সেমির পথে বাংলাদেশের সামনে যত 'যদি, কিন্তু'...
গত দুই দিনের দুইটি ম্যাচ বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ প্রায় শেষই করে দিল। নিউজিল্যান্ডের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার পর কাল অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারল বাংলাদেশ, খুব বড় অঘটন না হলে শীর্ষ চারে পরিবর্তন আসা খুব কটিন। বাংলাদেশেরও বাকি আছে তিন ম্যাচ। সেই তিনটিতে জিতলেই শুধু হবে না, এরপর নির্ভর করতে হবে অনেক যদি-কিন্তুর ওপর। সমীকরণটা আর যে নিজেদের হাতে নেই!
শীর্ষ চারের সঙ্গে বাকিদের পার্থক্য কতটা, তা স্পষ্ট বোঝা গেছে কালকের ম্যাচের পর। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেও পয়েন্ট তালিকার পাঁচে আছে বাংলাদেশ, জিতলেও কিন্তু সেই পাঁচেই থাকত। ৭ পয়েন্ট নিয়ে ভারত চারে আছে বটে, কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে দুইটি ম্যাচ কম খেলেছে তারা। ভারতের ম্যাচ বাকি আছে আফগানিস্তান, শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে। বাংলাদেশের সঙ্গে যদি হেরেও যায়, বাকি চার ম্যাচের দুইটিতে জিতলেই ভারত উঠে যেতে পারে শেষ চারে।
তার আগে বাংলাদেশের হিসেবটা একটু পরিষ্কার হয়ে আসা যাক। ছয় ম্যাচে মাশরাফিদের পয়েন্ট ৫, পরের তিনটি ম্যাচ জিতলেও পয়েন্ট হবে ১১। ভারত অন্তত দুইটি জিতলে তাদেরও ১১ হবে, দুই দলের জয় যদি সমান হয় তাহলে দেখা হবে রান রেট। যেখানে ভারত এই মুহূর্তে এগিয়ে আছে অনেক।
ইংল্যান্ডের পয়েন্ট এই মুহূর্তে পাঁচ ম্যাচে ৮। আজ শ্রীলংকার কাছে যদি হেরেও যায়, তাহলে ছয় ম্যাচে হবে ৮। পরের তিনটি ম্যাচে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ড। কোনোভাবে আজ শ্রীলংকা জিতে গেলে ইংল্যান্ডের পরের তিন ম্যাচ থেকে অন্তত একটি জয় লাগবে। তবে দুইটি জয় না পেলে তাদের শেষ চার নিয়েও টানাটানি পড়ে যেতে পারে। ইংল্যান্ডে এই মুহূর্তে যেমন খেলছে, সেটা হওয়ার কারণ নেই।
আপডেট: শ্রীলংকার কাছে ইংল্যান্ড হেরে যাওয়ায় এখন ছয় ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৮। পরের তিন ম্যাচে অন্তত একটি জিততেই হবে। শ্রীলংকাও বাংলাদেশকে টপকে উঠে এসেছে পাঁচে, ছয় ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৬। তাদের ম্যাচ বাকি দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের সঙ্গে। এই তিন ম্যাচের দুইটি জিতলে তাদেরও উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে শেষ চারে।
অস্ট্রেলিয়াও পাঁচ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে সেমিতে এক পা দিয়েই আছে। পরের তিনটি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এই তিনটি ম্যাচের একটিতে জয় পেলেই তাদের শেষ চারে চলে যাওয়ার কথা।
নিউজিল্যান্ডও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতে সমীকরণ অনেক সহজ করে ফেলেছে। পাঁচ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৯। একটি ম্যাচ জিতলেই হয়ে যাবে ১১। তাদের অবশ্য পরের চারটি ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে। তবে একটা জিতলেই তারা চলে যেতে পারে শেষ চারে।
বাংলাদেশ যদি তিন ম্যাচ জিতেও ১১ হয়, সেক্ষেত্রে এই তিনটি দলের যে কোনো একটির পয়েন্ট যাতে ১১র কম হয় বা ১১ হলেও রান রেটে পিছিয়ে থাকে সেই প্রার্থনা করতে হবে। বাস্তবতা বলছে, সেটার জন্য ভারতকে পাঁচটি ম্যাচের অন্তত তিনটিতে হারতে হবে। নিউজিল্যান্ডকে চারটি ম্যাচের মধ্যে অন্তত তিনটিতে বড় ব্যবধানে হবে, অস্ট্রেলিয়াকেও তিনটি ম্যাচের সবগুলোতে হারতে হবে। আর ইংল্যান্ডেরও চারটি ম্যাচের মধ্যে অন্তত তিনটিতে হারতে হবে। সব কয়টি সমীকরণই আলাদা আলাদা ভাবে ভীষণ কঠিন। নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার নিজেদের মধ্যে সবকটি ম্যাচ বাকি, এটা একটা ব্যাপার। তবে বাংলাদেশের তাকিয়ে হবে আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার দিকেও। এরা যদি কিছু ম্যাচ জেতে আর শীর্ষ চারের কেউ টানা হারতে তাহলেই কেবল খুলে যেতে পারে সেমির দরজা। তার আগে আবার আলাদা সমীকরণ নিয়ে আসতে পারে বৃষ্টি বা রান রেট। সব মিলে বাংলাদেশের পথ এখন ভীষণ ভীষণ কঠিন।