কিক অফের আগে: প্যারাগুয়ের 'হ্যাটট্রিক জুজু' কাটাবে ব্রাজিল?
কবে কখন
কোপা আমেরিকা কোয়ার্টার ফাইনাল ১: ব্রাজিল-প্যারাগুয়ে
২৮ জুন, সকাল ৬.৩০
পোর্তো আলেগ্রে
প্রথম দুই ম্যাচে শুনতে হয়েছিল সমর্থকদের দুয়ো। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে পেরুকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে শেষ আটে এসেছে ব্রাজিল। কোয়ার্টার ফাইনালে ‘সেলেসাও’দের প্রতিপক্ষ প্যারাগুয়ে, গ্রুপপর্বের গেরো পার হতে পেরে নিজেদের সৌভাগ্যবানই ভাবতে পারে তারা। গ্রুপপর্বে একটি ম্যাচেও জয়ের দেখা না পেয়েও নক আউটে এসেছে প্যারাগুয়ে। স্বাগতিক দল, ফর্মে আছেন ফরোয়ার্ডরা, বিবর্ণ প্রতিপক্ষ। শেষ আটের আগে তাই ফেভারিট ব্রাজিলই, কিন্তু ইতিহাস কথা বলছে প্যারাগুয়ের পক্ষে। ২০১১ এবং ২০১৫-তে এই প্যারাগুয়ের কাছে টাইব্রেকারে হেরেই কোপার শেষ আট থেকে বিদায় নিয়েছিল তারা।
চার বছর বাদে আবারও কোপার কোয়ার্টার ফাইনাল, আবারও প্রতিপক্ষ প্যারাগুয়ে। প্রতিশোধের একটা ব্যাপার তাই হয়তো এসেই যায়। তবে সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে তিতে জানিয়েছেন; প্রতিশোধের চেয়েও নিজেদের ফর্ম ধরে রাখার দিকেই মনযোগী তারা, 'গত কয়েক ম্যাচ ধরেই আমরা আশানুরূপ ফুটবল খেলতে পারছিলাম না। সমর্থকদের দুয়ো দেওয়ার বিষয়টি আমরা বুঝি। সমর্থন জানাতে এসে প্রত্যাশা না মিটলে তারা অসন্তোষ প্রকাশ করতেই পারেন। তবে পেরুর বিপক্ষে আমরা নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়েছি। অনেকদিন পর এতটা পরিপূর্ণ পারফরম্যান্স দিয়েছে ছেলেরা। এখন সময় ফর্ম ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার।'
২০১১ বা ২০১৫-এর কথা অন্তত ব্রাজিলের কেউই মাথায় আনছেন না বলে বিশ্বাস তিতের, 'টাইব্রেকার খুবই অপ্রত্যাশিত একটি ব্যাপার। যে কেউই জিততে পারে। অবশ্যই ঐ দুটি হার আমাদের ভুগিয়েছে বেশ, তবে আমার মনে হয় না কেউ এখনও সেই স্মৃতির প্রতিশোধ নেওয়া থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছে। সবার বরং ইচ্ছা নিজে সমর্থকদের সামনে নিজেদের প্রমাণ করা।' প্রথম দুই ম্যাচেই নিষ্প্রাণ মাঝমাঠ বেশ ভুগিয়েছিল ব্রাজিলকে। তবে পেরুর বিপক্ষে ৪-৩-৩ থেকে সরে এসে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলিয়েছিলেন তিতে। শুরু থেকেই ছিলেন প্রথম দুই ম্যাচে বেঞ্চ থেকে জ্বলে উঠা এভারটন, বাঁ-প্রান্ত নয়; স্ট্রাইকারের ঠিক পেছনে নিজের পছন্দের 'ফ্রি রোল'-এ ছিলেন ফিলিপ কুতিনিয়ো। এভারটন আবারও খুঁজে পেয়েছেন জাল, গোল না করলেও কুতিনিয়ো ছিলেন অসাধারণ। নকআউট পর্বে তাই হয়তো ৪-২-৩-১ ফর্মেশনেই দেখা যেতে পারে ব্রাজিলকে। আক্রমণে একমাত্র গ্যাব্রিয়েল হেসুসের ফর্মই হয়তো কিছুটা দুশ্চিন্তার ছাপ ফেলবে তিতের কপালে। গত ম্যাচে সবার গোল করার মাঝে পেনাল্টি মিস করেছিলেন তিনি।
সেজন্য হয়তো আজ ফিরমিনোকেই দেখা যাবে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে। বাঁ-প্রান্তে খেলবেন এভারটন-নেরেসের একজন, আর ডানপ্রান্তের জন্য থাকছেন রিচার্লিসন বা উইলিয়ান। মাঝমাঠ নিয়েই থাকছে তিতের দুশ্চিন্তা। বহিষ্কারাদেশের কারণে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে থাকছেন না কাসেমিরো। সেক্ষেত্রে 'ডাবল পিভোট'-এ আর্থার মেলোর সাথে হয়তো দেখা যাবে ফার্নান্দিনহোকেই। খুব সম্ভবত রক্ষণ থাকছে অপরিবর্তিত। পরিসংখ্যানের বিচারে ২০১১ বা ২০১৫-এর পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। নিজেদের শেষ ৫ ম্যাচে ১৪ গোল করেছে ব্রাজিল, রাশিয়া বিশ্বকাপের পর শেষ ১৩ ম্যাচ ধরে অপরাজিত তারা। শেষ ৫ ম্যাচেই ক্লিনশিট রেখেছেন থিয়াগো সিলভা-অ্যালিসন বেকাররা। ব্রাজিলের পরিসংখ্যান যতটা ইতিবাচক, প্যারাগুয়ের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ঠিক ততটাই নেতিবাচক।
নিজেদের শেষ ১১ ম্যাচে মাত্র ১বার জিতেছে তারা। এবারের গ্রুপপর্বের ৩ ম্যাচে ২ ড্র এবং ১ হার-এর পরেও দুই সেরা তৃতীয় দলের একটি হয়ে কোয়ার্টারে এসেছে তারা। ১৯৯৫-এর পর কোপায় এত কম পয়েন্ট নিয়ে পরের রাউন্ডে আসেনি কেউই। পেনাল্টিতে জয় বাদ দিলে কোপায় শেষ ২০ ম্যাচে প্যারাগুয়ের জয় মাত্র ১টি। তবে এতকিছুর পরও আশা দেখছেন কোচ এদুয়ার্দো বেরিৎজো, 'সত্যি বলতে গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলো থেকে আরও বেশি প্রাপ্য ছিল আমাদের। কাতারের বিপক্ষে ড্র খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল, আমরা অসাধারণ খেলেছিলাম পুরো ম্যাচ। আর্জেন্টিনার বিপক্ষেও পেনাল্টি মিস না করলে হয়তো পূর্ণ ৩ পয়েন্টই পেতাম আমরা। কোয়ার্টারে ব্রাজিল অবশ্যই ফেভারিট, কিন্তু সাম্প্রতিক ইতিহাস আমাদের পক্ষেই কথা বলে।'
গোছানো আক্রমণের চেয়ে প্রতি-আক্রমণেই বেশি নির্ভরশীল প্যারাগুয়ে। ব্রাজিলের কাছে কিছুটা নতুন হলেও ৪-২-৩-১ ফর্মেশনেই খেলে থাকে তারা। ৩৬ বছর বয়সী স্ট্রাইকার অস্কার কার্দোজো এখনও গোলের জন্য প্যারাগুয়ের মূল ভরসা। তার ঠিক পেছনে 'ফ্রি রোল'-এ আছেন প্যারাগুয়ে ফুটবলের নতুন 'পোস্টার বয়' মিগুয়েল আলমিরন। দুই উইঙ্গার হার্নান পেরেজ এবং সিসিলিও ডমিঙ্গেজের গতির দিকেও সর্তক থাকতে হবে দানি আলভেজ-ফিলিপে লুইসদের। শেষ ১০ ম্যাচে মাত্র ১১ গোল করেছে বেরিৎজোর দল। সেক্ষেত্রে ব্রাজিল একবার লিড নিয়ে ফেললে প্রতি-আক্রমণ ট্যাকটিক্সও হয়তো কাজে দেবে না তাদের। তাই প্রথমে গোল করা বা ম্যাচ অতিরিক্ত সময় কিংবা পেনাল্টিতে নিয়ে যাওয়াই হয়তো হবে প্যারাগুয়ের মূল লক্ষ্য।
দলের খবর
ইনজুরি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না কোনও দলকেই। পূর্ণশক্তির স্কোয়াডই পাচ্ছেন বেরিৎজো।
সম্ভাব্য মূল একাদশ
ব্রাজিল (৪-২-৩-১): অ্যালিসন; আলভেজ, সিলভা, মার্কিনহোস, লুইস; ফার্নান্দিনহো, আর্থার; রিচার্লিসন, কুতিনিয়ো, এভারটন; ফিরমিনো
প্যারাগুয়ে (৪-২-৩-১): ফার্নান্দেজ; পিরিস, গোমেজ, আলোনসো, দুয়ার্তে; সানচেজ, রোহাস; পেরেজ, আলমিরন, ডমিঙ্গেজ; কার্দোজো
হেড টু হেড
দুই দলের শেষ ৬ দেখায় অপরাজিত ব্রাজিল (২ জয়, ৪ ড্র)।
ব্রাজিলের মাটিতে শেষ দেখায় 'সেলেসাও'দের কাছে ৩-০ গোলে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ হেরেছিল প্যারাগুয়ে।
নিজেদের মাটিতে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে খেলা ৩৮ ম্যাচে মাত্র ২বার হেরেছে ব্রাজিল।
প্যাভিলিয়ন প্রেডিকশন: ব্রাজিল ২-০ প্যারাগুয়ে