• কোপা আমেরিকা
  • " />

     

    কলম্বিয়ার কাছে কেন হারল আর্জেন্টিনা?

    কলম্বিয়ার কাছে কেন হারল আর্জেন্টিনা?    

    কলম্বিয়ার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে আর্জেন্টিনা শুরু করেছে তাদের কোপা আমেরিকা মিশন। এই নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার কোপায় নিজেদের প্রথম ম্যাচ হারলো আর্জেন্টিনা- ১৯১৯, ১৯৭৯ এরপর ২০১৯ এ এসে। আর কলম্বিয়ার জন্য জয়টা ইতিহাস গড়াই। এই নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার কোপায় তারা হারিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। আর ১৯৯৯ সালের পর প্রথমবার।

    আর্জেন্টিনার পরের ম্যাচ প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে ফল বিপরীতে গেলে বিপদেই পড়ে যাবে আর্জেন্টিনা। প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়ঘন্টাও বেজে যেতে পারে। কলম্বিয়ার বিপক্ষে হারেও শুধরে নেওয়ার মতো অনেককিছুই আছে আর্জেন্টিনার। সেসবের কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের কোন পজিশনে আর কীভাবে হারলো আর্জেন্টিনা সেদিকেই নজর দেওয়া যাক…


    রাইটব্যাকে অপ্রস্তুত রেনজো
    রক্ষণে সমষ্টিগতভাবেই নিজেদের গড়পড়তা মানের খেলাও খেলতে পারেনি আর্জেন্টিনার রক্ষণ। রেনজো সারাভিয়া আক্রমণ, রক্ষণ দুই জায়গাতেই ছিলেন নড়বড়ে। লিওনেল মেসির সঙ্গে একবারও সঠিক বোঝা পড়া হয়নি তার। মেসি বেশ কয়েকবার তাকে ওভারল্যাপ করে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কখনও দৌড় শুরু করেছেন দেরি করে, কখনও ডিফেন্ডারদের বাধায় পড়েছেন সারাভিয়া। কলম্বিয়ার প্রথম গোলেও তার ভুল দায়ী। রজার মার্টিনেজ লং বল রিসিভ করেছেন, এরপর তাকে কাটিয়ে করেছেন গোল। মার্টিনেজকে প্রেস করার যথেষ্ট সময় সারাভিয়ার হাতে ছিল বলেই মনে হয়েছে। পুরো ম্যাচে চারজনের ব্যাকলাইন ঠিকঠাকভাবে মেনে  চলছিল আর্জেন্টিনা। সে দফায় সারাভিয়ার সঙ্গে আরও তিন ডিফেন্ডার থাকলেও সারাভিয়া  ন্যারো ডিফেন্ডিং করতে গিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন কলম্বিয়াকে।

    গোলরক্ষকের দুর্বলতা
    রিভার প্লেট গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আর্মানি কোপা আমেরিকার মতো টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনা দলে খেলার জন্য প্রস্তুত কী না সেই  প্রশ্ন উঠতেই পারে। গত বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে একাধিক ভুল করেছিলেন দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায়। এক বছরে জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা বেড়েছে আর্মানির। কিন্তু উন্নতি হয়নি কিছুই। নিচ থেকে বিল্ড আপ করে খেলায় শুরু থেকেই সমস্যায় পড়ছিলেন। তবুও ঝুঁকি নিয়ে সেই কাজটা করে গেছেন প্রথমার্ধে। তাতে আত্মবিশ্বাস আরও হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। ৩০ মিনিটে তো হাস্যকর ভুলে গোলও খেয়ে বসতে পারেন। ম্যাচ শেষে লো সেলসোর ধন্যবাদ প্রাপ্য হয়ে গেছে তাই তার কাছে। আর্মানিকে গোল খাওয়ার হাত থেকে তখন বাঁচিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার।

    সার্জিও রোমেরোকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই আর্জেন্টিনার রক্ষণের নড়বড়ে অবস্থার উন্নতি হয়নি আর। গোলবার সামাল দেওয়া যার কাজ তিনিই যদি নড়বড়ে থাকেন, সেটার প্রভাব পড়তে পারে ডিফেন্ডারদের মানসিকতার ওপরও।  এতোসব কিছু জেনেও স্কালোনি নিজের পছন্দকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন দল ঘোষণায়। স্কালোনি কি নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রথম ম্যাচের পরই সংশয়ে পড়ে গেলেন?  

    ব্যাক পাস, ব্যাক পাস, ব্যাক পাস....
    ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকায় শুরুতে নেমেছিলেন গুইদো রদ্রিগেজ। খেলোয়াড় হিসেবে তার অভিজ্ঞতাও কম জাতীয় দলে। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মাঠেও। যতক্ষণ ছিলেন তাকে খুঁজে পাওয়াও ছিল দায়। আর বল যতবার পেয়েছেন সঠিক পাস দিয়েও তেমন একটা কাজে লাগাতে পারেননি সেই সুযোগগুলো। বল রিকভারি করার মতো সেই মিডফিল্ডার কই আর্জেন্টিনার? লিয়ান্দ্রো পারেদেস সময়ে সময়ে  ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকায় ছিলেন। কিন্তু তার অবস্থা আরও কাহিল, সেই অর্থে ডেস্ট্রোয়ারের ভূমিকায়ও থাকতে পারেননি, আবার সৃজনশীল কিছুও আসেনি তার পা থেকে। ভুল ভাল পাস দিয়ে বার বার ছন্দ নষ্ট করেছেন দলের। একমাত্র জিওভানি লো সেলসোকে কিছুটা সফল বলা যায়। ম্যাচে মেসি সবচেয়ে পাস পেয়েছেন তার কাছ থেকেই। বেশ কয়েকবার ডায়াগোনাল বল মারারও চেষ্টা করেছিলেন লো সেলসো। এছাড়া বাকিরা সবাই মেতেছিলেন ব্যাক পাস খেলার উৎসবে। মিডফিল্ড থেকে রক্ষণ, আবার সেখান থেকে মিডফিল্ড ঘুরে আবার রক্ষণে- আর্জেন্টিনার প্রথমার্ধের ২১৪ পাসের অধিকাংশই গেছে আর্জেন্টিনার রক্ষণের দিকে। মিডফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খেলার যে ধারা আর্জেন্টিনায় চলে আসছে বহু যুগ ধরে, সেটা আর যাই হোক এই দলের পক্ষে যে সম্ভব নয় সেটাই যেন প্রমাণ করেছেন পারেদেসরা।

    মেসি-আগুয়েরোর সমন্বয়হীনতা  
    লিওনেল মেসি আর সার্জিও আগুয়েরোর টেলিপ্যাথি সম্পর্কের কথা শোনা যায় প্রায়ই। কিন্তু এই জুটি বরাবরই ব্যর্থ। আরও একবার ব্যর্থ নতুন করে, নতুন আরেক টুর্নামেন্টে। তীর্থের কাকের মতো দুইজনই প্রথমার্ধে অপেক্ষায় ছিলেন মিডফিল্ড থেকে বল পাওয়ার। যোগান আসেনি, মেসি নেমে গিয়েছিলেন মিডফিল্ডে। তাতে আগুয়েরো আরও একা পড়ে রয়েছিলেন কলম্বিয়ার অর্ধে। প্রথমার্ধে কেউই কলম্বিয়ার ডিবক্সের ভেতর বল টাচও করতে পারেননি। আর আগুয়েরো-মেসি প্রথমার্ধে নিজেদের মধ্যে সফল পাস আদান প্রদান করতে পারেননি একবারও। আক্রমণই যে দলের প্রধান শক্তি, সেটাই যদি দুর্বলতা হয়ে যায়, তখন ম্যাচের ভাগ্য এমনটা তো হতেই পারে।