'পুরনো' ক্রিকেটেই নতুন ভোর?
দেশ ছাড়ার আগে মাশরাফি বিন মুর্তজা বলে গিয়েছিলেন, স্বপ্নটা গন্ডির ভেতর রাখার জন্য। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা কেউই বাংলাদেশকে ফেবারিটদের তালিকায় রাখছেন না, মাশরাফি নিজেও দেশ ছাড়ার আগে বলে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে ওঠা হবে খুব খুব কঠিন। ত্রিদেশীয় সিরিজ তারপরও আশা দেখাবে বাংলাদেশকে, তবে বিশ্বকাপের চ্যালেঞ্জ হবে অনেক অনেক বড়
‘পুরনো’ ক্রিকেটেই নতুন ভোর?
স্কাই স্পোর্টসে নিজের বিষেশজ্ঞ কলামে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইন বলেছেন, বাংলাদেশ এখনও কিছুটা ‘ওল্ড ফ্যাশনড’ ক্রিকেট খেলতে অভ্যস্ত। মাশরাফি নিজেও স্বীকার করেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড বা অন্য অনেক দেশের মতো সেরকম পাওয়ার হিটার নেই তাদের। নিজেদের ফর্মুলায় খেলেই তাই পেতে হয় জয়। কী সেই ফর্মুলা? আগে ব্যাট করলে ৩২০-৩৩০ করা, আর পরে ব্যাট করলে প্রতিপক্ষকে ৩০০-৩২০ রানের মধ্যে আটকে রেখা। ৩৫০ রান তাড়া করার সামর্থ্য আছে কি না, সেটি নিয়ে অধিনায়কের নিজেরই প্রশ্ন আছে। আর ইংল্যান্ডের উইকেটে সেই কাজটা করতে হতে পারে নিয়মিতই। তারপরও বাংলাদেশ ভরসা রাখছে নিজেদের সামর্থ্যের ওপরেই।
স্পিন কাজে আসবে কতটা?
ত্রিদেশীয় সিরিজে সাকিব-মিরাজরা বেশ ভালো করেছেন, তবে বিশ্বকাপে কতটা কী করবেন সেটি নিয়ে থেকে গেছে সংশয়। বিশেষ করে কার্ডিফে সাকিব-মিরাজের নির্বিষ বোলিং সেই প্রশ্নটা আরও বেশি করে তুলে দিয়েছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পরিকলনায় খুব ভালোভাবেই আছেন দুজন, বিশেষ করে উপমহাদেশের দলগুলোর বিপক্ষে আর টুর্নামেন্টের শেষের দিকে। মোসাদ্দেক-মাহমুদউল্লাহও দলের পরিকল্পনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই দুজনের পার্ট টাইম স্পিনের ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু।
সাতে মোসাদ্দেক না সাব্বির?
সাব্বির রহমানকে সাতে ভেবে সেই নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগ থেকে ছক কেটে রেখেছিল বাংলাদেশ থিঙ্কট্যাংক। কিন্তু পরিকল্পনায় খানিকটা এলোমেলো করে দিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। ত্রিদেশীয় সিরিজে সাব্বির কিছু করতে পারলেন না, আর মোসাদ্দেক সাতে নেমে ২৩ বলে পেলেন বিস্ফোরক একটা ফিফটি। তার ওপর বোলিংসহ সাব্বিরের চেয়ে ‘প্যাকেজ’ হিসেবেও এগিয়ে। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সুযোগ ছিল একজনের এগিয়ে যাওয়ার, কিন্তু কেউই তা কাজে লাগাতে পারেননি। আপাতত সাব্বিরের দিকে পাল্লাই ভারি হওয়ার কথা, তবে মোসাদ্দেক খুব একটা পিছিয়ে নেই।
লিটন কি মূল পরিকল্পনায় আসবেন?
এশিয়া কাপে দুর্দান্ত সেই সেঞ্চুরির পর লিটন দাসের ওয়ানডে ক্যারিয়ার উল্টো দিকেই হাঁটতে শুরু করেছে। যেটির মূল্য দিয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী হিসেবে ওপেনিংয়ে জায়গা হারাতে হয়েছে। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ও প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দুইটি ৭০+ ইনিংসে নিজের দাবিটা জানান দিয়ে রেখেছেন লিটন। ইংল্যান্ডে বড় রান যখন তাড়া করতে হতে পারে প্রায়ই, লিটনকে কি একাদশের বাইরে রাখবে বাংলাদেশ? কিন্তু লিটনকে আনতে হলে পুরো ব্যাটিং অর্ডারে যে ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে, সেটাই বা দল সামলাবে কীভাবে?
পঞ্চপাণ্ডবের অভিজ্ঞতাই সামাল দেবে চাপ?
শুধু ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতায় এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি এগিয়ে আছে শুধু ভারতই। মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের এক যুগের কাছাকাছি পার হয়ে গেছে। অন্তত ১৭০টি খেলার অভিজ্ঞতা আছে এঁদের সবার। বিশ্বকাপে এঁদের ওপরেই আশাটা বেশি, তবে স্নায়ুচাপের সময়ই পাঁচজনের অভিজ্ঞতাটা সবচেয়ে বেশি কাজে আসার জন্য চাইবে বাংলাদেশ।
স্কোয়াড: মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সাইফ উদ্দিন, মেহেদি হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেন ও আবু জায়েদ রাহী।
কোচ: স্টিভ রোডস
র্যাঙ্কিং ৭
বিশ্বকাপের সূচি
দক্ষিণ আফ্রিকা, ২ জুন, ওভাল
নিউজিল্যান্ড, ৫ জুন, ওভাল (দি/রা)
ইংল্যান্ড, ৮ জুন, কার্ডিফ
শ্রীলঙ্কা, ১১ জুন, ব্রিস্টল
উইন্ডিজ, ১৭ জুন,টন্টন
অস্ট্রেলিয়া, ২০ জুন, নটিংহাম
আফগানিস্তান, ২৪ জুন, সাউদাম্পটন
ভারত,২ জুলাই, এজভাস্টন
পাকিস্তান, ৫ জুলাই, লর্ডস
বিশ্বকাপে রেকর্ড
১৯৯৯, গ্রুপ পর্ব
২০০৩, গ্রুপ পর্ব
২০০৭, সুপার এইট
২০১১, গ্রুপ পর্ব
২০১৫, কোয়ার্টার ফাইনাল