নেট সেশন : বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড-ফাঁড়া কাটবে বাংলাদেশের?
বিশ্বকাপ, ৯ম ম্যাচ
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড
কবে, কখন
৫ জুন, ২০১৯
বাংলাদেশ সময় ১৮৩০ (সন্ধ্যা ৬.৩০)
আলাদা করে কিছু ভাসছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ থেকে? সৌম্য সরকারের শুরুর বিস্ফোরণ? সাকিব আল হাসান বা মুশফিকুর রহিমের জুটি? শেষদিকে মাহমুদউল্লাহর ওই ফ্লিকে মারা ছয়? নাকি বোলিংয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ বা সাকিব আল হাসানের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট? অথবা বলতে পারেন সাইফউদ্দিনের উদযাপন বা মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিং। কিংবা বোলারদের সঙ্গে সাকিবের পরামর্শ। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয় থেকে আলাদা করে কিছু বলা মুশকিল, সে জয় ছিল দারুণ টিমওয়ার্ক। তবে সে ম্যাচশেষে মাশরাফি বিন মুর্তজা যেমন বলেছিলেন, সেটির রেশ শেষ সেখানেই। এবার নতুন চ্যালেঞ্জ।
টুর্নামেন্টে ৯ ম্যাচের মধ্যে গেছে মাত্র একটি, বাকি ৮টির প্রথমটি এই ৫ তারিখে। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ তাদের মতোই প্রথম ম্যাচে জয় নিয়ে আসা নিউজিল্যান্ড। অবশ্য একটা ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে। বাংলাদেশের সবাইকে যেমন কিছু না কিছু করতে হয়েছে জয়ের জন্য, নিউজিল্যান্ডের পেসাররাই তাদের জন্য করে দিয়েছিলেন বেশিরভাগ। শ্রীলঙ্কাকে ১৩৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে সেটা ১০ উইকেট বাকি রেখেই জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলররা তাই সুযোগই পাননি ব্যাটিংয়ের।
এই দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস অবশ্য একটু পেছনের দিকেই, তাদের মাটিতে গিয়ে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়ে এসেছিল। তবে উঁকি দেবে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও, ৩৩ রানে ৪ উইকেট চলে যাওয়ার পরও সাকিব-মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিতে ২৬৫ রান পেরিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
তবে সেসবের আগে আসার কথা আরেকটি ব্যাপার, বাংলাদেশের শেষ নিউজিল্যান্ড সফর। ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর আগেভাগেই চলে এসেছিল বাংলাদেশ, সে ঘটনার পর বিশ্বকাপেই প্রথম দেখা হচ্ছে তাদের।
সেটা বাংলাদেশ ভুলতে পেরেছে কিনা, নিশ্চিত নয়। তবে সে অনুভূতি নিয়ে খেলতে নামার সঙ্গে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে আরেকটি চ্যালেঞ্জ, দিবা-রাত্রির ম্যাচ। গ্রুপপর্বে বাংলাদেশকে অবশ্য ফ্লাডলাইটে খেলতে হবে এই একটি ম্যাচই। ইংল্যান্ডের মাটিতে এর আগে দুটি দিবা-রাত্রির সম্পন্ন হওয়া ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ, ২০০৫ ও ২০১০ সালে। ওভালেই প্রথম ম্যাচ খেলা বাংলাদেশের সামনে কন্ডিশনটা পরিচিত হলেও হয়ে উঠতে পারে তাই অপরিচিত।
কার্ডিফে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচ পেসারের বোলিং আক্রমণ ছিল নিউজিল্যান্ডের, বাংলাদেশ ওভালে খেলেছিল তিন পেসার নিয়ে। সাকিব ও মিরাজ একটি করে উইকেট নিলেও সেসব ছিল গুরুত্বপূর্ণ, অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের মিচেল স্যান্টনার থিসারা পেরেরার উইকেট নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার অবস্থা ভজকট পাকানোর পরই। বাংলাদেশের শক্তি স্পিন, নিউজিল্যান্ডের পেস।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে কখনও জেতেনি বাংলাদেশ, জেতেনি বিশ্বকাপেও। এবার কাটবে সেই ফাঁড়া?
রঙ্গমঞ্চ
দ্য ওভাল, লন্ডন
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছিল ব্যবহৃত উইকেটে, অর্থাৎ ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের উইকেটেই। এবার আসতে পারে ফ্রেশ উইকেট। এমনিতে ব্যাটিং সহায়কই থাকার কথা উইকেট। আগেরদিন মাশরাফি বলেছিলেন, টসটা হেরে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বেঁচে গেছেন, শুরুতে ব্যাটিং না ফিল্ডিং ঠিক করে উঠতে পারছিলেন না সেটাই। অবশ্য প্যাভিলিয়নের কলামে শাহরিয়ার নাফীস বলছেন, টসে জিতলে বাংলাদেশের উচিৎ হবে ব্যাটিং নেওয়া। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, মেঘলা থাকবে আকাশ। সেক্ষেত্রে পেসারদের ভূমিকাটা বেড়ে যেতে পারে আরও।
লড়াইয়ের মাঝে দ্বন্দ্বযুদ্ধ
তামিম ইকবাল বনাম ট্রেন্ট বোল্ট
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শুরুতে সৌম্য সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে কট-বিহাইন্ড হয়ে ইনিংসটা বড় করা হয়নি। ট্রেন্ট বোল্টের ব্যাপারটা অন্যরকম, একটি উইকেট নিলেও আলো কেড়েছেন ম্যাট হেনরি ও লকি ফার্গুসন। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে তাই জমতে পারে দুই ‘ওপেনার’-এর লড়াই। এমনিতে এ লড়াইয়ে অবশ্য এগিয়ে বোল্ট, মুখোমুখি ৭ বারের লড়াইয়ে ২ বার আউট করেছেন তিনি তামিমকে।
যাদের ওপর চোখ
সৌম্য সরকার
শুরু থেকেই চড়াও হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চমকে দিয়েছিলেন। লিটন দাসের সঙ্গে ওপেনিংয়ে জায়গা নিয়ে লড়াই ছিল, ত্রিদেশীয় সিরিজে তার ব্যাটিং এগিয়ে রেখেছে তাকেই। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও ঝলক দেখিয়েছেন সেটার। এক বিশ্বকাপ দিয়ে মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন, আরেক বিশ্বকাপে নিজের উচ্চতাটা একটু বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে তার সামনে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও
মার্টিন গাপটিল
গত বিশ্বকাপে যেখান থেকে শেষ করেছিলেন, এবার শুরু করেছেন সেখান থেকেই। প্রথম ম্যাচে যা ছোট লক্ষ্য ছিল, গাপটিলের সঙ্গে মানরোর ইনিংসে সেটিকে পাত্তা দেয়নি নিউজিল্যান্ড। শুরুতেই প্রতিপক্ষকে ছিটকে দেওয়ার মতো ইনিংস খেলার সামর্থ্য আছে গাপটিলের, নজরটাও তাই থাকবে শুরুতে তার ওপরই।
সম্ভাব্য একাদশ
একই কন্ডিশন, একই ভেন্যু, সঙ্গে উইনিং কম্বিনেশন। দুই স্পিনার, তিন পেসারের কম্বিনেশন তাই ভাঙার কথা নয় বাংলাদেশের (চোট না থাকলে)। আর আগের ম্যাচের পর মাশরাফি বলেছিলেন, সাইফ উদ্দিনই তাদের সেরা পছন্দ। রুবেলের মূল একাদশে ঢোকার অপেক্ষাটাই তাই বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ- তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম(উইকেটকিপার), মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোস্তাফিজুর রহমান
মিচেল স্যান্টনারের সঙ্গে সুযোগ পাবেন ইশ সোধি? নিউজিল্যান্ড একাদশে মূল প্রশ্ন বোধহয় সেটাই। তবে শিঁকে ছেঁড়ার সম্ভাবনা কম সোধির। হেনরি নিকোলস ও টিম সাউদি এখনও শতভাগ ফিট নন, নিউজিল্যান্ডও তাই থাকতে পারে অপরিবর্তিতই।
নিউজিল্যান্ড- মার্টিন গাপটিল, কলিন মানরো, কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), রস টেইলর, টম ল্যাথাম (উইকেটকিপার), জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্রন্ডহোম, মিচেল স্যান্টনার, ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্ট
সংখ্যার খেলা
- ২০০- সাকিব আল হাসানের এটি ২০০তম ওয়ানডে
- ০- বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ ম্যাচে একটিও জয় পায়নি বাংলাদেশ
- ৪- নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচেই প্রথমে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ
তারা বলেন
আমরা তাদের হোম কন্ডিশনে খেলেছি সম্প্রতি। তবে এ ম্যাচটা নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। বড় টুর্নামেন্টে সবসময় চাপ থাকে। তাদেরকে ফেভারিট ভাবা হলে তারাই বেশি চাপে থাকবে। আমরা তাদেরকে ভালভাবে চিনি। তবে কাদের বিপক্ষে খেলছি, সেটা চিন্তা করে আমরা আমাদেরকে খাটো করে দেখতে পারি না।
সৌম্য সরকার, বাংলাদেশ
শেষ যেবার বাংলাদেশ আমাদের দেশে এসেছিল, ব্যাপারটা আদর্শ নয় অবশ্যই। তাদেরকে আবার দেখতে পাওয়াটা দারুন হবে। আমি নিশ্চিত দুই দলই যেটা করতে ভালবাসে, মাঠে নেমে সেটাই করতে চায়। তারা আগেভাগেই চলে গিয়েছিল (ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলা হওয়ার পর), তাই তাদেরকে পুরোপুরি দেখা হয়নি। আশা করি কাল মাঠে নেমে আমরা যা ভালবাসি সেটা করতে পারাটা দারুণ হবে।
টম ল্যাথাম, নিউজিল্যান্ড
(সৌম্য-ল্যাথামের উক্তিসূত্র ক্রিকইনফো)