বাজে ফিল্ডিংয়ের জন্য সিদ্ধান্তহীনতা ও স্নায়ুচাপকেই দায়ী করলেন মাশরাফি
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের গ্রাফের ওঠানামার সঙ্গে ফিল্ডিংটাও যেন মিলে গেছে পুরোপুরি। যেদিন দল জিতছে, সেদিন ফিল্ডিং ভালো হচ্ছে। যেদিন খারাপ হচ্ছে, সেদিন ফিল্ডিংয়ের জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে বেশি। আজ সেটা একটু বেশিই দিতে হলো। শুরুতে ওয়ার্নারের ক্যাচ আর রান আউটই যথেষ্ট ছিল। সঙ্গে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংটা ইংল্যান্ডের মতো বাজে না হলেও ভালো হয়নি মোটেই। ম্যাচ শেষে সেটা নিয়ে আক্ষেপের সুর বাজল মাশরাফি বিন মুর্তজার কন্ঠেও। তবে চোট নয়, সেজন্য দায়ী করলেন নিজেদের স্নায়ু ধরতে রাখতে না পারা আর সিদ্ধান্তহীনতাকেই দায়ী করলেন মাশরাফি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের সময়ই একজন ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, বাংলাদেশে সেরকম কোনো আলাদা করার মতো দুর্দান্ত ফিল্ডার না থাকলেও সবাই মিলে দারুণ করেছেন। দুই দিনের মধ্যেই অবশ্য ফিল্ডিংয়ে একদম অন্য চিত্র দেখা গেল। নিয়তির পরিহাসই, এই দলের সেরা ফিল্ডারদের মধ্যে যার নাম শুরুর দিকে তাকবে, তার দায়টাই ছিল বেশি। ১০ রানের মাথায় ওয়ার্নারের ক্যাচটা ধরতে পারেননি সাব্বির, আসলে বুঝতে পারেনই। পরে রান আউটের একটা হাফ চান্সও কাজে লাগাতে পারেননি। মাশরাফি সেটা স্বীকার করলেও টার্নিং পয়েন্ট মানলেন না, ‘এই ধরনের দলের সাথে হাফ চান্স নিতে হবে। শুরুতে সুযোগ দেইনি, উইকেট ওরকম ছিল। রান আউট হলে হতে পারত। তারপরও ৪০ ওভার শেষে ছয় করে যাচ্ছিল। এরপর সব অন্যরকম হয়ে গেছে।’
অথচ সাব্বিরকে নেওয়া আজ ফিল্ডিংয়ে বাড়তি যোগ হতে পারত। আর কিছু না হোক, ফিল্ডিংয়ে সাব্বির বেশিই নিবেদিতপ্রাণ। অন্যরাও খাটছেন কম না, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুকও সবসময় বাড়তি পরিশ্রম করেন খেলোয়াড়দের নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাইফ উদ্দিন আলাদা করেই চোখ কেড়েছিলেন। কিন্তু আজ সেই ফিল্ডিংটাই কাল হলো। এমনিতে মোস্তাফিজ বা রুবেলের মতো এক দুইজন আছেন যাদের ফিল্ডিং নিয়ে গর্ব করা কঠিন। থার্ডম্যান বা ফাইন লেগের মতো জায়গায় তাদের লুকিয়েই রাখা হয়। অথচ আজ শর্ট থার্ডম্যান থেকে রুবেলই বরং সরাসরি থ্রোতে ভেঙে দিলেন স্টাম্প।
কিন্তু ফিল্ডিংয়ে এই ধারাবাহিকতাহীনতার কারণই বা কী? গত বেশ কিছুদিন ধরে ছোটখাটো চোট আছে বাংলাদেশ দলের, সেটা কি একটা কারণ? মাশরাফি অবশ্য সেটা বড় করে দেখছেন না, ‘ অবশ্যই ইনজুরি তো বড় কারণ হবেই। কিন্তু যাদের চোট ছিল, তারা তো ম্যাচের বাইরে ছিল। মোসাদ্দেক সাইফ উদ্দিনের সমস্যা ছিল, খেলতে পারেনি। আর যারা মাঠে ছিল, তারা কমবেশি সবাই ঠিক ছিল। আমার কাছে মনে হয় আমরা একটু টেনশনে থাকি। ওই সময়ে নার্ভ আমরা ধরে রাখতে পারিনা অনেক সময়। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলটা পিক করার সময়। কোন এন্ডে থ্রো করবে এটার ব্যাপার থাকে। ওদের ফিঞ্চ যেমন ওয়েট করে থ্রো ধরেছে। এই সিদ্ধান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময় নার্ভ ধরে রাখতে পারিনি। ’
উপমহাদেশীয় দল হয়েও ফিল্ডিংয়ে একসময় দুর্দান্ত ছিল শ্রীলংকা, আর এখন তো ভারত নিজেদের নিয়ে যাচ্ছে অন্য উচ্চতায়। স্নায়ু ধরে রাখার দীক্ষা নিতে পাশের দেশের দিকে তাকাতেই পারে বাংলাদেশ।