• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    ‘শর্ট’ স্পেল, ‘শর্ট’ থিওরিতে সফল, কিন্তু রাসেল পারবেন লম্বা দৌড় দিতে?

    ‘শর্ট’ স্পেল, ‘শর্ট’ থিওরিতে সফল, কিন্তু রাসেল পারবেন লম্বা দৌড় দিতে?    


    ২০১৫ বিশ্বকাপ, পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ক্রাইস্টচার্চ। ব্যাটিংয়ে আন্দ্রে রাসেলের রান ১৩ বলে ৪২। বোলিংয়ে ৮-২-৩৩-৩। ম্যাচসেরা। ২০১৯ বিশ্বকাপ, পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ট্রেন্টব্রিজ। বোলিংয়ে রাসেল ৩-১-৪-২। ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন পড়েনি। ম্যাচসেরাও হননি। তবে তার ওই ছোট্ট স্পেলেই বদলে গেছে ম্যাচের চিত্রটা। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপ- সময়টা চার বছরের বেশি হলেও এর মাঝে রাসেলের ওয়ানডে ট্যালি ছিল বেশ ‘শর্ট’, এই সময়ে এটি ছিল তার মাত্র তৃতীয় ম্যাচ। 

    ****

    শর্ট বলের ব্যাপারটা একবার চিন্তা করুন। ক্রিকেট বিবর্তনে কম ধাপ পেরিয়ে আসেনি সেটা। বডিলাইন থেকে শুরু করে ওভারে বাউন্সারের সংখ্যার সীমাবদ্ধতা, হেলমেটের আগমন থেকে শুরু করে ‘নেক-প্রটেকশন’- শর্ট বলের ওপর প্রভাব পড়েছে সেসবের। শর্ট বল কিছুটা ‘এস্কেপ থিওরি’র মতো পেসারদের কাছে। অন্তত এখনকার দিনে ব্যাপারটা হয়ে গেছে সেরকম। চার-ছয় খাওয়ার পর হুট করেই চলে আসে সেটা। আবার ওভারে শর্ট বলের সংখ্যার সীমাবদ্ধতা, ফিল্ড রেস্ট্রিকশন, সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের উদ্ভাবনী শট- শর্ট বলের ক্ষেত্রে অন্তরায়। টি-টোয়েন্টির মতো ফরম্যাটে তো বোলাররা শর্ট বলকে যেন এড়িয়েই চলেন। শর্ট বল তাই এখনও মোক্ষম অস্ত্র ওই টেস্ট ক্রিকেটেই, আপনার হয়তো নেইল ওয়াগনার আর বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফরের কথা মনে আছে। অথবা সেই অ্যাশেজ আর মিচেল জনসনের কথা।

    ট্রেন্টব্রিজে মেঘলা আকাশের নিচে জেসন হোল্ডারের টস জেতা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিম বোলারদের মুখে নিশ্চয়ই হাসি ফুটিয়েছিল, টসটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে সিম বা সুইং নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসাররা গেলেন শর্ট বলের দিকে। এরপর যা হলো, সেটা ধ্বংসযজ্ঞ। ইংলিশ কন্ডিশনে সিম বা সুইং যে কোনো ব্যাটসম্যানের টেকনিকের পরীক্ষা নেয়, তবে এদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসাররা নিলেন শর্ট বলের পরীক্ষা। 

     

     

    ২৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিজের বিশ্বকাপ অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখলেন ওশ্যান থমাস, হলেন ম্যাচসেরা। আগেরদিন জফরা আর্চার, এদিন থমাস- দুই দলের দুই তরুণ পেসার দিলেন আগমনী বার্তা, অফিশিয়ালি। দুদিন মিলিয়ে পেসারদের ২৬ উইকেটের ২০টিই এলো শর্ট বলে। তবে আজ ‘আসল’ ক্ষতিটা করলেন আন্দ্রে রাসেল, ৩ ওভারের ছোট্ট এক স্পেলে। পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদও বলছেন সেটাই, মূলত রাসেলের ওই স্পেলের ধাক্কাটাই সামাল দিতে পারেননি তারা। 


    উপাত্তচিত্র/জাহিদুর রহমান


    ৬ষ্ঠ ওভারে তৃতীয় পেসার হিসেবে বোলিংয়ে এসেছিলেন রাসেল। তার প্রথম ১৬ ডেলিভারিই ছিল শর্ট। এর মাঝেই দুই উইকেট পাওয়া হয়ে গেছে তার। ফাখার জামানের হেলমেটের গ্রিল থেকে শুরু করে শরীরের কয়েক জায়গায় লেগে বল খুঁজে নিয়েছে স্টাম্প, হারিস সোহেল লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাট না চালিয়ে থাকতে পারেননি। 

    “তার স্পেলটাই টার্নিং পয়েন্ট ছিল। দুই উইকেট নিল, আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাকফুটে চলে গেলাম”, বলছেন সরফরাজ। শর্ট বলে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা ব্যাকফুটে যেতে যেতে ম্যাচের বাইরেই ছিটকে গেছেন। রাসেল যেন আজ বোলিং করেছেন টেস্টের পেসারদের স্টাইলে। অথচ টেস্ট দূরে থাক, ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে এই পেসার এদিন খেলতে নামলেন মাত্র তৃতীয় ওয়ানডে, বোলিং করেছেন এর মাঝে আবার দুটিতে। 

    ওয়ানডেটা তাই রাসেলের খুব ‘পরিচিত’ ফরম্যাট নয়। তবে বাউন্সারের ব্যাপারে তিনি চিন্তা করেন সেই সব আক্রমণাত্মক পেসারদের মতো করেই, তবে সীমিত ওভারের ব্যাপারটা যিনি জানেন, “প্রথমে আপনাকে যেটা দেখতে হবে, এসব ডেলিভারির বাস্তবায়নটা। আপনাকে দেখতে হবে, যাতে খুব শর্ট না করেন, তাহলে ওয়াইড হবে। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এটা ব্যাটসম্যানের (শরীর) থেকে দূরে না হয়, তাহলে তারা কাট করবে।” 

    সেটা তো গেল শর্ট বলের টেকনিক্যাল ব্যাপার। শর্ট বল চায় আরও কিছু, যে ডেলিভারিতে শুধু বলটা যায় না, এর সঙ্গে যায় পেসারদের মনোভাবের একটা বহিঃপ্রকাশ। আগ্রাসী মনোভাব যাকে বলে। রাসেল বললেন সেটাও, “যখন থেকে আমি বল করতে উদ্যত হই, আগ্রাসী ভাবটা চলে আসে। সবকিছু লোড হয় তখন। রাগ-টাগ, সবকিছু। চার-ছয় খাওয়ার ফলে যে রাগটা আসে, সেটা এ সময় আসে। ‘আমি তোমাকে দেখে নিচ্ছি’!” 

    আজ শুরু থেকেই ‘লোডেড’ হয়ে ছিলেন তিনি। রাসেল আজ কথা বলছেন টেস্ট পেসারের মতো। তিনি আজ বোলিং করলেন টেস্ট পেসারদের মতো। অথচ ২০১০ সালে একটি টেস্ট খেলার পর থেকে তিনি হয়ে গেছেন প্রায় ‘ওয়ান টেস্ট ওয়ান্ডার’। শেষ লাল বলের ম্যাচটাও খেলেছেন প্রায় সাড়ে চার বছর আগে! 

    **** 

    ২০১৫ বিশ্বকাপে রাসেল হয়ে ছিলেন ‘ওয়ান-ম্যাচ ওয়ান্ডার’, ঝলক দেখিয়েছিলেন সেই পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচেই। আজ চোট পেয়েছেন, তবে ম্যাচশেষে জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার জন্য ফিট তিনি। হাঁটুর চোট নিয়েই তো খেলে আসছেন। আর হোল্ডারের মতে, রাসেল নিজের ১১০ শতাংশ দিয়ে খেলার মতো ক্রিকেটার। 

    ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়তো রাসেলের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু দরকার নেই। ৩ ওভারের ‘শর্ট’ স্পেলেই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারলে আর কিইবা লাগে।