পাহাড় অতিক্রম করতে হবে লিভারপুলকে, কিন্তু কীভাবে?
ন্যু ক্যাম্পে ৩-০ গোলের হারের পরও সব আশা শেষ হয়ে যায়নি লিভারপুলের। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগটা অ্যানফিল্ডে। আর চ্যাম্পিয়নস লিগের রাত মানেই অ্যানফিল্ডে বিশেষ কিছু। ফ্লাডলাইটের আলোয়, ইতিহাস-ঐতিহ্যএকাকার করে সমর্থকদের প্রাণ উজাড় করে দেওয়া সমর্থন প্রতিপক্ষ যে কোনো দলকেই ভড়কে দেয়। প্রথম লেগে নিজেদের পারফরম্যান্স আর এই বিশ্বাসটুকু পুঁজি করে দ্বিতীয় লেগে খেলতে নামার কথা ছিল লিভারপুলের।
কিন্তু সেই বিশ্বাসে চিড় ধরেছিল রবার্তো ফিরমিনোকে হারিয়ে। আনফিট ফিরমিনো প্রথম লেগে নেমেছিলেন বদলি হয়ে। তাকে ছাড়া লিভারপুল ত্রয়ীর খেলার ধরনটাই আমূল পালটে যায়। সাদিও মানে-মোহামেদ সালাহরা তাই অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েন। সেই সমস্যার সঙ্গে পরে আবার যোগ হয়েছে, সালাহ নিজেও খেলতে পারবেন না বার্সেলোনার বিপক্ষে। নিউক্যাসেলের বিপক্ষে ম্যাচের ৭০ মিনিটে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন গোলরক্ষকের সঙ্গে সংঘর্ষে। মাথায় আঘাত, তাই ঝুঁকি নিতে পারেনি লিভারপুল। সালাহও তাই বাদ পড়েছেন দ্বিতীয় লেগ থেকে।
অন্তত ৩ গোল করতে হবে লিভারপুলকে, গোল হজমও করা যাবে না। একটি গোল হজম করলে তার বিপরীতে দিতে হবে দুইটি গোল। এমন ম্যাচেই আক্রমণের দুইজনকে হারিয়ে তাই ম্যাচ শুরুর আগে আরও খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে লিভারপুল।
কিন্তু কাজটা একেবারে অসম্ভবও নয়। বার্সেলোনাকে হারিয়ে দিতে পারলে হয়ত চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের সেরা 'কামব্যাকের' আরেকটি উদাহরণ সৃষ্টি করবে লিভারপুল। এমন মিরাকল আগেও ঘটিয়েছে লিভারপুল। ২০০৫ সালে ইস্তাম্বুলে এসি মিলানের সঙ্গে ফাইনালে প্রথমার্ধে ৩ গোলে পিছিয়ে পড়েও পড়ে ৩ গোল দিয়েছিল তারা। পরে টাইব্রেকারে সেসময়ের ফেভারিট মিলানকে স্তব্ধ করে দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে জেতে লিভারপুল।
চ্যাম্পিয়নস লিগে রূপকথার মতো ফিরে আসার গল্পের মুদ্রার দুই পিঠ দেখা আছে বার্সারও। পিএসজির কাছে ৪-০ গোলে হেরে দ্বিতীয় লেগে তারা জিতেছিল ৬-১ গোলে। আর পরেরবার কোয়ার্টার ফাইনালে রোমার সঙ্গে ৩-১ গোলে জেতার পর দ্বিতীয় লেগে রোমে ৩-০ গোলে হেরে বাদ পড়ার ইতিহাসও আছে বার্সার।
সেই দলের ম্যানেজার ছিলেন এর্নেস্তো ভালভার্দেই। রোমের গল্প থেকে বিন্দুমাত্র শিক্ষা নিয়ে থাকলেও অ্যানফিল্ডে কী করতে হবে সেটা জেনে যাওয়ার কথা তার। লিভারপুল একটি দ্রুত গোল দিয়ে দিতে পারলে আরও একবার চাপেই পড়ে যাবে বার্সা। তাই শুরু থেকেই স্নায়ুচাপ সামাল দিয়ে নিজেদের স্বভাবসুলভ খেলাটাই খেলে যাওয়াই ভালভার্দের লক্ষ্য।
অ্যানফিল্ডে একটি গোল করতে পারলে অবশ্য অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে বার্সার ফাইনাল। ন্যু ক্যাম্পের দ্বিতীয় লেগে বার্সাকে খেলতে হয়েছিল কাউন্টার অ্যাটাকে। লিভারপুলেও ছিলেন না ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার আর্নল্ড। তাই লেফটব্যাক অ্যান্ড্রু রবার্টসন ভোগালেও, বার্সাকে আরেক উইংয় নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয়নি। লিভারপুলের দুই ফুলব্যাককে নিজেদের অর্ধে ব্যস্ত রাখতে পারলে ম্যাচটাও অনেকটাই হাতের মুঠোয় চলে আসার কথা বার্সা। কিন্তু সেটার জন্য উসমান ডেম্বেলের গতিটা হয়ত ম্যাচের কোনো একটা সময় দরকারি হয়ে পড়তে হতে পারে ভালভার্দের। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁর অভাবটা বোধ করতে চাইবেন না বার্সা ম্যানেজার। কারণ ইনজুরির কারণে বাদ পড়েছেন ডেম্বেলেও।
লিভারপুল যতই ছক কষুক, আত্মবিশ্বাস যতখানিই চাঙ্গা থাকুক- ইয়ুর্গেন ক্লপের দলকে এর বাইরেও একটা কাজ করতে হবে। করতে হবে আসলে প্রার্থনা। লিওনেল মেসি যেন এই ম্যাচটা অন্তত ছায়া হয়ে কাটিয়ে দিক- সেটাই চাইবে লিভারপুল। প্রথম লেগে ভালো খেলেও পরে লিভারপুলের ছিটকে গেছে তো এক মেসির কাছেই। আর অতীত ইতিহাস বলছে- মেসি ঝিমিয়ে গেলে ঝিমিয়ে যায় বার্সাও। এই মৌসুমে সেটা প্রমাণ হয়েছে বারবার।
এসব কিছুর বাইরেও আর একটা দিকে আকর্ষণ থাকবে এই ম্যাচের। অ্যানফিল্ডে ফিরবেন লিভারপুলের সাবেক দুই খেলোয়াড়। বার্সার জার্সিতে। লুইস সুয়ারেজ আর ফিলিপ কৌতিনহো দুইজনই ছিলেন সমর্থকপ্রিয়। সুয়ারেজের প্রথম গোলটি ম্যাচে বার্সাকে এগিয়ে দিয়েছিল। তখনও পর্যন্ত মেসির অবদান তেমন ছিল না ম্যাচে। সালাহ-ফিরমিনোরা নেই, কিন্তু অন্যদিকে বার্সার গেমচেঞ্জারের অভাবও নেই। এই দুইজনের একজনের হাতেও লেখা হয়ে যেতে পারে লিভারপুলের ইউরোপ যাত্রার সমাপ্তিটা।