কার্ডিফ নাটকে আফগান-ট্র্যাজেডি, শেষ হাসি শ্রীলংকার
শ্রীলংকা ৩৬.৫ ওভারে অলআউট ২০১ (কুশল পেরেরা ৭৮; করুনারত্নে ৩০; নবী ৪/৩০, রশীদ ২/১৭)
আফগানিস্তান (ডিএল মেথডে ৪১ ওভারে লক্ষ্য ১৮৭) ৩২.৪ ওভারে ১৫২ (জাদরান ৪৩, জাজাই ৩০; প্রদীপ ৪/৩১, মালিঙ্গা ৩/৩৯)
ফলঃ শ্রীলংকা ৩৪ রানে জয়ী
ওভাল, ট্রেন্টব্রিজ, কার্ডিফ। প্রথম তিন দিনে যেন ট্রেলার ছিল বিশ্বকাপের, শুরুটা হলো চতুর্থ দিন থেকে এসে। কার্ডিফে ঠিক থ্রিলার না হলেও ম্যাচটা হলো জমজমাট। শেষ পর্যন্ত যে নাটকটা আফগানিস্তানের জন্য হয়ে গেল ট্র্যাজেডি। শ্রীলংকাই শেষ পর্যন্ত শ্রেষ্ঠাংশে থেকে হাসতে হাসতে শেষ করল ম্যাচ। ও হ্যাঁ, পার্শ্বচরিত্র হিসেবে ছিল বৃষ্টিও। ইদের চাঁদের মতো অতটা জমাট হয়নি বটে, তারপরও কার্ডিফে ম্যাচটা না দেখলে কিছু একটা মিসই করেছেনই আপনি।
শুরুতে যেভাবে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল শ্রীলংকা, তাতে এই ম্যাচটা তাদের মুঠো থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল বলেই মনে হচ্ছিল। সেখানেও কম নাটক হয়নি। ১৪৪ রানে যে দলের ১ উইকেট থাকে, তাও ওভারপ্রতি সাতের কাছাকাছি রান রেটে, তারাই ১৮০ রান তুলতে হারিয়ে ফেলল ৮ উইকেট। এরপর বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে খেলা। আবার যখন শুরু হলো ম্যাচ, খেলা ঠিক ৪১ ওভারের। কিন্তু ৩৬.৪ ওভারের বেশি খেলতে পারল না শ্রীলংকা, অলআউট হয়ে গেল ২০১ রানে। আফগানিস্তানের সামনে ৪১ ওভারে লক্ষ্য দাঁড়াল ১৮৭।
সেই লক্ষ্যে আফগানিস্তানের শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। দুই ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ ও হজরতউল্লাহ জাজাই ৫ ওভারের মধ্যে তুলে ফেলেছিলেন ৩৪ রান। শ্রীলংকাকে মনে হচ্ছিল দিকভ্রান্ত, জাজাইয়ের সহজ ক্যাচ ছেড়ে মনে হচ্ছিল ম্যাচটাই ফেলে দিয়েছে। শুরুটা হলো পঞ্চম ওভারে, মালিঙ্গার বলে ৭ রানে ক্যাচ দিলেন শাহজাদ।
এই আউটই যেন জাগিয়ে তুলল শ্রীলংকাকে। তিন ওভার পর রহমত শাহ উদানার বলে ক্যাচ দিলেন স্লিপে। পরের ওভারে বড় মাছটাও বড়শিতে গাঁথল লংকানরা, এবার ২৫ বলে ৩০ রান করে জাজাই আউট। ভুলটা করলেন নুয়ান প্রদীপকে পুল করতে গিয়েই।
১৩ রান পর আবারও শ্রীলংকার জোড়া আঘাত। প্রথমে শহিদি ফিরলেন, প্রদীপের বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিলেন পেরেরা। ওই ৫৭ রানেই নবী আউট পেরেরার বলে, ম্যাচ তখন শ্রীলংকার দিকে হেলে। তবে নাটক শেষ হয়নি তখনও।
অধিনায়ক গুলবদিন নাইব ও নজিবুল্লাহ জাদরান জুটি বাঁধলেন । দুজনের ৬৪ রানে আবার ম্যাচে ফিরল আফগানিস্তান। শ্রীলংকা যখন নেতিয়ে পড়েছে, নাইবকে আউট করে আবার ম্যাচে ফেরালেন প্রদীপ। এরপর রশিদকেও বোল্ড করলেন প্রদীপ, শ্রীলংকার দরকার ৩ উইকেট। আর আফগানদের সবেধন নীলমণি হয়ে ছিলেন জাদরান। উদানার বলে দুই চারে আশাও দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু ওই ওভারেই রান আউট হয়ে গেলেন করুনারত্নের দারুণ থ্রোতে, ম্যাচ ওখানেই শেষ। তার আগে পরে দুই ইয়র্কারের দুই উইকেটে মালিঙ্গাও ছিলেন নিজের ভূমিকায় উজ্জ্বল।
অথচ শেষের মতো কী শুরুই না হয়েছিল শ্রীলংকার! প্রথম ১০ ওভারে খুঁজেই পাওয়া যায়নি আফগানিস্তানকে। দিশেহারা বোলিং আর বাজে ফিল্ডিংয়ের পুরো ফায়দা নিয়েছেন কুশল পেরেরা ও দিমুথ করুনারত্ন্ব। দুজন ১৩ ওভারের মধ্যেই তুলে ফেলেছিলেন ৯১ রান। করুনারত্নেকে ৩০ রানে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেকথ্রু দিয়েছেন নবী। তবে পেরারা খেলছিলেন দারুণ, এর মধ্যে নো আর ওয়াইড বলে তাঁর কাজটাও সহজ করে দিচ্ছিলেন আফগানরা। ইধিনায়ক গুলবদন নাইবই যেমন এক ওভারে দিয়েছেন ১৯ রান।
তবে ধাক্কাটা প্রথম দিয়েছেন নবীই। তাঁকে খেলতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে নিয়ে এসেছেন থিরিমান্নে, ফিরেছেন ৩৪ বলে ২৫ রান করে। দুই বল কুশল মেন্ডিস খোঁচা দিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে, ২ বলে ২ রান করে আউট। ভাগ্যও যেন পক্ষে ছিল আফগানদের, স্বপ্নের এক ওভারের শেষ বলটা তারই প্রমাণ। এবার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস কাট করতে গিয়েছিলেন নবীকে, সেটা কিপারের গায়ে লেগে চলে গেছে স্লিপে। এক ওভারেই তিন উইকেট পেয়ে গেছেন নবী।
তবে শেষ নয় সেখানেই। পরের ওভারের শেষ বলে হামিদ হাসানের বলটা খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। শ্রীলংকা যে মানসিকবাহবেই ভেঙে পরেছে, এর প্রমাণ পাওয়া গেছে আরও ১০ রান পর। নবীর বলটা কাভারে ঠেলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন, যদিও কোনোভাবেই তা সিঙ্গেল ছিল না। শহিদির থ্রো ধরে শাহাজাদ যখন স্টাম্প ভেঙে দিয়েছেন, ক্রিজে ঢুকতে পারেননি পেরেরা। ১৫৯ রানে ৬ উইকেট নেই শ্রীলংকার। উদানা একটা ছয় মারলেন, কিন্তু পরিস্থিতিটা বুঝতে পারলেন না। ১০ রান করে বাজে এক শট খেলতে গিয়ে বোল্ড দওলত জাদরানের বলে।
এতকিছুর পরও পেরেরা ছিলেন, কিছুটা আশা ছিল শ্রীলংকার। কিন্তু রশিদ খানের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে। ৮১ বলে ৭৮ রান করে আউট হয়ে গেলেন, ৩৬ রানের মধ্যে ৭ উইকেট গেল শ্রীলংকার। ভাগ্য ভালো, সেটার জন্য আফসোস করতে হয়নি।