্যাটেল অফ উইন্টারফেলের মতো ক্রিপ্টটা শেষ পর্যন্ত নিরাপদ হবে তো বার্সার জন্য?

     

     

    সবশেষ বার্সাকে ঘরের মাঠে হারানো দলটি বায়ার্ন মিউনিখ। ২০১৩ সালে সেবারও লিগ জিতেছিল বার্সা। কিন্তু সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে দুই লেগ মিলিয়ে ৭-০ গোলে হেরে অপদস্ত হতে হয়েছিল মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তাদের। বায়ার্নের হাই টেম্পো, অ্যাথলেটিক ফুটবলের বিপক্ষে বার্সা হাবুডুবু খেয়ে বিদায় নিয়েছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে। সেই বায়ার্ন দলে ছিলেন জের্দান শাকিরি। অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে আরও একবার তাকেও নামিয়ে দিতেন পারেন ক্লপ। বায়ার্নের সেই দলের সঙ্গে মিল অবশ্য কম লিভারপুলের। তবে ৪-৩-৩ এ খেলা লিভারপুলের কৌশলটা সে সময়ের বায়ার্নের মতোই। দুইদলের স্ট্যামিনা আর এনার্জির পার্থক্যটাও তাই ব্যবধান গড়ে দিতে পারে ম্যাচে। 

    বিশেষ করে লিভারপুলের দুই ফুলব্যাল অ্যালেক্সান্ডার আর্নল্ড আর অ্যান্ড্রু রবার্টসন যদি বার্সার দুই ফুলব্যাককে নিজেদের অর্ধেই বন্দি করে রাখেন- সেটা হয়ে যেতে পারে টাই নির্ধারকও। গতবার ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল লিভারপুল। সিটিজেনরা দুই লেগের ম্যাচে খুব একটা পিছিয়ে ছিল না খেলার দিক দিয়ে। কিন্তু লিভারপুল কাজে লাগিয়েছিল অল্প সময়। ১৯ মিনিটের মধ্যে সিটির রক্ষণ এক্সপ্লয়েট করে ৩ গোল দিয়ে প্রথম লেগেই ম্যাচ প্রায় শেষ করে দিয়েছিল লিভারপুল। বার্সার জন্য এটা অশনী সংকেতও।

    ম্যান ইউনাইটেডের বিপক্ষে ন্যু ক্যাম্পে এবার শুরুতেই বেশ কিছু ভুল করে বসেছিল বার্সা।  তাদের কপাল অবশ্য ভালো, ইউনাইটেডের ফরোয়ার্ডরা গোল করে বসেননি। লিগেও সোসিয়েদাদ, ভিয়ারিয়াল, সেভিয়ার বিপক্ষে মোটামুটি নিয়মিত ভাবেই ম্যাচের ৯০ মিনিটের কোনো একটা অংশে খেই হারিয়েছে বার্সা। লিভারপুলের বিপক্ষে মনোসংযোগের নুন্যতম ব্যঘাত ঘটলেও সেটা বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দিতে পারে মেসিদের। সালাহ-মানে-ফিরমিনোরা সুযোগ হাতছাড়ার করার লোক নয়, বাকিদের মতো!

    ভালভার্দের কাজে লাগবে গার্দিওলার টোটকা?

    পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি এবার লিভারপুলের বিপক্ষে খেলেছে দুইবার। একবার তারা জিতেছে ২-১ গোলে। পরের বার গোলশূন্য ড্র হয়েছে ম্যাচ। ওই এগিয়ে থাকাটাই এখন শীর্ষে থাকতে সাহায্য করছে সিটিকে। শেষ পর্যন্ত লিগ শিরোপা ধরে রাখলে এই দুই ম্যাচের গুরুত্ব বেড়ে যাবে আরও।

    সিটি ওই দুই ম্যাচে লিভারপুলকে আটকাতে বাধ্য হয়েই নিজেদের খেলার ধরন বদলে ফেলেছিল। লং বলে খেলেছিল গার্দিওলার দল। বার্সা অবশ্য কখনই লং বলে খেলেনি, কিন্তু শেষ অপশন হিসেবে লিভারপুলের বিপক্ষে সেটাও বিবেচনা করতে হচ্ছে তাদের।

    ভালভার্দে তাই গার্দিওলার কৌশলই রপ্ত করার চেষ্টা করছেন। সাধারণত লিভারপুল প্রতিপক্ষের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে যায় ফার্স্ট প্রেসিংয়ে। আর কয়েকজন মিলে প্রেস করে প্রতিপক্ষকে ভড়কে ক্লপের দলের সহজাত প্রবৃত্তি। ভালভার্দে তাই ম্যাচের করে নিচ্ছেন ভিডিও অ্যানালাইসিস। ২৪ টি ম্যাচ নিয়ে বসেছেন লিভারপুলের, তবে সিটি-লিভারপুলের এই মৌসুমের দুইটি ম্যাচ বারবার দেখছেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।

    ভালভার্দে নিজেও সেটা লুকাচ্ছেন না। বলছেন, "লিভারপুলের বিপক্ষে খেলার আগে ভিডিওগুলো দেখছি। ওরা কীভাবে খেলে, কেমন করে ড্রিবল করে, বিশেষ মুহুর্তে কীভাবে রিঅ্যাক্ট করছে, কোন পায়ে খেলছে বেশি- সবকিছুই দেখছি।"

    "ধরুন অ্যান্ড্রু রবার্টসন কোথায় ক্রস করে, কখন করে। ফিরমিনো কি ফ্রন্ট পোস্টে থাকে? নাকি ব্যাক পোস্টে আক্রমণ করে। যেভাবে সম্ভব, যতটুকু সম্ভব আমি গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি এসব দেখে।"

    বার্সেলোনার সমস্যা আছে আরও একটি। কয়েকদিন আগে শিরোপা উৎসবে মেতেছিল তারা। এরপর আবার এমন ম্যাচে ফোকাস করার মানসিকতাটা ভালভার্দেকে ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে।  

    লড়াইটা মেসি বনাম ভ্যান ডাইকেরও? 

    লিভারপুলের রক্ষণের পুরো চেহারাই পালটে দিয়েছেন ভার্জিল ভ্যান ডাইক। রক্ষণে যেমন দুর্দান্ত, সেটপিস থেকে গোল করার ক্ষেত্রেও পটু তিনি। মিডফিল্ড থেকে লং বল পাঠিয়েও দলকে সাহায্য করেন আক্রমণে। এই দুই দলের পার্থক্যটা আসলে এক জায়গায়। একদলে লিওনেল মেসি আছেন, আরেক দলে নেই। মেসির থাকাটা এগিয়ে কিছুটা এগিয়ে রাখছে বার্সা। বিশেষ করে এই মৌসুমে যেমন ফর্মে আছেন মেসি, তার কাছ থেকে লিভারপুলের বিপক্ষে প্রত্যাশাও   বেশি তার দলের। কিন্তু মেসি যেমনই হোন, তাকে আটকানোর জন্য যদি এই মুহুর্তে এক ঝাঁক ডিফেন্ডারদের নাম ঘোষণা করা হয়- সেখানে সবার আগে আসবেন ভ্যান ডাইক।  ডাচ ডিফেন্ডার কয়েকদি আগে প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগেও মেসির মুখোমুখি হয়েছিলেন সেল্টিকে থাকতে। তখনও তাকে আটকে দিয়েছেন ভ্যান ডাইক। মেসি না থাকলেও, মেসিকে আটকানোর অস্ত্রটা তাই লিভারপুলের কাছে আছে।