• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    আফগানদের ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত পকেটে ভরে নিল পাকিস্তানই

    আফগানদের ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত পকেটে ভরে নিল পাকিস্তানই    

    আফগানিস্তান ৫০ ওভারে ২২৭/৯ 

    পাকিস্তান ৪৯.৪ ওভারে ২৩০/৭ 

    ফলঃ পাকিস্তান ৩ উইকেটে জয়ী


     

    কাকে দোষ দেবে আফগানিস্তান? অন্তত দুইটি সহজ দুইটি ক্যাচ ধরতে পারেনি, নইলে ম্যাচ থাকত নিজেদের হাতে। আবার যে ইমাদ ওয়াসিম শেষ পর্যন্ত থেকে দলকে জিতিয়ে দিয়েছেন, শুরুতে তো তার পরিষ্কার একটা এলবিডব্লু দেননি আম্পায়ার। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা হেরেই গেছে, এক বল বাকি থাকতে তিন উইকেটের রুদ্ধশ্বাস একটা জয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে পাকিস্তান। সেই সঙ্গে আরও উজ্জ্বল হয়েছে তাদের শেষ চারের আশা।

    সেজন্য অধিনায়ক গুলবদিন বেশির ভাগ দোষ নিজের ঘাড়েই নিতে পারেন। ৪ উইকেট নিয়ে যখন পাকিস্তানের ৫ ওভারে ৪৬ রান দরকার, গুলবদিনের ওই ওভার থেকেই ইমাদ নিলেন ১৮ রান। এরপরও ম্যাচে ফেরার আশা জাগিয়েছিল আফগানরা, শাদাব খানকে রান আউট করে ফিরিয়ে এনেছিল আশা। কিন্তু ২৭ রানে ইমাদের ক্যাচটা ধরতে পারেননি আসগর, আরও একবার ম্যাচ হারাল আফগানিস্তান।

    শেষ দুই ওভারে যখন ১৬ রান দরকার, রশিদ খানের এক ওভার বাকি। ইমাদের সঙ্গে ক্রিজে টেল এন্ডার ওয়াহাব। কিন্তু রশিদকে ছয় মেরে সেই ওভারেই ম্যাচ অনেকটা নিজেদের করে নিলেন ওয়াহাব। আর শেষ ওভারে গুলবদিন আরেকটি ওভার থ্রো দিয়ে কাজটা আরও সহজ করে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে।

    পাকিস্তানের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। মুজিব উর রেহমান স্পিন করেন, তবে নতুন বলে যে অনেক পেসারের চেয়েও কার্যকর সেটা দেখালেন আরেকবার। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ফাখার জামানকে এলবিডব্লু করলেন, কোনো রান না করে আউট ফাখার।

    ইমাম উল হক ও বাবর আজম অবশ্য মনে করাচ্ছিলেন না, পিচে খুব একটা জুজু আছে। দুজন প্রথম ১০ ওভারে যোগ করেছিলেন ৪৯ রান, লক্ষ্যটা একটু একটু ছোট হচ্ছিল পাকিস্তানের। ব্রেক থ্রু দিলেন মোহাম্মদ নবী, তার বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন।

    একটু পরেই সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেল পাকিস্তান। বাবর আজমকে দেখে মনে হচ্ছিল না শিগগির আউট হবেন। কিন্তু নবির সোজা বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে গেলেন ৪৫ রান করে।

    হাফিজ আর সোহেল মিলে অবশ্য হাল ধরলেন কিছুক্ষণ,  তখনও সিদুরে মেঘ দেখতে পাচ্ছিল না পাকিস্তান। ভাগ্যটাও পক্ষে ছিল তাদের, ১৭ রানে গুলবদিন নাইবের বলে বেঁচে গেলেন হাসির সোহেল। লেগ স্টাম্পের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে হালকা খোঁচা মেরেছিলেন, কিন্তু আম্পায়ার নাইজেল লং আউট দেননি। রিভিউ শেষ হয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তানের, নিতেও পারেনি তাই। আগে রিভিউ শেষ হয়ে যাওয়ার বড় মূল্যই দিতে হয়েছে তাদের।

    এর মধ্যে হাফিজ ও হারিসের ৪০ রান হয়ে গেছে। মুজিব বোলিংয়ে এলেন, সঙ্গে সঙ্গে দিলেন ব্রেক থ্রু। অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা কাট করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন পয়েন্টে। ১৯ রানে ফিরলেন হাফিজ, বড় একটা ধাক্কা খেল পাকিস্তান।

    কিন্তু এরপরও বাকি ছিল অনেক কিছু। রশীদ আজ সুবিধা করতে পারছিলেন না, কিন্তু দিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু। হাসিরকে এলবিডব্লু করলেন ২৭ রানে, ১৪২ রানে পঞ্চম উইকেট হারাল পাকিস্তান।

    ম্যাচের পেন্ডুলাম এদিক থেকে ওদিকে দুলতে শুরু করেছে তখন। এরপর আরও সুযোগ পেয়েছে আফগানিস্তান। ২ রানে জীবন পেলেন সরফরাজ, শেনোয়ারিকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি ধরতে পারেনননি শেনোয়ারি। ১ রানে ইমাদ ওয়াসিম আবারও এলবিডব্লু ছিলেন, কিন্তু রশিদ খানের আবেদনে সাড়া দেননি পল উইলসন। ম্যাচটা তখন নিজেদের দোষেই হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে আফগানদের। তখনও ৮৪ রান দরকার পাকিস্তানের, হাতে আছে ৫ উইকেট।  

    তবে নাটকের তখনও বাকি ছিল অনেক কিছু। সরফরাজ আহমেদ ছিলেন ভরসা । কিন্তু ৩৯তম ওভারে গিয়ে রশিদ খানের ওভারেই সর্বনাশ ডেকে আনলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। দুই রান নিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তার আগেই নজিবুল্লাহর দারুণ থ্রো ধরে স্টাম্প ভেঙে দিলেন স্টাম্প। ১৫৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারাল পাকিস্তান। এরপর বাকি গল্পটা ইমাদের, যেটা জেনে গেছেন এর মধ্যেই।

    তার আগে আফগানদের ব্যাটিং শুরুতে দুই ওপেনার রহমত শাহ ও গুলবদিন নাইব ২৮ বলে তুলে ফেলেছিলেন ২৭ রান। এরপরেই শাহীন শাহ আফ্রিদির এক ওভারে এলোমেলো সব কিছু।

    অথচ ছোট আফ্রিদির ওভারটা শুরু হয়েছিল ভুলে যাওয়ার মতো। প্রথম তিন বলে দুইটি চার হলো, নাইব নিলেন ১০ রান। চতুর্থ বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে, ব্যাট চালালেন নাইব। সরফরাজ-শাহীন শাহ উদযাপন শুরুই করে দিয়েছিলেন, কিন্তু সাড়া দিলেন না আম্পায়ার নাইজেল লং। সরফরাজ একটু দোনোমোনো করেই রিভিউ নিলেন, তাতে ধরা পড়ল এজ। নাইব ফিরলেন ১৫ রান করে।

    শাহীন শাহ আফ্রিদির পরের বলটা ছিল লেগ স্টাম্পের ওপর, কিন্তু ফ্লিকটা হলো না শহিদির। প্রথম বলেই উঠল ক্যাচ, ইমাদ ওয়াসিম সেটি ধরলেন। হ্যাটট্রিকের সুযোগ শাহীনের, যদিও তা কাজে লাগাতে পারলেন না।

    রহমত শাহ অবশ্য বেশ ভালো খেলছিলেন। আমিরের এক ওভারে দুর্দান্ত দুটি চার মারলেন, একটি স্ট্রেট ড্রাইভ ছিল সম্ভবত দিনের সেরা শট। রানও তুলছিলেন দ্রুতই, ইমাদ ওয়াসিমের বলে সুইপ করে দারুণ একটা চারও মারলেন। কিন্তু পরের বলে লিডিং এজ হয়ে ক্যাচ উঠে গেল, ফিরলেন ৪৩ বলে ৩৫ রান করে।

    আসগর আফগান এসেই খেলতে শুরু করলেন ফিফথ গিয়ারে। দুই স্পিনার ইমাদ ও শাদাবের ওপর চড়াও হলেন, দুজনের বলে দুইটি ছয়ও মারলেন। দুইশর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে চলে গেলেন ত্রিশের ঘরে। কিন্তু অন্য পাশে ইকরাম আলী খিল ছিলেন একেবারেই স্লথ, স্ট্রাইক রেট ছিল পঞ্চাশেরও নিচে।

    আগের ছয় ওভারে রান উঠেছিল ১৯, সেটাই বোধ হয় চাপ হয়েছিল আসগরের জন্য। শাদাবকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়েই হলো সর্বনাশ, লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে গেলেন। ৩৫ বলে ৪২ রানে ইনিংস শেষ হয়ে গেল তার। পরের ওভার চাপ মুক্ত হতে গিয়ে ছয় মারতে গিয়ে আউট ইকরাম, ১২৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলল আফগানিস্তান।

    তখনও নবী আর নজিবুল্লাহ ছিলেন, অন্তত ব্যাট করতে পারার লোকের অভাব ছিল না। দুজন মিলে ৪২ রান যোগ করলেন, ২৫০ তখন আফগানদের জন্য সম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু পুল করতে গিয়ে ১৬ রানে ক্যাচ দিলেন নবী। নজিবুল্লাহ অবশ্য দারুণ খেলছিলেন, কিন্তু আফ্রিদির বলে শেষ পর্যন্ত আউট হয়ে গেলেন ৪২ রানে।

    রশিদ খানও কিছু করতে পারলেন না, আফ্রিদির চতুর্থ শিকার হওয়ার আগে আউট হলেন ৮ রানে। শেষ পর্যন্ত ২২৭ রানেই থেমেছে আফগানিস্তান, শেষ ১০ ওভারে করতে পেরেছে মাত্র ৪৩ রান। সেটা শেষে আর যথেষ্ট হয়নি।