সিরি আ : শেষদিনের যত সমীকরণ
সিরি আর শিরোপা নিয়ে এবার প্রতিদ্বন্দ্বীতা একেবারেই হয়নি। দ্বিতীয় স্থানটাও অনেকদিন ধরে নিজেদের করে রেখেছে নাপোলি। যা রোমাঞ্জ তার পুরোটাই তৃতীয় আর চতুর্থ হওয়া নিয়ে। প্রিমিয়ার লিগে এক সপ্তাহ আগে শীর্ষ চারের শেষ দুই দল নিশ্চিত হয়ে গেলেও, সিরি আ ঝুলে আছে এখনও। শেষ ম্যাচ ডে তেই নির্ধারণ হচ্ছে শেষ দুইটি স্থান।
পয়েন্ট টেবিলে আপাতত ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে এবারের চমক আটালান্টা। সমান পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে ইন্টার মিলান। তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানও আছে লড়াইয়ে, ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে রোসোনেরিদের অবস্থান ৫ এ। গাণিতিক হিসাবে টিকে আছে রোমাও। জুভেন্টাসকে হারানোর পর সাসুউলোর সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেই কপাল পুড়েছে তাদের। ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে মিলানের পর অবস্থান তাদের। রোমাকে তাই পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে হলে অপেক্ষা করতে হচ্ছেম মিরাকলের জন্য।
তবে আটালান্টার জন্য কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগটা মোটেই মিরাকল নয়। এই মৌসুমে দুর্দান্ত খেলেছে তারা। জুভেন্টাসের বিপক্ষে তুরিনে আগের ম্যাচে জিততে জিততেও আর জেতা হয়নি তাদের। নইলে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার নিশ্চয়তাটা আগেই পেয়ে যেতে পারত তারা। শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে তাদের প্রতিপক্ষ সাসুউলো। কোপা ইতালিয়ার ফাইনালে লাতসিওর কাছে হেরে গিয়ে শিরোপা বঞ্চিত হতে হয়েছিল আটালান্টার। বড় ম্যাচ খেলার অনভিজ্ঞতা ভুগিয়েছে তাদের। তবে এই ম্যাচটা জিতলে সেই আক্ষেপ ভুলে যাবে তারা, সুযোগ পাবে চ্যাম্পিয়নস লিগে। কিন্তু স্নায়ুর চাপটা কি ধরে রেখে পুরো মৌসুমের দুর্দান্ত ফুটবল খেলার উপহারটা কি আদায় করে নিতে পারবে তারা?
জিতে গেলে আটালান্টা সিরি আ শেষ করতে তিনে থেকে। অথচ এক মাস আগেও ইন্টারের জন্যই বরাদ্দ ছিল এই জায়গাটা। শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ এম্পোলি। রেলিগেশন বাঁচাতে লড়ছে তারা। শেষদিনে জয় প্রয়োজন তাদেরও। দুই দলের পার্থক্য অনেক, ইন্টারই ম্যাচে পরিস্কার ফেভারেট। কিন্তু দরকারের সময় ইন্টারের নুয়ে পড়ার বদনামটা আছে বলেই হয়ত স্বপ্ন দেখতে পারছে এম্পোলি। পিএসভি, আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময় এবার হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে ইন্টার। পরের মৌসুমে তাই নতুন ম্যানেজারও আনছে তারা। আন্তোনিও কন্তের ইন্টারে আসা সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছে। কিন্তু তার আগে লুসিয়ানো স্প্যালেত্তি ঘরের মাঠে এম্পোলির বিপক্ষে জয় এনে না দিতে পারলে হয়ত ইউরোপা লিগেই খেলতে হতে পারে ইন্টারকে।
ইন্টার বা আটালান্টার কেউ জিততে না পারলেই ভাগ্য খুলে যাবে মিলানের। জেনেরো গাত্তুসোর দল শেষ ম্যাচ খেলতে স্পালের বিপক্ষে তাদের মাঠে। রোলার কোস্টার মৌসুমে শেষদিকে গিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নিতে পারলে হয়ত গাত্তুসোর চাকরিটাও টিকে যাবে আরেকবার। নইলে ছাঁটাই হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে দাবি করছে ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যমগুলো। তারা অবশ্য বলছে ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন, গাত্তুসোকে রাখবে না মিলান। তবে শেষ চেষ্টাটা না করেই নিশ্চয়ই ছাড় দেবেন না গাত্তুসো।
চ্যাম্পিয়নস লিগের আলোকছটায় জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্নের মতো সিরি আর শেষদিনে আছে রেলিগেশনে পড়ার দুঃস্বপ্নও। ফ্রোসিনোনে আর কিয়েভোর রেলিগেশন নিশ্চিত। এম্পোলির সঙ্গে ঝুলে আছে উদিনেসে, জেনোয়া ও ফিওরেন্টিনার ভাগ্য। ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে রেলিগেশন জোনে আছে জেনোয়া, ৩৮ নিয়ে তার এক ধাপ ওপরে এম্পোলি। ৪০ পয়েন্ট নিয়েও নিরাপদ নয় ফিওরেন্টিনা। আর শেষ ম্যাচটাও পড়েছে ইতালির ঐতিহ্যবাহী দুই ক্লাবের, ফিওরেন্টিনার মাঠে খেলতে যাবে জেনোয়া। হেরে গেলে প্রায় এক যুগ পর রেলিগেশনে পড়তে হবে জেনোয়াকে। উদিনেসে ক্যালিয়ারির বিপক্ষে জিততে না পারলে এই ম্যাচের ফল অবশ্য প্রভাব ফেলবে না ফিওরেন্টিনার ওপর। তবে সেরকম না হলে, ২০০২-০৩ সালের পর রেলিগেশনে পড়তে হবে ফিওরেন্টিনাকে।