দুর্দান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাকিস্তানের 'একাদশে শনি'
পাকিস্তান ২১.৪ ওভারে ১০৫ অলআউট (ফাখার ২২, বাবর ২২; টমাস ৪/২৭, হোল্ডার ৩/৪২, রাসেল ২/৪)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩.৪ ওভারে ১০৮/৩ (গেইল ৫০, পুরান ৩৪*; আমির ৩/২৬)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে জয়ী
পাটা পিচ, বোলারদের বধ্যভূমি উইকেট আর আইসিসির নানা কড়াকড়িতে দৃশ্যটা ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে একরকম হারিয়েই গেছে। বিশ্বকাপে তো সেটি একরকম অভাবিতই ছিল, তাও আবার ট্রেন্টব্রিজে। পিচ রিপোর্টেও যখন বলা হচ্ছিল, উইকেটে বোলারদের জন্য তেমন কিছু নেই সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসাররা একের পর এক গোলা ছুঁড়তে শুরু করলেন। আর তাতেই সরফরাজদের কেল্লা ভেঙে চুরমার, ১০৫ রানেই গুটিয়ে গেল পাকিস্তান। ক্রিস গেইল একসময় মনে হচ্ছিল একাই ম্যাচটা শেষ করে দেবেন, শেষ পর্যন্ত ঠিক ফিফটি করে আউট হয়ে গেলেন। পুরান দিলেন শেষ টান, ১০০ ওভারের ম্যাচ শেষ হয়ে গেল ৩৫.২ ওভারেই।
টানা ১০ ম্যাচ হারার দুঃস্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছিল পাকিস্তান। কিন্তু দলটা পাকিস্তান বলেই আগে থেকে কিছু অনুমান করা কঠিন ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফর্মটাও ঠিক ভালো যাচ্ছিল না, ত্রিদেশীয় সিরিজে কদিন আগেই বাংলাদেশের কাছে হেরেছে ফাইনালে। তবে গেইল, রাসেলরা ফেরায় টনিকের মতোই কাজ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। আর গেম প্ল্যান ছিল নিখুঁত, পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের শর্ট বলে কাঁপিয়ে দেওয়া। পাঁচজনই শর্ট বলে উইকেট দিয়ে এসেছেন, ট্রেন্টব্রিজের ‘অস্বাভাবিক’ দ্রুতগতির উইকেটও বাড়িয়ে দিয়েছে সাহায্যের হাত। আর তাতেই নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার টানা ১১ ম্যাচ হেরেছে পাকিস্তান।
শুরুটা হয়েছিল তৃতীয় ওভারে। শেলডন কটরেলের বলটা লেগ সাইডে খেলতে গিয়েছিলেন, খোঁচা দিয়ে উইকেটকিপার শেই হোপকে ক্যাচ তুলে দেন ইমাম উল হক। ফাখার আজম শুরুটা করেছিলেন ভালোই, পরিস্থিতি বুঝে হোল্ডার দ্রুত নিয়ে আসেন আন্দ্রে রাসেলকে। ৯০ কিলো বেগে রাসেলের বাউন্সার সামলাতে না পেরে বল স্টাম্পে টেনে নিয়ে এসেছেন ফাখার। ২২ রানে আউট হয়েছেন, কে জানত সেটাই হয়ে থাকবে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ?
এমনকি বাবর আজমও প্রথম দুই বলে ৭ রান নিয়ে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ক্যারিবিয় পেসারদের তোপে গুটিয়ে গেলেন, ক্যাচ দিতে দিতেও বেঁচে গেলেন একবার। তার আগে হারিস সোহেল ফিরে গেছেন রাসেলের আএকটি দুর্দান্ত শর্ট বলে। পেসের কাছে পরাস্ত হয়ে সোহেল ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। বাবর আজম টিকলেন না বেশিক্ষণ। ওশান টমাসের বলে ২২ রানে হোপের দুর্দান্ত একটি ক্যাচে ফিরে গেলেন, ৬২ রানে ৪ উইকেট নেই পাকিস্তানের।
বিপর্যয়ের মেঘটা তখন পাকিস্তানের আকাশে দেখা যাচ্ছিল কেবল। সেটা আরও ঘন হলো সরফরাজের আউটে। এবারের আঘাত হোল্ডারের, যদিও আম্পায়ার শুরুতে আউট দেননি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ রিভিউ নিয়েছে, তাতে দেখা গেছে বল হোপের গ্লাভসে জমা পড়ার আগে সরফরাজের গ্লাভস ছুঁয়ে গেছে।
এরপর দেখতে দেখতে একটা সুনামিই হয়ে গেল ট্রেন্টব্রিজে। ইমাদ ওয়াসিমও শর্ট বলের ফাঁদে পা দিলেন, হোল্ডার পেলেন দ্বিতীয় উইকেট। টমাস শাদাবের পর ফিরিয়ে দিলেন পাকিস্তানের শেষ ভরসা হাফিজকে। ৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলল পাকিস্তান, ১০০র নিচেই তখন গুটিয়ে যাওয়ার শংকা তাদের সামনে। ওয়াহাব রিয়াজের ১১ বলে ১৮ রানে ১০০ হয়েছে শেষ পর্যন্ত। এই ১০৫ই ই ১৯৯২ সালের পর থেকে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন স্কোর।
গেইল যেভাবে শুরু করেছিলেন, মনে হচ্ছিল ম্যাচটা ১০ ওভারের মধ্যে শেষ করে দেবেন। মোহাম্মদ আমির অবশ্য দলে ফিরে একটু কাঁপন ধরানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ভাঙা কামান নিয়ে কতক্ষণ আর গোলা ছোঁড়া যায়? হোপ আর ড্যারেন ব্রাভোকে ফেরালেন ৪৬ রানের মধ্যে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন হোপ, আর ব্রাভো কোনো রান না করেই ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে। গেইল অবশ্য থোড়াই কেয়ার করছিলেন ওসব, ৩৩ বলে ফিফটিও পেয়ে গেলেন। ডি ভিলিয়ার্সকে (৩৭) ছাড়িয়ে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি ছয়ের রেকর্ডও করে ফেলেছেন এর মধ্যে। তবে ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারলেন না, আমিরই হাসলেন শেষ হাসি। তাতে অবশ্য সমস্যা হয়নি, ১৯ বলে ৩৪ রান করে বাকি কাজটা শেষ করে দিয়েছেন পুরান।