• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    অলৌকিক আমস্টারডামের পর ফাইনালে টটেনহাম

    অলৌকিক আমস্টারডামের পর ফাইনালে টটেনহাম    

    মাথিয়াস ডি লিট এবং হাকিম জিয়েচের গোলের পরও এতটা ভুগতে হবে ফাইনালে যেতে, সেটা হয়তো ভাবেনি আয়াক্সও। লুকাস মউরার জোড়া গোলে ম্যাচে ফেরা স্পার্স পেল কর্নার। ইয়ান ভার্টনহেনের শট ফিরে আসল ক্রসবারে প্রতিহত হয়ে, ফিরতি বলও আয়াক্স ফিরিয়ে দিল লাইন থেকে। স্বপ্নের ফাইনাল থেকে মাত্র মিনিট কয়েক দূরে আয়াক্স। চ্যাম্পিয়নস লিগে এবার যেন শেষের জন্যই বরাদ্দ ছিল সব রোমাঞ্চ। যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে ফার্নান্দো ইয়োরেন্তের পাস থেকে ডিবক্সে বল পেলেন মউরা। ভার্টনগেন যা পারেননি, সেটাই করলেন লুকাস। আবারও খুঁজে পেলেন জাল। লুকাস হ্যাটট্রিকে অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনে আয়াক্সকে টপকে ২০১৮-১৯ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে চলে গেল টটেনহাম হটস্পার, সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে লিভারপুল। ৩-২ গোলের জয়, অ্যাগ্রিগ্রেটে ৩-৩। 'অ্যাওয়ে' গোলেই বিদায় নিল আয়াক্স। চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথমে গোল করে এবারই প্রথম কোনও ম্যাচ হারল আয়াক্স।

    ১৯৯৬-এর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের এত কাছে আসা হয়নি আয়াক্সের। ম্যাচ শেষে তা ডি বিক-ডি ইয়ংরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেও আমস্টারডাম ছিল উৎসবমুখর। ফাইনালে যেতে না পারায় দুয়ো নয়, এতদূর আসতে পারায় প্রিয় দলকে অভিবাদনই জানিয়েছে তারা। অবশ্য প্রথমার্ধ শেষে হয়তো মাদ্রিদের টিকেট কাটার প্রস্তুতিই নিচ্ছিলেন তারা। ২ গোলের লিডে শেষ করা অর্ধে স্পার্সকে পাত্তাই দেয়নি তারা। ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনাতে আজকের প্রথমার্ধ যেন গত সপ্তাহেরই ‘কার্বন কপি’। ম্যাচের প্রথম বাঁশি থেকে স্বভাবসুলভ প্রেসিং ফুটবলে স্পার্সকে চেপে ধরে আয়াক্স। অসাধারণ পাসিং, রক্ষণ ছেড়ে মাথিয়াস ডি লিটদের আক্রমণে যোগ দেওয়া- আক্ষরিক অর্থেই নিজেদের ‘ট্রেডমার্ক’ ‘টোটাল’ ফুটবলের সব টোটকাই আজ দেখিয়েছে এরিক টেন হাগের দল। লিড নিতেও প্রথম লেগের মত সময় নেয়নি তারা।

    ৪ মিনিটে দুসান তাদিচের শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন স্পার্স গোলরক্ষক হুগো লরিস। কিন্তু ফিরতি কর্নারে হেড করে দলকে এগিয়ে নেন আয়াক্সের ১৯-বছর বয়সী অধিনায়ক ডি লিট। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে মাত্র ৪র্থ ‘টিনএজার’ হিসেবে সেমিতে গোল পেলেন তিনি। একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে গোল করেছেন কোয়ার্টার এবং সেমিতে। গোলের পর থেকে প্রথমার্ধের বাকিটা সময় আমস্টারডাম অ্যারেনায় সমর্থকেরা মেতেছিলেন কিংবদন্তী গায়ক বব মার্লির ‘থ্রি লিটল বার্ডস’ গানে। ‘এভ্রিথিংস গনা বি অলরাইট’ কোরাসে মুখরিত ছিল পুরো স্টেডিয়াম। দুই গোলের লিড নেওয়া আয়াক্সের সমর্থকদের তো এমন বুলি আওড়ানো আসেই। প্রথমার্ধে শুধু গোল নয়, আয়াক্সের পুরো খেলাই ছিল চোখে লেগে থাকার মত। বিশেষ করে স্পার্সের ফুটবলারদের সাথে বল দখলের লড়াইটাও ছিল দারুণ।

     

     

    রোজা রেখেই খুব সম্ভবত মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নেমেছিলেন আয়াক্সের হাকিম জিয়েচ এবং মাজরাউই। ম্যাচের মধ্যেই করেছেন ইফতার। সারাদিনের রোজা এতটুকু গ্রাস করতে পারেনি তাদের। উল্টো আয়াক্সকে আবারও উল্লাসে মাতিয়েছেন তারাই। ৩৫ মিনিটে নিজেদের অর্ধে হিউঙ-মিন সনের থেকে বল কেড়ে নিয়েছিলেন মাজরাউই। পাস দিয়েছিলেন তাদিচকে, স্পার্স বক্সে থাকা জিয়েচকে পাস বাড়িয়েছিলেন তিনি। প্রথম টাচেই আগুনে এক শটে লরিসকে আবারও পরাস্ত করেন তিনি। প্রথমার্ধের শেষদিকে প্রায় পুরো মাঠ দৌড়ে জিয়েচ বল কেড়ে নিয়েছিলেন ড্যানি রোজের পা থকে। ‘জিয়েচ! জিয়েচ!!’ চিৎকারেই শেষ হয়েছে প্রথমার্ধ।

     

     

    ক্যারিয়ারে ‘হাফটাইম টিমটক’ দিয়েছেন অনেক, কিন্তু আজকের মত হয়তো গুরুত্বপূর্ণ ছিল না কোনওটিই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া স্পার্সকে অনুপ্রাণিত করার দায়িত্বটা ছিল কোচ মরিসিও পচেত্তিনোর ওপরই। কাজটা ঠিকই করেছেন, সাথে দিয়েছেন নিজের ক্ষুরধার ট্যাকটিক্যাল মস্তিষ্কের পরিচয়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ভিক্টর ওয়ানইয়ামার বদলে নামিয়ে দিয়েছেন ফার্নান্দো ইয়োরেন্তেকে, আর তাতেই বদলে গেছে স্পার্স। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা আয়াক্স সমর্থকেরা করেছিল বব মার্লির আরেক বিখ্যাত গান ‘থ্রি লিটল বার্ডস’-এর ‘ডোন্ট ওরি অ্যাবাউট আ থিং’ দিয়ে। কিন্তু স্পার্সের দারুণ ফেরায় দুশ্চিন্তায় ঠিকই পড়তে হয়েছে টেন হাগের দলকে। শুরুটা করেছিলেন লুকাসই। ৫৪ মিনিটে ড্যালে আলির শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ওনানা, কিন্তু মিনিটখানেক পর তার পাস থেকেই ব্যবধান কমান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।

     

     

    প্রথমার্ধে আয়াক্সের সেই প্রেসিং ফুটবলের দেখাই মেলেনি দ্বিতীয়ার্ধে, উল্টো স্পার্সকে আটকাতে কিছুটা রক্ষণাত্মকই খেলতে হয়েছে তাদের। তার নামার পরই ম্যাচে ফেরে স্পার্স। তবে সেই ইয়োরেন্তেই গোলের সামনে থেকে মিস করেছেন দ্বিতীয়ার্ধের সবচেয়ে সহজ সুযোগ। কিন্তু আলির মত ইয়োরেন্তের মিসেও ভুগতে হয়নি স্পার্সকে। এবারও ত্রাণকর্তা লুকাস। ৫৯ মিনিটে ইয়োরেন্তের সেই মিসের পরই ফিরতি বলে শোনেকে কাটিয়ে দুর্দান্ত গোলে ম্যাচে সমতা আনেন স্পার্স ফরোয়ার্ড। সন-ইয়োরেন্তে থাকলেও এক লুকাসকে সামলাতেই গলদঘর্ম হচ্ছিল আয়াক্সের। ৬৫ মিনিটেই হ্যাটট্রিক পেতে পারতেন তিনি, ডি লিটের দুর্দান্ত ব্লকে অপেক্ষা বেড়েছে তার। স্পার্স তাদের নাড়িয়ে দিলেও ছেড়ে কথা বলেনি আয়াক্সও।

    প্রথমার্ধের চেয়ে আক্রমণের ধার কিছুটা কমলেও গোলের সুযোগ ঠিকই পেয়েছে তারা। ৭২ মিনিটে সেই তাদিচ-জিয়েচেই লিড নিতে পারত আয়াক্স, কিন্তু এবার মরক্কোর ফরোয়ার্ডের শট চলে যায় গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। ৭৮ মিনিটে তাদিচকেও ফিরিয়েছেন লরিস। লুকাস হ্যাটট্রিক করলেও স্পার্সকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন লরিসই। অবশ্য ভাগ্যও সহায় ছিল ফ্রেঞ্চ অধিনায়কের। শেষদিকে জিয়েচের শট প্রতিহত হয়েছে বারপোস্টে। ভার্টনগেনের মিসে স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ ভাবলেও শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হেসেছে স্পার্সই। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে স্পার্স। ২০০৮-০৯ মৌসুমের পর এবারই প্রথম ‘অল ইংলিশ’ ফাইনাল পেল চ্যাম্পিয়নস লিগ।