পেরুকে উড়িয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল
আগের দুই ম্যাচে প্রত্যাশামতো খেলতে না পারায় চাপেই পড়ে গিয়েছিল ব্রাজিল। চাপে পড়ে গিয়েছিলেন ব্রাজিল কোচ তিতেও। কিন্তু পেরুর বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচের আগে আক্রমণে বদল আনলেন তিনি। সেগুলো কাজেও দিল শতভাগ। সাও পাওলোতে পেরুর বিপক্ষে তাই আর দুয়ো শুনতে হয়নি ব্রাজিলকে। সমর্থকেরা প্রাপ্য সম্মানটাই দিয়েছে ঘরের দলকে, তাই কোয়ার্টার ফাইনালে আরও বড় কিছু পুঁজি করে যাচ্ছে ব্রাজিল। পেরুকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে 'এ' গ্রুপের ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপচ্যাম্পিয়ন হয়েছে তিতের দল। গ্রুপ রানার আপ হয়ে সঙ্গী হয়েছে ভেনেজুয়েলা। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের খেলা পরবে বি বা সি গ্রুপ থেকে তৃতীয় হওয়া দলের বিপক্ষে।
ব্রাজিলের হয়ে পেরুর বিপক্ষে নেমেছিলেন রবার্তো ফিরমিনো, গ্যাব্রিয়েল হেসুস ও এভারটন। ফিরমিনো ও এভারটন দুইজনই গোল পেয়েছেন। গোল পেতে পারতেন হেসুসও। কিন্তু ইনজুরি সময়ে তার পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়েছেন পেরু গোলরক্ষক। পুরো ম্যাচে পেরুর পাওয়া ওইটুকুই। বাকি তিন গোল করেছেন কাসেমিরো, উইলিয়ানও দানি আলভেজ।
ম্যাচশেষে তাই হতাশাই ভর করেছে হেসুসের। কিন্তু দলের দারুণ পারফরম্যান্সের পর এসব মনে রাখার কথা নয় ব্রাজিলিয়ানদের। গোলের জন্য ধুঁকতে থাকা ব্রাজিলকে পেরুর বিপক্ষে গোল পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে মাত্র ১২ মিনিট। ফিলিপ কুতিনিয়োর কর্নার থেকে ফিরমিনো হেড করে বল উঠিয়ে দিয়েছিলেন। গোলের সামনে ছিলেন মার্কিনহস, কাসেমিরো দুইজনই। মার্কিনহস হেড করলেন, এরপর গোল নিশ্চিত করতে আরও একবার হেড করলেন কাসেমিরো। ব্রাজিলের হয়ে ৩৯ তম ম্যাচে এসে এরপর কাসেমিরো পেয়ে যান নিজের প্রথম আন্তজার্তিক গোল। ওই শুরুটাই ছন্দ তুলে দিয়েছিল ব্রাজিলের খেলায়। এরপর আর এক মুহুর্তের জন্যও চাপে পড়তে হয়নি তাদের।
ব্রাজিলের আক্রমণে ছন্দ তুলেছেন আসলে ফিরমিনো। প্রথম গোলেও তার অবদান ছিল। ১৯ মিনিটে আরও একবার তিনি নাচিয়ে তুললেন সাও পাওলোর গ্যালারি। এবার আগাগোড়াই ফিরমিনোর নিজের কৃতিত্ব আর পেরু গোলরক্ষক পেদ্রো গালাসের ভুল। নিজের ডিবক্সের ভেতর থেকে লং শট চেষ্টা করেছিলেন এগিয়ে আসা ফিরমিনোর মাথার ওপর দিয়ে, কিন্তু ফিরমিনো লাফিয়ে উঠে সেই বল ব্লক করলেন। ওই ব্লকে বল গিয়ে লাগল বারপোস্টে। রিবাউন্ডে বল আবার ফিরমিনোর কাছেই গেল। এবার নো লুক ফিনিশে গোলরক্ষককে আরেকটু ভুগিয়ে গোল করেন ফিরমিনো। তাতে দুই গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিলও।
প্রথম দুই ম্যাচে ব্রাজিলের সেরা পারফরমার ছিলেন সম্ভবত এভারটন। ২৩ বছর বয়সী গ্রেমিও স্ট্রাইকার দুই ম্যাচেই খেলেছিলেন বদলি হয়ে নেমে। সময় পেয়েছিলেন অল্প। এবার শুরু থেকেই নেমে আরও দুর্দান্ত খেললেন তিনি। ৩২ মিনিটে বলিভিয়ার ম্যাচের স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন। এই মাঠেই ঠিক একই জায়গা থেকেই গোল করেছিলেন সেদিন। এবারও ডানদিকে বল রিসিভ করে কাট করে ডিবক্সের সামনে এসেছিলেন। এরপর নেয়ার পোস্টে বটম কর্নারে বল জড়িয়েছেন নিখুঁত এক শটে। এমন গোলের পর তাকে আবার বসিয়ে রাখার আগে দুইবার ভাবার কথা তিতের।
প্রথমার্ধে পেরুর আক্রমণ নিয়ে চিন্তাই করতে হয়নি ব্রাজিলকে। পাওলো গেরেরো, এজফারসন ফারনারনরাও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেননি। গেরেরো বদলি হওয়ার আগে অবশ্য দেখে গেছেন ব্রাজিলের আরেক গোল। ৫৩ মিনিটে চতুর্থ গোলটি করেছেন ব্রাজিল অধিনায়ক দানি আলভেজ। নিজেই আক্রমণ শুরু করেছিলেন, আর্থারের সঙ্গে ওয়ান টু এর পর ফিরমিনোর পাস ধরে পেরুর ডিফেন্স লাইন ফাঁকি দিয়ে ঢুকে গিয়েছিলেন ডিবক্সের ভেতর। এরপর ডান পায়ের জোরালো ফিনিশে ২০০৭ কোপা আমেরিকার পর প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টে গোল করেছেন আলভেজ। ৯০ মিনিটে পঞ্চম গোলটি করেন বদলি উইলিয়ান। কুতিনিওর বদলি হয়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। এর আগে অ্যালেক্স সান্দ্রো, অ্যালেনদের মাঠে নামিয়ে বাকিদের সুযোগ দেওয়ার কাজটাও করে রেখেছিলেন তিতে।
উইলিয়ান স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছিলেন নেইমারের ইনজুরির পর। শুধুমাত্র সংখ্যা পূরণ করতে যে তিনি স্কোয়াডে নেই সেটা জানিয়ে দিয়েছেন চেলসি উইঙ্গার, ডিবক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক গোল করে। এরপর ইনজুরি সময়ে পেরু গোলরক্ষকই হেসুসকে ফাউল করে পেনাল্টি উপহার দিয়েছিলেন। পরে নিজেই ডানদিকে ঝাঁপিয়ে হেসুসের পেনাল্টি সেভ করে শাপমোচন করেছেন। তবে তাতে লাভ হয়নি তেমন। ভেনেজুয়েলা বলিভিয়াকে হারানোর পর গ্রুপ রানার আপ হয়ে তারাও উঠে গেছে পরের রাউন্ডে। পেরু অবশ্য বাদ যায়নি এখনও। ৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা ভালোভাবেই টিকে আছে তাদের। কিন্তু ব্রাজিলের কাছে ৫ গোলে হারের পর গোলব্যবধানে বড় আকারেই পিছিয়ে গেল তারা।