অস্বস্তির সঙ্গে কার্ডিফে মধুর সমস্যাও পেলেন মাশরাফি
ভারত ৫০ ওভারে ৩৫৯/৯ (ধোনি ১১৩, রাহুল ১০৮; সাকিব ২/৫৮, রুবেল ২/৬২, সাইফ উদ্দিন ১/২৭, সাব্বির ১/৩০, মোস্তাফিজ ১/৪৩ )
বাংলাদেশ ৪৯.৩ ওভারে ২৬৪ (মুশফিক ৯০, লিটন ৭৩, মিরাজ ২৭, সৌম্য ২৫; কুলদীপ ৩/৪৭)
ফলঃ ভারতের ৯৫ রানে জয়ী
মাশরাফি বিন মুর্তজার নিজেরই না খেলার সম্ভাবনা ছিল। পুরনো হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট খানিকটা ভোগাচ্ছে, আজ দুর্দান্ত প্রথম স্পেলের পর অবশ্য আর বলই করলেন না। তামিম ইকবালও সতর্কতা হিসেবে বাইরে ছিলেন। এসব অবশ্য সান্ত্বনার মতো মনে হতে আপনার। প্রশ্ন তুলতে পারেন, ভারতের সঙ্গে ৯৫ রানে হেরে বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস একটু ধাক্কা খেতেও পারে। তবে মাশরাফিকে পরাজয়ের চেয়েও নিশ্চিতভাবে অন্য কিছুই ভাবাবে। বিশ্বকাপের আগে কিছু চিন্তা যেমন আছে, তেমনি মধুর সংকটও যে তৈরি হয়েছে আজকের ম্যাচের পর।
ভালো খবরটাই আগে বলা যাক। লিটন দাসের জায়গায় যে সৌম্য সরকারই ওপেনার হিসেবে তামিমের সঙ্গী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে, সেটা এখন পরিষ্কার। তবে তামিমের চোটে পুরনো পজিশনে ফিরে আজ রান পেয়েছেন আবার। শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না লিটন, বুমরা-শামির ভুগিয়েছিলেন বেশ। ইনসাইড এজ হয়েছিল বেশ কয়েকবার, যার একটি বোল্ড হতে পারত। তবে শুরুর জড়তা সামলে পরে লিটন খেলেছেন হাত খুলে, নিজের জাত চেনানো দারুণ কিছু শটও খেলেছেন। ব্যাট বদলে মনযোগ না নড়ে গেলে ৭৩ রানের ইনিংসটা বড় হতে পারত আরও। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৬ রানের পর আজকের ইনিংসে নিজের দাবিটা আরও একবার জানান দিলেন।
তিনে সাকিব অবশ্য আজ প্রথম বলেই আউট হয়ে গেছেন। তাঁর ব্যাটিং প্রস্তুতি নিয়ে কিছু বলারও সুযোগ নেই তাই। চারে মুশফিক খেলছেন, আজ ৯০ রানের ইনিংসে আরও একবার বার্তা দিলেন, কেন তাঁকে বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মনে করা হয়। শুরুর দিকে স্লথ হলেও পরে হাত খুলে খেলেছেন, স্লগ সুইপে কুলদীপকে ছয়টা অনেক আত্মবিশ্বাস দেবে তাঁকে। সমস্যা হচ্ছে পাঁচ, ছয়, সাতে মিঠুন, সাব্বির, মোসাদ্দেকের কেউ ব্যাটিং প্র্যাকটিসটা করতেই পারলেন না। মিঠুন আর মোসাদ্দেক যেভাবে রিস্ট স্পিনারের বলে আউট হলেন, তাতে তাহিরকে পরের ম্যাচে খেলার আগে অনুশীলনে বিস্তর খাটাখাটনি করতে হবে তাদের। ত্রিদেশীয় সিরিজে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু সাব্বিরই রান পাননি, আজ ছিল কিছু করার মোক্ষম সুযোগ। মোসাদ্দেকের সঙ্গে সাতের লড়াইয়েরও মীমাংসা হলো না, ৭ রান করেই আউট হয়ে গেলেন।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে বরং কিছুটা প্রাপ্তি আছে মিরাজ-সাইফ উদ্দিনে। আয়ারল্যান্ডে ব্যাট করারই সুযোগ মেলেনি তাঁদের, আজ নবম উইকেটে দুজন যোগ করলেন ৪৬ রান। মিরাজই ছিলেন বেশি সপ্রতিভ, এখানে কিছুটা বোনাস পয়েন্ট পাচ্ছেন।
যদিও বোলিংয়ে কিছুটা মাইনাস পয়েন্ট যোগ হয়েছে মিরাজের। ভারতের বিপক্ষে অফ স্পিনারদের ভোগাটা নতুন কিছু নয়, তার ওপর ইংলিশ কন্ডিশনে কাজটা আরও কঠিন। মিরাজ বলও করেছেন এলোমেলো, আজ তিনটি ওয়াইডই দিয়েছেন। সাকিব-মোসাদ্দেকও ভালো করতে পারেননি, বরং সাব্বিরই চমকে দেওয়ার মতোই ভালো বল করেছেন। তবে চার স্পিনারের ১৯ ওভারে আসলে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেছে, ওখানে জিতে গেছে ভারত।
মাশরাফি হয়তো তাতে খুব বেশি মন খারাপ করবেন না। নিজের তো বটেই, সতীর্থ পেসারদের বলও যে আশা জাগানিয়া ছিল। নতুন বল পেয়ে আজ দারুণ করেছেন মোস্তাফিজ্, ধাওয়ানকে রীতিমতো ভুগিয়েই তুলে নিয়েছেন। সাইফ উদ্দিন মাঝে বল করতে এসে বার্তা দিয়েছেন, কেন এই মুহূর্তে তাঁকে বোলিংয়ের বড় ভরসা মনে করা হচ্ছে। কোহলিকে আউট করা বাংলাদেশের সেরা বলটাও তাঁর। রুবেল রোহিতকে তুলে নিলেও একটু এলোমেলো ছিলেন, কিছুটা পিছিয়েই গেলেন একাদশে থাকার দৌড়ে। আর মাশরাফি নিজে তো প্রথম ৬ ওভারে দুর্দান্তই ছিলেন। সাইফ উদ্দিন আর নিজে সম্ভবত ঝুঁকি নিতে চাননি বলে পরে আর বলই করেননি, ডেথ ওভারে সাকিব-সাব্বিরদের দিয়ে কিছুটা কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে। সাকিবও হালকা চোট থেকে ফিরে আজ তেমন কিছু করতে পারেননি, তবে তাঁকে নিয়ে কোনো দুর্ভাবনা থাকার কথা নয় মাশরাফির।
সবচেয়ে বড় কথা, ২ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একাদশটাও হয়তো আজকের ম্যাচের পর পেয়ে গেলেন মাশরাফি।