'নর্থ'-এ গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ডুবল শ্রীলঙ্কা
৩৫তম ম্যাচ, চেস্টার-লি-স্ট্রিট
শ্রীলঙ্কা ২০৩ অল-আউট, ৪৯.৩ ওভার
দক্ষিণ আফ্রিকা ২০৬/১, ৩৭.২ ওভার
দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে জয়ী
বিশ্বকাপ গেল ইংল্যান্ডের উত্তরে, ডারহামে। গেম অফ থ্রোনসের ‘নর্থ’ যেমন বাকিদের জন্য প্রতিকূল, শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ে পড়লো যেন তেমনই এক পরিস্থিতির মুখে। আর দক্ষিণ আফ্রিকানরা যেন হয়ে গেলেন ‘নর্দানার্স’, যারা অভ্যস্থ এমন কন্ডিশনে। যেখানে শ্রীলঙ্কা হাপিত্যেশ করলো রান করতে, সেখানেই দক্ষিণ আফ্রিকা ২০৪ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে গেল ৭৬ বল ও ৯ উইকেট বাকি রেখেই।
আর দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এ পারফরম্যান্স হয়তো কিছুটা আক্ষেপেরও। পেসারদের কাছে হয়তো তারা এই পারফরম্যান্সটা চেয়েছিল আরেকটু আগে। হয়তো প্রিটোরিয়াসকে আরেকটু আগে খেলাতে পারত তারা। আমলা-ডু প্লেসির ব্যাট থেকে এমন দাপুটে ইনিংস আরেকটু আগে দেখা গেলে হয়তো গল্পটা ভিন্ন হতে পারত। আপাতত সেটা হবে না। এমন দাপুটে পারফম্যান্সের পরও বিশ্বকাপে আর ফেরা হবে না দক্ষিণ আফ্রিকার, এটি থাকবে তাদের জন্য সান্ত্বনা হয়েই।
চেস্টার-লি-স্ট্রিটের উইকেট অবশ্য এদিন দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ধীরে ধীরে সেটা ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিনতর থেকে কম কঠিন হয়েছে, আমলা-ডু প্লেসিরাও রেখেছেন ধৈর্য্য। টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসাররা। পরে কৌশলি রানতাড়ায় আমলা-ডু প্লেসিরা ছিলেন ধীর, স্থির। এ জয় দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা পেল বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় জয়। হারলেও অবশ্য বিদায় নিশ্চিত হয়নি শ্রীলঙ্কার, ২ ম্যাচ বাকি থাকতে তাদের শেষ চারের সম্ভাবনা আছে এখনও।
এ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনার জন্য যেরকম শুরু প্রয়োজন ছিল বোলিংয়ে, ঠিক সেটা অবশ্য পায়নি তারা। প্রথম ৪ ওভারেই হয়েছিল ৬ বাউন্ডারিতে ২৮ রান। যেন দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা হলো অন্য কোনও উইকেটে। অবশ্য মালিঙ্গার সেই ইয়র্কারের ক্ষেত্রে উইকেট কোনও পার্থক্য গড়ে না, ব্যাট-প্যাডের মাঝে ফাঁক রেখে সেটার জবাব দেওয়াটা নিজের জন্য আরও কঠিন করে ফেললেন ডি কক। ৫ম ওভারে শ্রীলঙ্কা ব্রেকথ্রু পেল। এরপর আর নয়।
ইনিংসের প্রথম অর্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার রানরেট মোটামুটি ছিল শ্রীলঙ্কার মতোই, তবে উইকেটে এগিয়ে ছিল তারা। আমলা-ডু প্লেসি ইনিংসের পেস বজায় রেখেছেন, শ্রীলঙ্কা খুঁজে ফিরেছে ব্রেকথ্রু। ফিফটির ক্ষেত্রে অবশ্য আমলার ৫৬ বলের চেয়ে বেশি সময় নিয়েছেন ডু প্লেসি, তিনি খেলেছেন ৭০ বল। এ বিশ্বকাপে ডু প্লেসির এটি তৃতীয় ফিফটি, আমলার দ্বিতীয়। দুজনই সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন, তবে সেটা পাওয়ার মতো রান জমা ছিল না শ্রীলঙ্কার কার্ডে। ডু প্লেসি অপরাজিত ছিলেন ১০৩ বলে ৯৬ রানে, আমলা ১০৫ বলে করেছেন ৮০।
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করুনারত্নে ব্যবহার করেছেন ৮ জন বোলারকেই, তবে উইকেটের দেখা পাননি আর তারা। জিভান মেন্ডিসের বলে আমলা অবশ্যই প্রায় আউট হয়েছিলেন, এমনকি হাঁটাও ধরেছিলেন। আম্পায়ার দিয়েছিলেন এলবিডব্লিউ, ডু প্লেসি এরপর তাকে দিয়ে নিয়েছেন রিভিউ। তবে বল-ট্র্যাকিং দেখার আগেই হাঁটা দিয়েছিলেন আমলা নিজেকে আউট ভেবে। বল অবশ্য শেষ পর্যন্ত পড়েছে লেগসাইডের বাইরে, আমলাও ফিরে এসেছেন।
এর আগে ম্যাচের প্রথম বলেই উইকেট হারানোর পর শ্রীলঙ্কা সেই যে গিয়েছিল ব্যাকফুটে, এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি তারা। শ্রীলঙ্কার ৪ থেকে ৭ নম্বর ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ছিল যথাক্রমে ৪৫.০৯, ৩৭.৯৩, ৫৮.৫৩, ৩৯.১৩। তারা চাপে পড়েছেন, সে চাপ আলগা করতে গিয়ে শট খেলেছেন, সে শটে হয়েছেন আউট। ইমরান তাহিরকে উইকেট না দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের যেন। সেটায় সফল তারা, তবে তাহির ছাড়া উইকেট পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সব বোলারই, এমনকি ডুমিনিও।
সুরটা ধরে দিয়েছিলেন কাগিসো রাবাদা। তার শর্ট অফ আ লেংথ বলটা যেন দেখতেই পাননি দিমুথ করুনারত্নে, শেষ মুহুর্তে ব্যাট নামিয়ে এনে এজড হয়ে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন। রিভারসাইডের কঠিন উইকেটে আভিশকা ফার্নান্ডো ও কুসাল পেরেরার প্রতি-আক্রমণ চললো এরপর কিছুক্ষণ, প্রায় প্রতি ওভারেই আসছিল বাউন্ডারি, রান উঠছিল ছয়ের ওপর। তবে এমন উইকেটে ব্যাটসম্যানের ভুলের সুযোগ কম, আর অতি-আক্রমণ ভুলের সম্ভাবনা বাড়িয়েই দেয় শুধু। ফার্নান্ডোর হলো সেটাই। দশম ওভারে প্রিটোরিয়াসকে দুই চারের পর তুলে মারতে গেলেন মিড-অনের দিকে, ক্যাচ গেল মিড-অফে ডু প্লেসির হাতে। তাদের ৬৭ রানের জুটিই হয়ে আছে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের একমাত্র সুখস্মৃতি।
পেরেরা প্রিটোরিয়াসের পরের ওভারে ব্যাক অফ আ লেংথ বলটায় দ্বিধায় ভুগছিলেন যেন শট খেলা ও ডিফেন্ড করার ক্ষেত্রে, শেষ মুহুর্তে ব্যাট চালিয়ে বলকে ডেকে আনলেন স্টাম্পে। ফার্নান্ডো ও পেরেরা-- দুজনই করলেন ৩০ রান করে, মেরেছেন ৪টি করে চার।
তবে তাদের দ্রুত ফেরার পর থেকেই চাপ বাড়ছিল দুই নতুন ব্যাটসম্যান কুসাল মেন্ডিস-অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ওপর। তিনেরও নিচে ছিল রানরেট। মরিসকে একটা বাউন্ডারি মেরে সে চাপ আলগা করার ইংগিত দিয়েছিলেন ম্যাথিউস, তবে সে ওভারেই ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বলকে স্টাম্পে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। ১১ রান পর গেলেন মেন্ডিসও, প্রিটোরিয়াসের লেংথ বল টেনে মারতে গিয়ে কাভার পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে।
মেন্ডিস-ধনঞ্জয়ার জুটি তুলেছে ৯ ওভারে ২৪ রান। ডুমিনি এসেছিলেন, তাকে আক্রমণ করতে গিয়ে রিভার্স সুইপের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে ডি সিলভার, প্রথমে বলেই তিনি হয়েছেন বোল্ড। জিভান মেন্ডিস যেন হাবুডুবু খাচ্ছিলেন, প্রথম ৩৮ বলে তার রান ছিল ৫। এরপর ৭ বলে করেছেন ১৩, তবে মরিসের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
পেরেরা একটু স্বস্তি দিতে চেয়েছিলেন ২৫ বলে ২১ রান করে, তবে ফেহলুকওয়ায়োর বলে রাবাদার ডাইভিং ক্যাচে পরিণত হয়ে বেশি কিছু করতে পারেননি। ১৭ রান করা উদানা ও ৪ রান করা মালিঙ্গাকে এরপর যথাক্রমে ফিরিয়েছেন রাবাদা ও মরিস। রাবাদা নিয়েছেন ২টি, মরিস ৩টি। তবে প্রিটোরিয়াস ছিলেন ইনিংসে সেরা বোলার, ১০ ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন ৩টি।