কোপা আমেরিকা : টিম প্রিভিউ, শক্তি-দুর্বলতা, ফিক্সচার
গত বিশ্বকাপের পর থেকেই লাতিন আমেরিকার দলগুলো সময় পার করেছে প্রীতি ম্যাচে অংশ নিয়ে। এবারের কোপা আমেরিকা তাই প্রথম প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট দলগুলোর জন্য। ১০ দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাতার ও জাপান। ৪৬ তম কোপা আমেরিকার আসর এবার বসছে ব্রাজিলে।
টুর্নামেন্ট ফরম্যাট
প্রতিগ্রুপ থেকে তিন চ্যাম্পিয়ন ও তিন রানার আপের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে তৃতীয় হওয়া সেরা দুই দল। এরপর কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল পেরিয়ে ফাইনাল।
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী কোপা আমেরিকার ফিক্সচার দেখুন এখানে
আর্জেন্টিনা, গ্রুপ বি
হোর্হে সাম্পাওলির বিদায়ের পর লিওনেল স্কালোনিকে অনেকটা উপায় না দেখেই দলের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পর দলকে নিয়ে যাচ্ছেন কোপা আমেরিকাতে। এই এক বছরে আর্জেন্টিনার পরিবর্তন একটাই। নতুন এক দল এসেছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা নেই, ২৩ জনের স্কোয়াডে ১৫ জনই জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ১৫ ম্যাচেরও কম। আর্জেন্টিনার একমাত্র আশা লিওনেল মেসিকে ঘিরেই। আরও একবার আজন্ম লালন করা স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ব্রাজিল গিয়েছেন তিনি। কিন্তু ‘একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার’ মতো বেশিরভাগ মুহুর্তে মেসি নিজেও ছায়া হয়ে থেকেছেন। তাই খুব ভরসার জায়গাটাও নড়বড়ে আর্জেন্টিনার।
ফিফা র্যাংকিং ১১
শক্তি
লিওনেল মেসি, সার্জিও আগুয়েরো, পাউলো দিবালা, অ্যানহেল ডি মারিয়া- প্রতিপক্ষ যে কোনো দলের রক্ষণের জন্যই এই নামগুলো রাতের ঘুম হারাম দেওয়ার মতো। মিডফিল্ডে লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও জিওভানি লো সেলসো প্রত্যাশা অনুযায়ী দলের হাল ধরতে পারলে আর্জেন্টিনা ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখতেই পারে। রক্ষণই যখন দলের মূল শক্তি তখন মিডফিল্ডারদের সাহায্য পাওয়াটা আরও জরুরী আর্জেন্টিনার জন্য। সেটা পেয়ে গেলে আক্রমণে অন্তত গোল পেতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় আলবিসেলেস্তেদের।
দুর্বলতা
মিডফিল্ডের সঠিক সমন্বয় এখনও খুঁজে পাননি আর্জেন্টিনা কোচ। আর আক্রমণেও যাদের কথা শক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে তারাও আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে বিবর্ণ থাকেন নিয়মিত। গত এক বছরে এই দলটা ভালো কিছুর ইঙ্গিতও দেয়নি। আর সংশয়গুলো পাশে রেখে বিবেচনা করলে দলের মূল সমস্যা রক্ষণে। একমাত্র নিকোলাস অটামেন্ডি ও নিকোলাস টালিয়াফিকো ছাড়া বাকি ডিফেন্ডারদের তেমন অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। স্কালোনি দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত সাত জন গোলরক্ষক ব্যবহার করেছেন। সেরা গোলরক্ষক কে সেটা এখনও হয়ত জানা নেই তার। দলে থাকা তিন গোলরক্ষকের একজনের ফর্মও আশা জাগানিয়া নয়।
সেরা সাফল্য চ্যাম্পিয়ন (১৯২১, ১৯২৫, ১৯২৭, ১৯২৯, ১৯৩৭, ১৯৪১, ১৯৪৫, ১৯৪৬, ১৯৪৭, ১৯৫৫, ১৯৫৭, ১৯৫৯, ১৯৯১, ১৯৯৩)
যার ওপর চোখ
লিওনেল মেসি
আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা ৫ ফাইনালের ৪টিতে হেরেছেন। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলারও তিনি, অধিনায়কও তিনি। সবচেয়ে বড় কথা জাতীয় দলে তার ফর্ম নিয়ে যত আলোচনা সমালোচনাই হোক না কেন, মেসিকে ছাড়া আর্জেন্টিনা আরও অসহায়। দেশের হয়ে সবচেয়ে গোলও মেসির। মেসি নির্ভরশীলতা কমারও কোনো লক্ষণ নেই দলের। কোপা আমেরিকার সবচেয়ে বড় তারকা, মেসি যেখানে যাবেন সেখানেই তো নজর থাকবে।
এবারের কোপায় আর্জেন্টিনার সম্ভাবনা কতোটুকু? পুরো স্কোয়াড ও দল বিশ্লেষণ, কেন কোপা আমেরিকা শিরোপার দাবিদার না আর্জেন্টিনা?
ব্রাজিল, গ্রুপ এ
কোপা আমেরিকার সর্বশেষ আসরেই গ্রুপপর্বের পেরুতে পারেনি ব্রাজিল, চাকরি হারাতে হয়েছিল দুঙ্গাকে। ২০১১, ২০১৫ তেও নেই সাফল্য, দুবারই বিদায় শেষ আট থেকে। কিন্তু এবার ফেভারিট হিসেবেই কোপা মিশনে নামবে তিতের দল। স্বাগতিক, দলে আছে অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেল। তবে স্বাগতিক হওয়ায় ব্রাজিলের ওপর আছে বাড়তি চাপও। তার ওপর দলে নেই নেইমার। ইনজুরিতে পড়ে কোপা আমেরিকা শেষ হয়ে গেছে তার। সেটা অবশ্য ব্রাজিলের জন্য শাপেবরও হতে পারে একদিক দিয়ে। গত এক বছরে মাঠের খেলার চেয়ে মাঠের বাইরের বিভিন্ন কারণে সমালোচিত হয়েছেন নেইমার। এবার অন্তত সেই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না তাদের।
ফিফা র্যাংকিং ৩
শক্তি
দুর্দান্ত স্কোয়াড ডেপথ। গোলরক্ষক থেকে শুরু করে ফরোয়ার্ড লাইন পর্যন্ত চমৎকার সব ফুটবলার নিয়ে দল সাজিয়েছেন তিতে। প্রায় প্রতিটি জায়গায় ব্রাজিলের আছে একাধিক বিশ্বমানের ফুটবলার। স্বাগতিক হওয়ায় সমর্থনটাও বেশি পাবে ‘সেলেসাও’রা। সাম্প্রতিক ফর্মও ব্রাজিলেরই পক্ষে।
নেইমার না থাকায় মাঠের বাইরের বিতর্ক নিয়ে হয়তো এবার তেমন ভাবতে হবে না তিতের দলকে। ফুটবলারদের মনযোগ ধরে রাখতে যা কাজ করতে পারে টনিক হিসেবে।
দূর্বলতা
মিডফিল্ড। কাসেমিরো এবং ফিলিপ কুতিনিয়োর সাথে কে নামবেন, সে বিষয়ে হয়তো এখনও সিদ্ধান্ত নেননি তিতে। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মিডফিল্ডারদের পারফরম্যান্স ছিল একেবারেই গড়পড়তা। সাম্প্রতিক ম্যাচগুলো জিতলেও মাঝমাঠের পারফরম্যান্স উন্নতি হয়নি তেমন। লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে এই মিডফিল্ডই হয়তো শেষ পর্যন্ত ভোগাতে পারে তাদের।
দেশের জার্সিতে স্ট্রাইকারদের বিবর্ণ রূপ। ক্লাব ফুটবলে রবার্তো ফিরমিনো এবং গ্যাব্রিয়েল হেসুস দারুণ ফর্মে থাকলেও ব্রাজিলের জার্সিতে এখনও নিজেদের প্রমাণে ব্যর্থ তারা। রাশিয়া বিশ্বকাপেও হেসুস-ফিরমিনোর পারফরম্যান্সের সমালোচনা করেছিলেন জিকোর মত কিংবদন্তীরা। উইঙ্গাররার যেমনই খেলুক, দুই স্ট্রাইকারের পারফরম্যান্স এখনও ব্রাজিলের অন্যতম দূর্বলতা।
সেরা সাফল্য
ছয়বারের কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল (১৯১৯, ১৯২২, ১৯৪৯, ১৯৮৯, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০৪, ২০০৭)
যাদের ওপর চোখ
ফিলিপ কুতিনিয়ো। রাশিয়া বিশ্বকাপ মাতিয়েছিলেন দারুণভাবে। নেইমারের অনুপস্থিতিতে এবারও ব্রাজিলের আক্রমণের ‘নিউক্লিয়াস’ থাকবেন তিনিই। দেশের জার্সিতে বরাবরই নিজেকে প্রমাণ করে এসেছেন। নেইমার না থাকায় এবার সুযোগ এসেছে পুরো আলোটা নিজের করে নেওয়ার।
আরও পড়ুনঃ তিতের ব্রাজিলের শেষ সুযোগ?
উরুগুয়ে
দেশকে নিয়ে পঞ্চম কোপা আমেরিকায় যাচ্ছেন অস্কার তাবারেজ। ৭২ বছর বয়সে এসেও হাল ছাড়ছেন না তিনি। উরুগুয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। এরপর গোটা দেশের বয়সভিত্তিক ফুটবল চলেছে তার ধ্যান ধারণায়। তাতে উরুগুয়ে আবারও শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে। কিংবদন্তী কোচের হাত ধরেই ২০১১ সালে কোপা আমেরিকা জিতেছিল উরুগুয়ে। এরপর অবশ্য পর পর দুই টুর্নামেন্টে হতাশ হতে হয়েছে তাদের। তবে এবারের টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের পর বড় ফেভারিট তারাই।
গত বিশ্বকাপে লাতিন আমেরিকার দলগুলোর মধ্যে অনেকদিক থেকেই সেরা বলা যায় তাদের। এতদিন অবশ্য রক্ষণ সামলে কাউন্টার অ্যাটাকে লুইস সুয়ারেজ ও এডিনসন কাভানিদের ওপর ভর করে সাফল্য পেয়েছে উরুগুয়ে। জমাট রক্ষণ তাদের সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি ছিল। তবে এক ঝাঁক নতুন মিডফিল্ডার দলে আসায়, এখন খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিপক্ষকে টেক্কা দেওয়ার কৌশলও রপ্ত করে ফেলেছে তারা।
ফিফা র্যাংকিং ৬
শক্তি
রদ্রিগো বেন্টাঙ্কুর, লুকাস তোরেয়েরা, ফ্রেডেরিকো ভালভের্দেরা গত বিশ্বকাপেও ছিলেন, এবার আরও একটু পরিপক্ক হয়ে যাচ্ছেন কোপায়। এই তিন মিডফিল্ডারের সঙ্গে আছেন নাহিতান নান্দেজ ও মাতিয়াস ভেসিনো। এতদিন হয় রক্ষণ হয় আক্রমণ ছিল উরুগুয়ের শক্তি। তবে এবার মিডফিল্ড এবার উরুগুয়ের সবচেয়ে বড় আশার জায়গা। উরুগুয়ের সাফল্য, ব্যর্থতার অনেকখানিও নির্ভর করছে মিডফিল্ডারদের ওপর।
দূর্বলতা
বার্সেলোনার হয়ে এই মৌসুমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি লুইস সুয়ারেজ। ইনজুরিতে ভুগছেন এডিনসন কাভানিও। গোলের সামনে এই দুইজন কেমন করবেন সেটা নিয়ে তাই এবার সংশয় আছে। ডিয়েগো গডিনও সেরা সময় পেছনে ফেলে এসেছেন। তরুণদের সঙ্গে উরুগুয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারদের সমন্বয় কতোখানি সফল হবে সেটা অজানাই।
সেরা সাফল্য চ্যাম্পিয়ন (১৯১৬, ১৯১৭, ১৯২০, ১৯২৩, ১৯২৪, ১৯২৬, ১৯৩৫, ১৯৪২, ১৯৫৬, ১৯৫৯, ১৯৬৭, ১৯৮৩, ১৯৮৭, ১৯৯৫, ২০১১)
যার ওপর চোখ
লুকাস তোরেয়েরা
২৩ বছর বয়সী আর্সেনাল মিডফিল্ডার দারুণ এক বিশ্বকাপ কাটিয়েছেন গতবার। আর্সেনালের হয়ে কিছুটা অ্যাডভান্সড পজিশনে খেললেও জাতীয় দলে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রোলেও দুর্দান্ত তিনি। ৪-৪-২ ফর্মেশনে সুবিধা পান বেশি, তবে তিনজনের মিডফিল্ডেও বক্স টু বক্স মিডফিল্ডারের ভূমিকায় ভালো। তোরেয়েরা তাই উরুগুয়ের ট্রাম্পকার্ড।
চিলি, গ্রুপ সি
কোপা আমেরিকার শেষ দু’বারের চ্যাম্পিয়ন চিলি। লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটটা দ্বিতীয়বারের মত ধরে রাখার মিশনে নামছে তারা। তবে গত বিশ্বকাপে জায়গা না পেয়ে বড় সড় একটা ধাক্কাই খেয়েছে চিলি। চার বছর আগের দুর্দান্ত সেই দলটাও প্রায় মলিন। গত দুইবারের চ্যাম্পিয়নরাই তাই এবার কিছুটা পিছিয়ে খেলছে ব্রাজিলের কোপায়।
ফিফা র্যাংকিং ১৫
শক্তি
অভিজ্ঞতা। শেষ দু’বারের কোপা জেতা দলের অনেকেই এখনও আছেন স্কোয়াডে। বড় ম্যাচের চাপে তাই আর যে দলই হোক, চিলির ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা হয়তো সবচেয়ে কম।
দলগত প্রচেষ্টা। দলে বিশ্বমানের কয়েকজন ফুটবলার থাকলেও দল হিসেবে চিলির পারফরম্যান্স অনন্য। কোনও একক ফুটবলারের উপর নির্ভর না করে দল হিসেবে খেলায় চিলির জুড়ি মেলা ভার। এজন্যই সানচেজ বা ভিদালদের ওপর বাড়তি চাপ নেই।
দূর্বলতা
রক্ষণাত্মক ট্যাকটিক্স। আক্রমণের চেয়ে রক্ষণের দিকেই মনযোগ বেশি দিয়ে থাকে। কোচ বদলালেও দর্শন একই রয়ে গেছে তাদের। ফলে কোনও ম্যাচে পিছিয়ে পড়লে ফিরে আসা চিলির জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ।
প্রেসিং ফুটবল। গড় বয়সের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা এবং প্রেসিং ফুটবলে বিশ্বাসী চিলি প্রথমার্ধে দারুণ খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা ভেঙে পড়ে। অন্তত সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোয় দেখা গেছে সেটাই। পুরো ম্যাচে স্ট্যামিনা ধরে রাখতে না পারাও চিলির বড় এক দূর্বলতা।
সেরা সাফল্য চ্যাম্পিয়ন (২০১৫, ২০১৬)
যার ওপর চোখ
অ্যালেক্সিস সানচেজ। কুতিনিয়োর মতই ক্লাব ফুটবলে মৌসুম প্রচণ্ড হতাশাজনক কেটেছে তার। কিন্তু ক্লাবের সানচেজ এবং চিলির সানচেজের মাঝে আকাশপাতাল পার্থক্য। শেষ দুই আসরে ছিলেন দুর্দান্ত, হ্যাটট্রিক শিরোপা অর্জনে সানচেজের দিকেই তাকিয়ে থাকবে চিলি।
কলম্বিয়া, গ্রুপ বি
এবারের কোপা আমেরিকা নিয়ে ব্রাজিলের পর সবচেয়ে বেশি আশাবাদী হয়তো কলম্বিয়া। কিংবদন্তী গোলরক্ষক রেনে হিগুইতা তো বলেই দিয়েছেন, তার দেশ কোপা না জিতলে নিজের বাহারি চুলই কেটে ফেলবেন। আগামী বিশ্বকাপ আরও বছর তিনেক পর। ক্যারিয়ারের গোধূলিবেলার আগে তাই এবারই হয়তো রাদামেল ফালকাওদের সামনে শেষ সুযোগ দেশের হয়ে কিছু করার। হামেস রদ্রিগেজের সময়টাও ভালো যাচ্ছে না। গত বিশ্বকাপে তাড়াতাড়িই বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। এবারের কোপা হামেসের জন্য ফর্ম ফিরে পাওয়ার লড়াইও।
ফিফা র্যাংকিং ১২
শক্তি
দুর্দান্ত আক্রমণভাগ। লাতিন আমেরিকার অন্যতম সেরা সব ফরোয়ার্ড কলম্বিয়ার। হামেস-ফালকাওরা ছিলেন আগেই, এবার যোগ হয়েছেন তরুণ দুভান জাপাতা এবং লুইস মুরিয়েল। কলম্বিয়ার সাফল্য বা ব্যর্থতা অনেকাংশেই নির্ভর করছে ফরোয়ার্ডদের উপর।
অভিজ্ঞতা। কার্লোস কুইরোজের স্কোয়াডে ফরোয়ার্ডদের মত মিডফিল্ড এবং রক্ষণে অভিজ্ঞতার অভাব নেই। ২০১৪ বিশ্বকাপের অনেকেই এখনও আছেন দলে। একসাথে দীর্ঘদিন খেলায় বোঝাপড়াটাও দারুণ তাদের।
দুর্বলতা
আক্রমণে গতির অভাব। হামেস-ফালকাওরা বিশ্বমানের ফুটবলার হলেও কলম্বিয়ার আক্রমণ গতির চেয়ে গোছানো পাসিং ফুটবলের দিকে মনযোগী বেশি। শ্লথ গতির আক্রমণের কারণে বেশ ভুগতেও হতে পারে তাদের।
সেরা সাফল্য
চ্যাম্পিয়ন (২০০১)
যাদের ওপর চোখ
দুভান জাপাতা। ইতালিয়ান ক্লাব আটলান্টার নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার মূল কৃতিত্ব তারই। ২৮ গোল করা জাপাতা প্রথমবারের মত দেশের হয়ে কোনও টুর্নামেন্ট খেলবেন, তাও ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থেকে।
প্যারাগুয়ে, গ্রুপ বি
২০১০ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া প্যারাগুয়ে দলটা এখন ইতিহাস। এরপর টানা দুই বিশ্বকাপে যাওয়া হয়নি প্যারাগুয়ের। তবে গত ৮ বছরে চড়াই উতরাইয়ের প্রায় পুরোটাই দেখা হয়ে গিয়েছে প্যারাগুয়ের। গত বছর কোনো ম্যাচই জেতা হয়নি তাদের। এখনও চলছে দল পুনর্গঠনের কাজ। অস্কার কার্দোজোর মতো সোনালী যুগের ফুটবলার যেমন দলে আছেন, মিগুয়েল আলমিরনদের মতো তরুণরাও আছেন।
ফিফা র্যাংকিং ৩৬
শক্তি
২০১০ বিশ্বকাপ ও ২০১১ কোপার রানার আপ দলের খেলোয়াড়দের ফেলে যাওয়া জায়গা পূরণ করার কাজ সহজ ছিল প্যারাগুয়ের। এখনও সেই কাজটাই করে যাচ্ছে তারা। তবে গত ৮ বছরের মধ্যে এবারের স্কোয়াডকে প্যারাগুয়ের সেরা বলা যায়।
দুর্বলতা
হুয়ান কার্লস অসরিওকে নিয়োগ দেওয়ার পর মাত্র এক ম্যাচ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এরপর আর্জেন্টাইন এদুয়ার্দো বেরিজোকে মার্চে নতুন কোচ করে আনে প্যারাগুয়ে। কিন্তু তার দর্শনের সঙ্গে প্যারাগুয়ের ফুটবল দর্শন খাপ খায় না ঠিকঠাক। হাই ডিফেন্সিভ লাইন আর ফ্লুইড পাসিং ফুটবল প্যারাগুয়ের শক্তি ছিল না কখনই। বেরিজোকে নিয়োগ দেওয়ার কারণ অবশ্য এবারের কোপা নয়, পরেরবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগে একটা শক্ত দল গড়া। প্যারাগুয়ের লক্ষ্যও তেমন।
সেরা সাফল্য চ্যাম্পিয়ন (১৯৫৩, ১৯৭৯)
যার ওপর চোখ
মিগুয়েল আলমিরন
নিউক্যাসেল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের পায়ে জাত লাতিন ছন্দ আছে। এ বছরই যোগ দিয়েছিলেন ইংলিশ ক্লাবটিতে, তবে ইনজুরির কারণে বেশিরভাগ সময় পার করতে হয়েছে মাঠের বাইরে। সুস্থ্য হয়ে নতুন একটা শুরুর জন্য এর চেয়ে বড় উপলক্ষ্য আর পেতেন না আলমিরন।
পেরু, গ্রুপ এ
৩৬ বছর পর গতবার রাশিয়াতে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছিল পেরু। মোটামুটি সেই দলটাই খেলছে ব্রাজিলে। তবে নতুন যারা এসেছেন তারা একেবারেই আনাড়ি।
ফিফা র্যাংকিং ২১
শক্তি
গত বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে প্রায় আটকে দিয়েছিল পেরু। সেই সুখস্মৃতি বড় টুর্নামেন্টে আরও একবার কাজে দিতে পারে পেরুভিয়ানদের। দল হিসেবে নতুন ইতিহাস লেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবে কেন তারা?
দুর্বলতা
বিশ্বকাপের পর থেকেই পেরু পারফরম্যান্স নিম্নগামী। কোচ লিওনার্দো গারেচার ৪-২-৩-১ ফর্মেশনও কিছুটা অনুমিত হয়ে গেছে বাকি প্রতিপক্ষদের জন্য। কপায় সাফল্য পেতে হলে তাই গারেচাকে নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হতে পারে।
সেরা সাফল্য চ্যাম্পিয়ন (১৯৩৯, ১৯৭৫)
যার ওপর চোখ
পাওলো গেরেরো
৩৫ বছর বয়সী স্ট্রাইকার পাওলো গেরেরো দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলার। ৮৯ ম্যাচ খেলেছেন, গোল করেছেন ৩৫ টি। দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। খুব সম্ভবত ক্যারিয়ারের শেষ বড় টুর্নামেন্ট খেলছেন ব্রাজিলে। গোলের সামনে পেরুর সবচেয়ে বড় ভরসাও তিনি।
জাপান, গ্রুপ সি
লাতিন আমেরিকার বাইরে থেকে এবারের আসরে কোপা আমেরিকা খেলতে আসা দুই দলের একটি। গত বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের বিপক্ষে দুই গোলে এগিয়ে থেকেও ইনজুরি সময়ের গোলে হেরে বসা জাপান দলটার কথা নিশ্চয় ভুলে যাননি এতো তাড়াতাড়ি? তবে এখনকার দলটা দেখলে খেলোয়াড়দের চিনতে কিছুটা সমস্যাই হবে। পুরোনোরা চলে গেছেন, নতুনরা এসেছেন। তবে বছরের শুরুতে এশিয়ান কাপে রানার আপ হয়েছে তারা নতুন দল নিয়েই। ২০ বছর আগেও একবার কপায় খেলেছিল জাপান, তবে সেই জাপান আর এখনকার কাপানের মধ্যে তফাৎ আকাশ আর পাতালের।
আগামী বছর টোকিও অলিম্পিককে সামনে রেখে দল গোছাচ্ছে জাপান। স্কোয়াডের ১৮জনের বয়সই ২২ এর নিচে।
ফিফা র্যাংকিং ২৬
শক্তি
দল হিসেবে জাপানকে ভাঙা খুবই কঠিন কাজ। এটাই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। দলে অনুপ্রেরণার অভাব নেই। এই দলের কাছে কোপায় তেমন প্রত্যাশাও নেই জাপানিজদের। তাই নির্ভার থেকে ভালো ফুটবল খেলার পথে কোনো বাধা নেই জাপানের।
দুর্বলতা
সিনঝি ওকাজাকি আছেন দলের সঙ্গে। ৩৩ বছর বয়সী লেস্টার সিটি স্ট্রাইকার জাপাএর সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে গত এক বছরে তার ফর্মও পড়তির দিকে। গোলের জন্য ওকাজাকি ব্যর্থ হলে তরুণদের ওপর ভর করতে হবে জাপানকে।
যার ওপর চোখ
গকু শিবাসাকি
২৭ বছর বয়সী গেটাফে ডিফেন্ডার শিবাসাকি ছিলেন গত বিশ্বকাপে জাপানের রক্ষণের মূল চালিকাশক্তি। এক বছর পর এখন রক্ষণের নেতাই তিনি।
ইকুয়েডর, গ্রুপ সি
গ্রুপের কোনো দলকেই ভয় পাওয়ার কথা নয় তাদের। কোচ হার্নান দারিও গোমেজ উত্তর আমেরিকার পরিচিত নাম। তিনটি দেশকে নিয়ে বাছাইপর্ব উতরে বিশ্বকাপে নিয়ে গেছেন তিনি। ইকুয়েডরের দায়িত্ব নিয়েছেন দ্বিতীয় দফায়।
ফিফা র্যাংকিং ৫৯
শক্তি
দারিও গোমেজ দায়িত্ব নেওয়ার পর রক্ষণে বেশ উন্নতি করে ইকুয়েডর। আক্রমণ অবশ্য কখনই তাদের সেরা অস্ত্র ছিল না।
দুর্বলতা
দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই বয়সে ত্রিশোর্ধ্ব। ইকুয়েডর কোচ নিজেও কোপা নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। অনূর্ধ্ব-২০ দল নিয়েই নতুন স্কোয়াড বানানোর পকিকল্পনা তার। লাতিন আমেরিকার সেরা তারা, অনুর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপেও ইকুয়েডর এবার খেলেছে সেমিফাইনালে। দুই টুর্নামেন্টের সময়সুচীত কাছাকাছি হওয়ায় সেই দলটা আর পাচ্ছেন না ইকুয়েডর কোচ।
সেরা সাফল্য চতুর্থ স্থান (১৯৫৯, ১৯৯৩)
যার ওপর চোখ
এনার ভ্যালেন্সিয়া
গোলের জন্য ভ্যালেন্সিয়ার ওপর খুব বেশি নির্ভর করতে হয় ইকুয়েডরকে। জাতীয় দলের হয়ে গোলের রেকর্ড অবশ্য বেশ ভালো, ৪৭ ম্যাচে ২৮ গোল করেছেন ভ্যালেন্সিয়া।
বলিভিয়া, গ্রুপ এ
ব্রাজিল, পেরু এবং ভেনেজুয়েলার সাথে ‘এ’ গ্রুপে আছে বলিভিয়া। এই গ্রুপ থেকে বলিভিয়ার পরের রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, সাম্প্রতিক ফর্মও তাদের বিপক্ষে। রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে লাতিন আমেরিকার ১০ দলের মধ্যে নবম হয়েছিল তারা। প্রত্যাশাটা তাই এবারও কম বলিভিয়ানদের থেকে।
ফিফা র্যাংকিং ৬৩
শক্তি
গতিশীল ফুটবল। গোছানো আক্রমণের চেয়ে ‘ডিরেক্ট’ ফুটবলেই বিশ্বাসী তারা। প্রতি-আক্রমণে বলিভিয়ানরা দুর্দান্ত। ব্রাজিলের মত দলের বিপক্ষে রক্ষণভাগ পারফর্ম করলে প্রতি-আক্রমণে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে তারা।
দুর্বলতা
ওয়ান ম্যান টিম। স্ট্রাইকার মার্সেলো মার্টিনসই দলের একমাত্র ভরসা। ৩১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার বলিভিয়ার ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা (১৭)। কিন্তু ডিফেন্ডাররা তাকে আটকে ফেললে বলিভিয়ার আক্রমণের তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল।
সেরা সাফল্য
চ্যাম্পিয়ন (১৯৬৩)
যাদের ওপর চোখ
মার্সেলো মার্টিনস। আক্রমণে বলিভিয়ানদের মূল ভরসা। পরের রাউন্ডে যেতে হলে তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে বলিভিয়ানরা।
কাতার, গ্রুপ বি
২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজক এবং এ বছরের এএফসি এশিয়ান কাপ জেতা দেশটির জন্য যা নিঃসন্দেহে নিজেদের প্রমাণ করার দারুণ এক প্লাটফর্ম।
ফিফা র্যাংকিং ৫৫
শক্তি
স্কোয়াডে ৫০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে ১০জনের। তরুণদের মধ্যে অনেকেই খেলেছেন ২০-৩০টির ম্যাচ। সব মিলিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই একসাথে খেলছে কাতার দল। বোঝাপড়াটাও তাই দারুণ তাদের মাঝে।
এজন্যই জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মত দলকে টপকে এএফসি এশিয়ান কাপ জিতেছিল তারা। কোপাতেও এই অভিজ্ঞতার উপরই নির্ভর করবে তারা।
দূর্বলতা
লাতিন আমেরিকার পরিবেশ এবং প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেকটাই আলাদা কাতার। আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়ার মত দলগুলোর বিপক্ষে এই মানিয়ে নিতে না পারাটাই হয়তো দূর্বলতা হয়ে দাঁড়াবে তাদের জন্য।
যাদের ওপর চোখ
আলমইজ আলি
২০১৯ এএফসি এশিয়ান কাপে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। ক্ষীপ্র গতি, ড্রিবলিং এবং চমৎকার ফিনিশিংয়ে নজর কেড়েছেন অনেকের। আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া এবং প্যারাগুয়েকে নিয়ে ‘গ্রুপ অফ ডেথ’ থেকে পরের রাউন্ডে যেতে তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকবে কাতার।
ভেনেজুয়েলা, গ্রুপ এ
এ বছরের মার্চে আর্জেন্টিনাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিইয়েছিল ভেনেজুয়েলা। প্রীতি ম্যাচ হলেও দল হিসেবে তাদের সামর্থ্যের জানানটা সেদিনই পেয়েছে সবাই। এখন পর্যন্ত একমাত্র লাতিন আমেরিকার দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ না খেলা ভেনেজুয়েলার থেকে এবার প্রত্যাশা অন্যান্য বারের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি সমর্থকদের। তারুণ্যের সাথে অভিজ্ঞতার মিশেলটাও দারুণ তাদের।
ফিফা র্যাংকিং ২৯
শক্তি
স্ট্রাইকার জুটি। আটালান্টা ইউনাইটেডের জোসেফ মার্টিনেয এবং নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সলোমন রন্ডন আছেন দারুণ ফর্মে। দেশের হয়েও রেকর্ডটা প্রশংসনীয় তাদের। শেষ কোপা আমেরিকাতেও খেলেছিলেন দুজন। মার্টিনেজের গতি এবং ক্রসে রন্ডনের সামর্থ্য দারুণ, নিজেদের দিনে যেকোনও রক্ষণভাগকে গুঁড়িয়ে দিতে পারেন তারা।
দুর্বলতা
প্রতি-আক্রমণ নির্ভরশীলতা। গোছানো বা ক্রসনির্ভর খেলার চেয়ে রক্ষণাত্মক ধরণের খেলাই খেলে থাকে ভেনিজুয়েলা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রতি-আক্রমণই তাদের মূল অস্ত্র। সাথে আছে মার্টিনেজ এবং রন্ডনের উপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতা।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলাকে আটকে দেওয়া খুব কঠিনও নয় বড় দলগুলোর জন্য। দুই স্ট্রাইকার ছাড়া কোনও ‘প্ল্যান বি’ না থাকাটাও ভেনেজুয়েলার দুর্বলতা।
যার ওপর চোখ
সলোমন রন্ডন। মার্টিনেজের থাকলেও ভেনেজুয়েলার মূল অস্ত্র তিনিই। ক্রসে খেলায় বা বল শিল্ড করে অন্য ফরোয়ার্ডদের খেলায় আনার কাজটা দারুণভাবে করে থাকেন তিনি। ‘এ’ গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে যেতে হলে স্বরূপেই থাকতে হবে নিউক্যাসলের স্ট্রাইকারকে।