• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    ডি সিলভার দিনে শ্রীলংকার বিশ্বজয়

    ডি সিলভার দিনে শ্রীলংকার বিশ্বজয়    

    ১৯৮৭ সালের পর ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর দ্বিতীয়বারের মতো ফিরেছিল ভারতীয় উপমহাদেশে, ১৯৯৬ সালে। সে যাত্রায় ভারত, পাকিস্তানের সাথে আয়োজক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল শ্রীলংকাকেও। কিন্তু খেলা মাঠে গড়ানোর মাসখানেক আগে কলম্বোয় তামিল বিদ্রোহীদের বোমা হামলার জের ধরে শ্রীলংকায় খেলতে অস্বীকৃতি জানায় অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লঙ্কান বোর্ডের তরফে নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা, সাথে আইসিসির আশ্বাসের পরও দুই দল সিদ্ধান্তে অটল থাকলে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দুটিতে শ্রীলংকাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

     

    আর এই দুই জয় নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু আগেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলে রানাতুঙ্গার দল! ৩২ বছর বয়সী লঙ্কান অধিনায়ক সে সময়ই বলে রেখেছিলেন, “অস্ট্রেলীয়দের সাথে মাঠের মোকাবেলাটা ফাইনালেই হবে!” রানাতুঙ্গার চাওয়া পূরণ হয়েছিল। ১৭ই মার্চের ফাইনালে লাহোরের গাদ্দাফী স্টেডিয়ামে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২১ বছর বয়সী লংকা দলের প্রতিপক্ষ দাঁড়ায় সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম দিবারাত্রির ম্যাচটি হয়ে থাকলো লঙ্কান ক্রিকেটের নতুন যুগের সূচনা।

     

    কেনিয়ার সাথে একটি গ্রুপ ম্যাচ বাদে পুরো টুর্নামেন্টের সবক’টি ম্যাচই শ্রীলংকা জিতে আসে পরে ব্যাট করে। ফাইনালে টস জিতে তাই প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে একটুও দ্বিধা করেন নি রানাতুঙ্গা। কিন্তু বিক্রমসিংহে, চামিন্দা ভাসদের অনায়াসে মেরেকেটে মার্ক টেলর, রিকি পন্টিংদের স্কোরবোর্ডে যখন ২৭ ওভার শেষে মাত্র ১ উইকেট খরচায় ১৩৭ রান তখন চিন্তিত হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ ছিল বৈকি!

     

    তবে দৃশ্যপট বদলে যেতে খুব বেশী সময় লাগলো না। দিনের নায়ক ডি সিলভার ডানহাতি অফব্রেক স্পিনের প্রথম স্পেলেই কাবু হলেন টেলর আর পন্টিং। পাঁচ ওভার থেকে সিলভা রান দিলেন মাত্র ১৯টি। স্টিভ ওয়াহ, স্টুয়ার্ট ল’দের তালুবন্দী করে পরের দফায় বোল্ড করেন ইয়ান হেলিকেও। ততক্ষণে কার্যত ধ্বসে পড়েছে অসি ব্যাটিং লাইন আপ। ২০৫ রান তুলতেই ৭ উইকেট খরচের খাতায়। অষ্টম উইকেট জুটিতে মাইকেল বেভান-পল রেইফেল শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থেকে গেলে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৪১।

     

     

    ইতিহাস গড়তে প্রয়োজনীয় ২৪২ রান সংগ্রহ করতে নেমে আবারও প্রাথমিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে শ্রীলংকা। ব্যক্তিগত সংগ্রহ দুই অংক না ছুঁতেই ফিরে যান দুই ওপেনার জয়সুরিয়া ও কালুভিথারানা। ত্রাতার ভূমিকায় আরও একবার অরবিন্দ ডি সিলভা। অশোকা গুরুসিনহাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় জয়ের পথে যাত্রা। শিশিরভেজা বলে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকেন শেন ওয়ার্ন, মার্ক ওয়াহরা। সহজ-কঠিন মিলিয়ে গুরুসিনহাকে চার চারবার তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন অসি ফিল্ডাররা। ‘ডিউ ফ্যাক্টর’ সুবিধা ষোলোআনা কাজে লাগিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদ্বয় তুলে নেন ১২৫ রান। দলীয় ১৪৮ আর ব্যক্তিগত ৬৫ রানে গুরুসিনহা বোল্ড হন রেইফেলের বলে। বাকি পথটুকু ডি সিলভাকে সঙ্গ দেন রানাতুঙ্গা। শেষ দশ ওভারে শ্রীলংকার প্রয়োজন ছিল ৫১ রান। প্রথমবারের মতো বিশ্বজয়ের বন্দরে যখন লঙ্কান তরী ভিড়ল তখনও ২২ বল বাকি, হাতে ছিল ৭টি উইকেট।

     

     

    বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শতরান করেন ডি সিলভা। আর রান তাড়া করে শিরোপা লড়াই জেতার নজির সেটাই প্রথম।

     

    [ছবি সৌজন্যঃ গেটি ইমেজেস]