টাইব্রেকারে চিলির ঝাঁঝে হার মানলো কলম্বিয়া
২০১৫-তে লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তার পেনাল্টিতেই প্রথমবারের মত কোপা আমেরিকার শিরোপা ঘরে তুলেছিল চিলি। ক্লাব ফুটবলে নিজেকে হারিয়ে খোঁজা অ্যালেক্সিস সানচেজ চিলির জার্সি গায়ে এবারের কোপাতে যেন ফিরে পেলেন নিজেকে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে গিয়েছিল চিলি-কলম্বিয়ার কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ। চার বছর পর আবারও সানচেজের সামনে সুযোগ এসেছিল পেনাল্টিতে গোল করে নায়ক বনে যাওয়ার। সুযোগটা এবারও কাজে লাগিয়ে চিলিয়ানদের উল্লাসে ভাসালেন তিনি। 'স্কোর টু উইন' অবস্থায় সানচেজের টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে ৫-৪ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিতে চলে গেল চিলি, বাঁচিয়ে রাখল 'হ্যাটট্রিক' কোপা শিরোপার স্বপ্ন। ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কাছে টাইব্রেকারে হারের পর টানা ৪ টাইব্রেকার জিতল চিলি। কোপার নক আউট পর্বে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টানা জয়ের রেকর্ডটা ৪ ম্যাচে নিয়ে গেল চিলি। সেমিতে তাদের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে বা পেরু।
টাইব্রেকারে দারুণ সব পেনাল্টিতে প্রথম ৪ শটেই গোল করেছিল দু'দলই। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আগের দুই ফাইনালে টাইব্রেকারে জয়ের কারণে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ভিদালরা। পেনাল্টি নেওয়ার আগে বা পরে তাদের হাস্যোজ্জ্বল অভিব্যক্তি হয়তো তাই প্রমাণ করে। চিলির হয়ে জাল খুঁজে পেয়েছিলেন ভিদাল, ভার্গাস, পুলগার এবং আরাঙ্গিজ। কলম্বিয়ার হয়ে গোল করেছিলেন হামেস, কার্দোনা, কুয়াদ্রাদো, মিনা। কিন্তু পঞ্চম শট বাইরে মেরে বল চিলির কোর্টে ঠেলে দেন কলম্বিয়া লেফটব্যাক উইলিয়াম তেসিয়ো। 'ম্যাচ পয়েন্ট' পেয়েই আবারও টাইব্রেকারে চিলির নায়ক বনে যান সানচেজ।
অবশ্য টাইব্রেকারের আগেই জয় পেতে পারত চিলি। কিন্তু ‘দুই অর্ধে ভিএআর’-এর খড়গে বাতিল হয়েছে তাদের দুই গোল। প্রথমার্ধের ২০ মিনিটে কলম্বিয়া রক্ষণের ভুল বুঝাবুঝিতে বল জালে পাঠিয়েছিলেন চার্লস আরাঙ্গিজ। মূল রেফারি নেস্তর পেতানা ভিডিও রেফারি শরণাপন্ন হন, রিপ্লেতে দেখা যায়, গোলের বিল্ড আপে অফসাইডে ছিলেন সানচেজ, যার পাস থেকে আরাঙ্গিজের জন্য ক্রস করেছিলেন লেফটব্যাক জাঁ বোসেজো। প্রথমার্ধে দুর্দান্ত খেলা চিলিকে হতাশ করে গোল বাতিলের সিদ্ধান্ত দেন পিতানা।
দ্বিতীয়ার্ধের ৭২ মিনিটে আবারও কলম্বিয়ার জালে বল পাঠাল চিলি, আবারও ডাক পড়ল ভিডিও রেফারির। সানচেজের পাস থেকে কলম্বিয়া ডিবক্সে বল মারিপানের গায়ে লেগে আসে ভিদালের দিকে। বাঁ-পায়ের জোরাল শটে ওসপিনাকে পরাস্ত করেন তিনি। প্রথমার্ধের মত আবারও ভিডিও রেফারির শরণাপন্ন হন পেতানা। রিপ্লেতে দেখা যায়, সানচেজের পাস থেকে বল লেগেছিল মারিপানের হাতে। ফিফার নতুন নিয়ম অনুযায়ী ডিবক্সের ভেতর বল হাতে লাগলেই গোল বাতিল বা পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা রেফারির, ইচ্ছাকৃত হোক আর অনিচ্ছাকৃতই হোক। নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাই বাতিল হয় গোল, আবারও হতাশ হন ভিদাল এবং চিলি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই গোল বাতিলের হতাশা উবে গেছে টাইব্রেকারে পাওয়া জয়ে।
সাও পাওলোর করিন্থিয়াস অ্যারেনাতে ম্যাচ শুরুর আগেই বেঁধেছিল বাগড়া। চিলির বাস দেরি করায় ম্যাচ শুরু হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট পর। অপ্রত্যাশিত এই বিলম্বের কারণে পুরো ম্যাচই কলম্বিয়া সমর্থকদের দুয়ো শুনতে হয়েছিল ভিদাল-সানচেজদের। কিন্তু প্রতিপক্ষের দুয়োতে এতটুকু খেই হারায়নি চিলি। পুরো প্রথমার্ধে কলম্বিয়াকে চেপে ধরেছিল তারা। ম্যাচের ১৩ মিনিটেই লিড নিতে পারত চিলি। ডানপ্রান্ত থেকে মরিসিও ইসলার ক্রসে চার্লস আরাঙ্গিজের হেড দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনা।
আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে ঠাসা প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা ছিল একেবারেই ম্যাড়ম্যাড়ে। গোল করার চেয়ে গোল না খাওয়ার দিকেই যেন মনযোগ বেশি ছিল দু'দলেরই। পুরো ম্যাচে লক্ষ্যে মাত্র একবার শট নিয়েছিল কলম্বিয়া। গোল করার চেয়ে খেলা টাইব্রেকারে নেওয়ার দিকেই হয়তো ঝোঁক বেশি ছিল তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হল হিতে বিপরীত। ১৫ বছর পর কোপার শেষ চারে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল তাদের। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কলম্বিয়ার কিংবদন্তী গোলরক্ষক রেনে হিগুইতা বলেছিলেন, তার দল কোপা না জিতলে নিজের বাহারি চুলই কেটে ফেলবেন। নিজের কথা কি রাখবেন ‘দ্য স্করপিয়ন ম্যান’?