ভিএআরের ভেলকিতে ভেনেজুয়েলায় আটকে গেল ব্রাজিল
ম্যাচের আর মিনিট পাঁচেক বাকি তখন। সালভাদরে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে প্রথমার্ধে গোল করতে না পারায় আগের ম্যাচের মত আবারও দুয়ো শোনা ব্রাজিল জাল খুঁজে পায়নি তখনও। দুই অর্ধে দু’বার ভেনেজুয়েলার জালে পাঠিয়েছিল তিতের দল, কিন্তু বাতিল হয়েছে দুটিই। এমন সময় জ্বলে উঠলেন বলিভিয়া ম্যাচের দুই নায়ক এভারটন এবং ফিলিপ কুতিনিয়ো। বদলি এভারটনের পাসে গোল করলেন কুতিনিয়ো, কিন্তু ‘থার্ড টাইম লাকি’ আর হওয়া হল না ব্রাজিলের। আবারও ‘ভিএআর’-এ বাতিল হল গোল; রিপ্লেতে দেখা গেল, অফসাইডে থেকে খেলায় পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলছিলেন স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনো। ‘ভিএআর’-এর ভেলকিতে জয় হাতছাড়া হল ব্রাজিলের, ভেনেজুয়েলার সাথে গোলশূন্য ড্র করেছে তারা। ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকায় টানা ৫ ম্যাচের জয়রথ থেমে গেল তাদের।
‘ভিএআর’-এর গোল বাতিলের উৎসবের পরও শেষ হাসি হাসতে পারত ব্রাজিল। যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে কর্নার থেকে ফার্নান্দিনহোর হেড চলে যায় গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে, ‘ফার পোস্ট’-এ সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি বদলি ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল হেসুস। খুব সম্ভবত আজ ব্রাজিলের সবচেয়ে দুর্ভাগা ফুটবলার ফিরমিনোই। ‘সেলেসাও’দের বাতিল হওয়া ৩টি গোলেই জড়িত ছিলেন তিনি। প্রথমার্ধে ভেনেজুয়েলার জালে বল পাঠিয়েছিলেন নিজেই, কিন্তু শট নেওয়ার আগে ডিফেন্ডার ভিয়ানুয়েভাকে ফাউল করে বসেন ফিরমিনো। দ্বিতীয়ার্ধের বদলি ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল হেসুসের গোলে পাস বাড়িয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সেবারও অফসাইডে ছিলেন ফিরমিনো।
ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের একাদশে আজ একটি পরিবর্তন এনেছিলেন তিতে, ফার্নান্দিনহোর জায়গায় নেমেছিলেন আর্থার মেলো। বলিভিয়া ম্যাচের মত প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে ব্রাজিল। বল দখল, গোলের সুযোগ তৈরিতে এগিয়ে ছিল তারাই, কিন্তু ভেনেজুয়েলার ‘বাস পার্ক’ ট্যাকটিক্সের সামনে বারবার খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাদের। প্রথমার্ধে লক্ষ্যে ব্রাজিলের শট ছিল ৬টি, কিন্তু ভেনেজুয়েলা গোলরক্ষক ফারিনেজকে তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি তারা। উল্টো ভাগ্য সহায় হলে ১৯ মিনিটে লিড নিতে পারত ভেনেজুয়েলাই।
কিন্তু হার্নান্দেজের ক্রসে তার হেড চলে যায় অ্যালিসন বেকারের গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। প্রথমার্ধে ৭৫ ভাগ বল পজেশন, ৬ শটের পরেও গোলের কোঠা শূন্যই ছিল ‘সেলেসাও’দের। ফলাফল? বলিভিয়া ম্যাচের মত প্রথমার্ধ শেষে দুয়ো শুনেই মাঠ ছাড়তে হয় কুতিনিয়োদের। বলিভিয়ার সাথে দুর্দান্ত রিচার্লিসন আজ যেন হারিয়ে খুঁজছিলেন নিজেকে। গোলের আশায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তাকে উঠিয়ে গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে নামিয়ে দেন তিতে। ফলটাও পেয়েছিলেন হাতেনাতে।
৬০ মিনিটে ভেনেজুয়েলার জালে বল পাঠিয়েছিলেন হেসুস। কিন্তু প্রথমার্ধের মত এবারও ভাগ্য সহায় হয়নি পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। অবশ্য ভাগ্য সহায় হওয়ার চেয়ে ‘ভিএআর’-কে দুষতেই পারেন তিতে। ডিবক্সের বাইরে থেকে হেসুসের নেওয়া শট ভিয়ানুয়েভার গায়ে লেগে আসে ফিরমিনোর দিকে, লিভারপুল ফরোয়ার্ডের পাস থেকে দলকে লিড এনে দেন হেসুস। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বল নিয়ন্ত্রণে আনার সময় অফসাইডে ছিলেন ফিরমিনো। 'ভিএআর’-এ রিভিউয়ের পর নিজেই আরেকবার পরখ করে গোল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন মূল রেফারি হুলিও বাসকুনান।
হতাশ সালভাদর তখন রেফারিকে দুয়ো দিতে ব্যস্ত। ডাগআউটে রাগান্বিত তিতেকে ঠাণ্ডা করতে সতর্কবাণীও জানান ফোর্থ অফিশিয়াল। কিন্তু ‘ভিএআর’-এর বিতর্ক শেষ হয়নি সেখানে। অন্তিম মুহূর্তে বাতিল হওয়া গোলেও ভিডিও রেফারির দিকে আঙ্গুল তুলতেই পারেন তিতে। বাতিল হওয়া তিন গোলের দুটিতেই আছে দারুণ বিতর্ক। ২ ম্যাচ শেষে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষেই আছে ব্রাজিল। কিন্তু সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, প্রতিপক্ষের জালে তিনবার বল পাঠিয়েও স্কোরলাইন গোলশূন্য। বিতর্ক ঠাসা ড্র হওয়া ম্যাচটি হয়তো ব্রাজিলের কাছে হারেরই সমতুল্য।
ব্রাজিল একাদশ
অ্যালিসন; দানি আলভেজ, থিয়াগো সিলভা, মার্কিনিয়োস, ফিলিপে লুইস; কাসেমিরো (ফার্নান্দিনহো), আর্থার মেলো, কুতিনিয়ো; রিচার্লিসন (হেসুস), ফিরমিনো, নেরেস (এভারটন)