টাইব্রেকারে উরুগুয়েকে বিদায় করে সেমিতে পেরু
প্রতিপক্ষের জালে একদল বল পাঠিয়েছে তিনবার, অন্যদল পুরো ম্যাচে গোলেই শট নিতে পারেনি। অ্যারেনা ফন্তে নোভাতে উরুগুয়ে-পেরু ম্যাচের পরিসংখ্যান এমনটাই। কিন্তু তারপরও নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে স্কোরলাইন গোলশূন্য, কারণ লুইস সুয়ারেজদের তিনটি গোলই বাতিল হয়ে গেছে ‘ভিএআর’-এ। ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। পুরো ম্যাচে নিষ্প্রাণ পেরু জ্বলে উঠল তখনই, নায়ক বনে গেলেন গোলরক্ষক পেদ্রো গালিসি। ২০১১-এর কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়নদের টাইব্রেকারে ৫-৪ ব্যবধানে বিদায় করে শেষ চারে চলে গেল তারা। সেমিতে পেরুর প্রতিপক্ষ চিলি।
পুরো ম্যাচে পেরুর বিপক্ষে উরুগুয়ে গোল করতে না পারায় সবচেয়ে বেশি আক্ষেপটা হয়তো সুয়ারেজেরই। সতীর্থদের একাধিক গোলের সুযোগ বানিয়ে দিয়েছিলেন; কাভানিরা হয় বাইরে মেরেছেন, নাহলে গোল বাতিল হয়েছে ‘ভিএআর’-এ। নিজেও বল পাঠিয়েছিলেন পেরুর জালে, কিন্তু আবারও অফসাইডের কারণে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাকে। ম্যাচের সেরা ফুটবলার সেই সুয়ারেজই মিস করে বসলেন প্রথম পেনাল্টি, বার্সেলোনা স্ট্রাইকারকে ফিরিয়ে দিলেন গালিসি। পুরো ম্যাচে উরুগুয়ের ‘হিরো’ সুয়ারেজ মুহূর্তেই বনে গেলেন ‘জিরো’। উরুগুয়ের পরের চার শটে অবশ্য ঠিকই গোল করেছেন কাভানি, স্তুয়ানি, বেন্টাঙ্কুর এবং তোরেইরা। কিন্তু টাইব্রেকারে পেরু ছিল দুর্দান্ত। গুরেরো, রুইদিয়াজ, ইয়োতুন, আদভিঙ্কুলাদের কাউকেই ফেরাতে পারেননি উরুগুয়ে গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরা। শেষ পর্যন্ত ‘স্কোর টু উইন’ পেনাল্টিতে পেরুর সেমিফাইনাল টিকেট নিশ্চিত করেন ফ্লোরেস।
টাইব্রেকারের মত পুরো ম্যাচেও ভাগ্য দারুণ সহায় হয়েছিল পেরুর। ‘সি’ গ্রুপে চিলিকে হারিয়ে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ আটে এসেছিল উরুগুয়ে। পেরুর পথ অবশ্য মসৃণ ছিল না এতটা, সেরা দুই তৃতীয় দলের একটি হয়ে পরের রাউন্ডে আসতে পেরে নিজেদের সৌভাগ্যবানই ভাবতে পারে তারা। গ্রুপপর্বে ফলাফলের মত মাঠের পারফরম্যান্সেই বোঝা গেছে দু’দলের আকাশ-পাতাল ব্যবধান। শুরু থেকেই পেরুকে চেপে ধরে উরুগুয়ে। ২৫ মিনিটে সুয়ারেজের শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন পেরু গোলরক্ষক গালিসি, ফিরতি বলে গোলের মাত্র ছয় গজ থেকেও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি কাভানি।
৩০ মিনিটে অবশ্য পেরুর জালে ঠিকই বল পাঠিয়েছিল উরুগুয়ে। নান্দেজের ক্রস থেকে গালিসিকে পরাস্ত করেছিলেন ডি আরাস্কায়েতা। কিন্তু নান্দেজ অফসাইডে থাকায় বাতিল হয় গোল। প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও গোলের একাধিক সুযোগ পেয়েছিল উরুগুয়ে, কিন্তু নিজেদের ভুলে এবং ‘ভিএআর’-এর খড়গে লিড নেওয়া হয়নি তাদের। ৫৮ মিনিটে সুয়ারেজের পাসে গোলের সামনে থেকেও শট বাইরে মেরেছেন ডিফেন্ডার ডিয়েগো গোডিন। মিনিট দুয়েক পর আবারও পেরুর জালে বল পাঠাল উরুগুয়ে, সুয়ারেজের পাস থেকে গোল করলেন কাভানি।
কিন্তু আবারও অফসাইডের কারণে বাতিল হল গোল। ৭২ মিনিটে যেন আক্ষেপের ষোলকলা পূরণ হল সুয়ারেজের, ‘থার্ড টাইম লাকি’ হওয়া হল না উরুগুয়ের। মার্টিন কাসেরেসের ক্রসে পায়ের আলতো টোকায় বল জালে পাঠালেন সুয়ারেজ, উদযাপনও শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আবারও হলুদ পতাকা উঁচিয়ে অফসাইডের ঘোষণা, আবারও হতাশ উরুগুয়ে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারের হতাশায় শেষ আট থেকেই বিদায় নিতে হল কাভানি-সুয়ারেজদের।