মেলবোর্নের শেষ থেকে ব্রিস্টলে বিশ্বকাপ শুরু অস্ট্রেলিয়ার
আফগানিস্তান ৩৮.২ ওভারে ২০৭ (নজিবুল্লাহ ৫১, রহমত ৪৩, নাইব ৩১; কামিন্স ৩/৪০, জাম্পা ৩/৬০, স্টয়নিস ২/৩৭)
অস্ট্রেলিয়া ৩৪.৫ ওভারে ২০৯/৩ (ওয়ার্নার ৮৯*, ফিঞ্চ ৬৬; নাইব ১/৩২)
ফলঃ অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী
বিশ্বকাপের প্রথম দিবারাত্রির ম্যাচ, কিন্তু ফ্লাডলাইটটাও ঠিকমতো জ্বালাতে হলো না ব্রিস্টলে। আরো একটি একপেশে খেলা হলো, আরও একবার ভূপাতিত এশিয়ার কোনো দল। এবারের ফলটা অবশ্য অনুমিতই ছিল, তবে আফগানিস্তানের সঙ্গে আরও একটা প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়ার। স্মিথ-ওয়ার্নার ব্যাট করলে বা বল ধরলেই যে গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল দুয়ো! কিন্তু আফগানদের সঙ্গে দুয়োও অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাত্তা পায়নি। গত বিশ্বকাপটা যেখানে শেষ করেছিল, আজ যেন সেখান থেকেই শুরু করল চ্যাম্পিয়নরা।
আসলে শুরুটা করেছিলেন মিচেল স্টার্কই। মেলবোর্নের সেই স্বপ্নের শেষের পর আজ ব্রিস্টলে শুরুটা হলো দুর্দান্ত। ইনিংসের মাত্র তৃতীয় বলে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন মোহাম্মদ শাহজাদকে, স্কোরকার্ডে কোনো রান না ওঠার আগেই। গত চার বছরে স্টার্কের চেয়ে বেশি প্রথম ওভারে উইকেট নেয়নি কেউ।
তবে সেটা শুরু কেবল। পরের ওভারে আরেক বিপজ্জনক হজরতউল্লাহ জাজাই ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে, এবার কামিন্সের বলে কোনো রান না করেই। ৫ রানে দুই উইকেট নেই আফগানিস্তানের। রহমত শাহ ও হাশমতউল্লাহ শহিদি এরপর হাল ধরলেন। ৫১ রানও চলে এলো দুজনের জুটিতে। কিন্তু শহিদি একটু বেশি খোলসে ঢুকে গিয়েছিলেন, সেটা থেকে বেরুতে গিয়েই হলো সর্বনাশ। অ্যাডাম জাম্পার বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে হয়ে গেলেন স্টাম্পড।
রহমত শাহ অবশ্য বেশ ভালো খেলছিলেন। এশিয়ান কোনো দলের প্রথম ফিফটিও মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু জাম্পার ওপর বেশি চড়াও হতে গিয়েই করলেন ভুলটা, ক্যাচ দিলেন কাভারে। ৪৩ রানে অপমৃত্যু হলো ইনিংসের, আফগানিস্তান খেল বড় একটা ধাক্কা। এরপর হাস্যকর একটা ভুল বোঝাবুঝিতে সেই বিপদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন নবী। রানের জন্য অর্ধেক দৌড়ে আসার পর আর ফিরে যেতে পারেননি, রান আউট হয়ে গেছেন ৭ রানে। ৭৭ রানে ৫ উইকেট নেই আফগানিস্তানের।
সেখান থেকে এরপর দারুণ পালটা আক্রমণ শুরু করলেন নাইব ও নজিবুল্লাহ জাদরান। উইকেটের চারপাশে শট খেলতে শুরু করলেন দুজন, সবচেয়ে বেশি তোপটা গেছে জাম্পার ওপর দিয়েই। ২৯তম ওভারে ২২ রান দিয়েছেন জাম্পা, সেই ওভারেই দুইটি করে চার-ছয় মেরেছেন নজিবুল্লাহ। দুজন যখন আড়াইশর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তখনই ছন্দপতন।
মার্কাস স্টয়নিসের বলে শর্ট বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন নাইব, ৩১ রান করে। দুজনের ৮৩ রানের জুটিও ভেঙেছে সেই সঙ্গে। জাদরান ৪৭ বলে তার আগেই পেয়ে গেছেন ফিফটি, তবে স্টয়নিসের সেই ওভারে ধৈর্য হারিয়ে করলেন আরেকটি ভুল। জাদরানের মতো ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটকিপারকে, এবার অফ কাটারের ফাঁদে পড়েছেন। এরপর দৌলত জাদরানকেও যখন ফিরিয়ে দিলেন কামিন্স, ১৬৬ রানে ৮ উইকেট নেই আফগানিস্তানের।
এরপর আবার শুরু রশীদ খান ও মুজিব উর রেহমানের পালটা আক্রমণ। রশীদ-মুজিব স্টয়নিসের এক ওভার থেকে নিয়েছেন ২১ রান। দুজন ২০০ পার করে নিয়ে যাচ্ছিলেন ২৫০রও দিকে। কিন্তু এরপর আবার তাড়াহুড়র মাশুল দিয়েছে আফগানিস্তান। জাম্পার বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু রশীদ, ১১ বলে ২৭ রান করে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৯ বলে ১৩ রান করে কামিন্সের বলে আউট হয়ে গেছেন মুজিব। ২০৭ রানে যখন অলআউট হয়েছে আফগানিস্তান, ইনিংসের ১১ ওভারেরও বেশি বাকি।
অস্ট্রেলিয়া যে কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে চায়, মুজিবের প্রথম ওভারেই পর পর দুই চারে সেই বার্তা দিয়েছেন অধিনায়ক ফিঞ্চ। ওয়ার্নার বরং বেশি সতর্ক ছিলেন, ফিঞ্চ মুজিবের পরের ওভারেও মেরেছেন চার-ছয়। ওয়ার্নার ক্যাচ দিয়েও দ্বিতীয় স্লিপ না থাকায় বেঁচে গেছেন, হামিদ হাসান তাঁকে ভোগাচ্ছিলেন বেশ। তবে দুজনের জুটিটাই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে। ৪০ বলে ফিফটি পেয়ে গিয়েছিলেন ফিঞ্চ, এগিয়ে যাচ্ছিলেন টুর্নামেন্টের প্রথম সেঞ্চুরির দিকে। তবে ৬৬ রানে নাইবের বলে ক্যাচ দিয়েছেন মুজিবকে। ৯৬ রানে ভেঙ্গেছে জুটি।
ওদিকে খাওয়াজা আর ওয়ার্নার এরপর ঠাণ্ডা মাথায় খেলছিলেন। তবে খাওয়াজা শেষ পর্যন্ত আউট হয়ে গেলেন রশীদের বলে, ১৫ রানে। ওয়ার্নার অবশ্য তখন স্বচ্ছন্দ হয়ে গেছেন, তবে সেঞ্চুরির জন্য দরকারি রান আর ছিল না। স্মিথও যখন তাঁকে সঙ্গ দিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসবেন মনে হচ্ছিল, মুজিবের বলে আউট হয়ে গেলেন ১৮ রানে। তবে ওয়ার্নার অপরাজিত ছিলেন ৮৯ রানে, এক বছর দুঃস্বপ্নের পর দলে ফিরে ম্যাচসেরার পুরস্কারও গেছে তার হাতেই।